বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
গ্যাসের দাম বাড়ালে জনগণকে নিয়ে প্রতিহত করার কথা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি আমরা কখনও মেনে নেব না। এদেশের মানুষও তা মেনে নেবে না। তারপরও গ্যাসের দাম বাড়ালে জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিহত করা হবে। বিএনপি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে। গতকাল (রোববার) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বলেছি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা অযৌক্তিক। এর মাধ্যমে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের নাভিশ্বাস উঠবে। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। আবারও বলছি, এসব কিছু উপেক্ষা করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হলে বিএনপি সাধ্যমতো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দেশে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে এখন একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোকে সরকার চরমভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। এখানে মানুষের নিরাপত্তা নেই। বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের রিপোর্টের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন নয়; বিবিসি, আল জাজিরা, গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিশ্বের বড় বড় পত্রিকাগুলো বলেছে যে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। ভারতের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিষয়টি লেখা হয়েছে। বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি, এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই নির্বাচনে জনগণের যে ইচ্ছা ও মতামতের প্রতিফলন হয়নি এবং ভোটই দিতে পারেনি- তার বিভিন্ন চিত্র তারা তুলে ধরেছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোকে সরকার চরমভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে বলে তারা অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারছে না। এত প্রতিক‚লতার পরও তারা অনেকেই অনেক কিছু প্রকাশ করছে। এ জন্য তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা। মার্কিন মানবাধিকার বিভাগ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই প্রতিবেদনে সঠিক চিত্রটা বেরিয়ে এসছে। বিএনপির এই নেতা বলেন, এদেশে যে নির্বাচন হয়নি- এটা তো আমরা বাংলাদেশের মানুষ জানি। বাংলাদেশের মিডিয়ার উপরে একটা প্রচন্ড সেন্সরশিপ আছে। তাদেরকে আটকিয়ে রেখেছে বলে আমাদের মিডিয়া সেভাবে বলতে পারে না। তারপরেও বলে, তারপরেও যতটুকু সম্ভব তারা বলছে। আমরা মিডিয়ার প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল, আমরা ধন্যবাদ জানাই এতো বিরূপ পরিবেশের মধ্যে তারা তাদের কাজগুলো করে যাচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা ভুলতে পারি না, ২৫ মার্চ কালো রাতে হানাদার বাহিনী আক্রমণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার ও স্বাধিকার নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণ ২৬ মার্চের ঘটনার মধ্য দিয়ে সেই চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের আজকে সেই স্বাধীনতা দিবস যখন উদযাপন করতে চলেছি, তখন মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, যার স্বামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, তাঁকে আজ অন্ধকার কারাগারে কারাভোগ করতে হচ্ছে। আজ যখন স্বাধীনতা দিবস পালন করতে যাব, তখন হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। লক্ষাধিক গায়েবি মামলায় ২৬ লাখ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এই অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা দিবসটি পালন করছি। এরআগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা:
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ৭ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ২৫ মার্চ বিএনপির উদ্যোগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অথবা মহানগর নাট্যমঞ্চে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ২৬ মার্চ সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ওই দিন স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, ওলামা দলের উদ্যোগে দোয়া ও ফাতেহা পাঠ, ২৭ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে বিএনপির উদ্যোগে র্যালি। এ ছাড়া ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো এবং সারা দেশে বিএনপি তাদের সুবিধা অনুযায়ী কর্মসূচি গ্রহণ করবে। মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ এবং দলের পক্ষ থেকে পোস্টার ছাপানো হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।