বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি (সুপ্রিম কোর্ট বার) নির্বাচনে অধিকাংশ পদে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। এবারের (২০১৯-২০) নির্বাচনে কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতিসহ ৬টি পদে আওয়ামী লীগ ও সম্পাদকসহ ৮টি পদে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা বিজয়ী হয়েছেন। টানা অর্ধ যুগ ধরে সুপ্রিম কোর্ট বারের নেতৃত্বে বিএনপি আইনজীবীদের হাতেই। গত বছর দুটি শীর্ষ পদসহ ১০টি পদে বিজয়ী হয়েছিল বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিরা গতবারের চেয়ে এবার শীর্ষ একটি পদসহ আরো দুটি পদে বেশি জয় পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা) ও বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেলে নির্বাচনে অংশ নেন।
নির্বাচনে বিজয়ী সভাপতি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা এ এম আমিন উদ্দিন ও তার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনাকারী প্রধান আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এর আগে তিনি ১ বার সভাপতি হয়েছিলেন। সম্পাদক পদে বিজয়ী মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি‘র যুগ্ম মহাসচিব। নোয়াখালীর চাটখিল আসনের বিএনপির সাবেক (এমপি)। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিবের দায়িত্বও পালন করছেন। এর আগে টানা ৬ বারের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রাথী আবদুন নূর দুলাল বাংলাদেশ আইন সমিতির সাবেক সম্পাদক ছিলেন। তিনি একজন ভদ্র মানুষ; আর মাহবুব উদ্দিন খোকন একজন সদালাপি ব্যক্তি হিসেবে আদালত অঙ্গণে পরিচিত। তবে সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালে নির্বাচনে সভাপতি ও সম্পাদকসহ ১০ পদে জিতে সমিতির নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছিলেন বিএনপি আইনজীবীরা। এর আগের নির্বাচনে সভাপতি, সম্পাদকসহ ৮টি পদে জিতে নেন বিএনপি। ২০১৬ সালের সম্পাদকসহ ৬টি পদে বিএনপিরা বিজয়ী হয়। ২০১৫ সালেও ৮টি পদে বিজয়ী লাভ করে তারা। এবারও ৮টিতে পদে বিজয়ী হয়েছে বিএনপি-জামায়াত সমির্থিতরা। এবারও অধিকাংশ পদে বিজয়ী হওয়ার ধারাবাহিকতা ধরে রাখলো। যদিও এবার সভাপতি পদটি হারাতে হয়েছে। আগামী এক বছর এই কমিটি প্রায় নয় হাজার আইনজীবীর প্রতিনিধিত্ব করবে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির প্রধান এ ওয়াই মশিহুজ্জামানকে ফলাফল ঘোষণা করেন। এবার ভোট পড়েছে ৭৪ শতাংশের বেশি। মোট ৭ হাজার ৮২৫ ভোটারের মধ্যে ৫ হাজার ৮২১ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। ১৪টি পদে এবারের এই নির্বাচনে এবার মোট ৩৩ জন প্রতিদ্বিদ্বীতা করেন।
ঘোষিত ফলে দেখা যায়, বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী (নীল) প্যানেল সম্পাদক, একটি সহ-সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ ও একটি সহ-সম্পাদক, ৪টি সদস্যসহ মোট ৮ পদে জয়ী হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা) প্যানেল পেয়েছে সভাপতি, একটি সহ-সভাপতি, একটি সহ-সম্পাদক ও ৩টি সদস্যসহ ৬টি পদ। এ এম আমিন উদ্দিন ৭৮২ ভোট বেশি পেয়ে সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ভোট পেয়েছেন ৩ হাজার ২২৫। তার নিকটতম প্রতিদ্বদ্বি এ জে মোহাম্মদ আলাী ২ হাজার ৪৪৩ ভোট। সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ৩ হাজার ৫৬ ভোট পান। তার প্রতিদ্বদ্বী আবদুন নূর দুলাল ২ হাজার ৬৪৯ ভোট। সম্পাদক পদে ৪০৭ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হন।
এছাড়াও সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির দুটি সহ সভাপতি পদের একটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মো. জসিম উদ্দিন (২৮৪৯) ভোট এবং অন্যটিতে বিএনপি সমর্থিত আব্দুল বাতেন (২৮৫৬) ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হওয়া বিএনপি সমর্থিত মো. ইমাম হোসেন পেয়েছেন (২৯৪৭) ভোট। সহ সম্পাদকের দুটি পদের একটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাজী শামসুল হাসান শুভ (২৭২৯ ) ভোট, অন্যটিতে বিএনপি সমর্থিত শরীফ ইউ আহম্মেদ (২৭২২) ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
এছাড়া কার্যনির্বাহী কমিটির ৭ টি সদস্য পদে চারটিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী কাজী আখতার হোসাইন (৩১৯৬), রাশিদা আলিম ঐশী (৩০৯৬), মোহাম্মদ উসমান চৌধুরী (৩০৩৬) ও সৈয়দা শাহীন আরা লাইলী (২৮৬৬) ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আর তিনটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আফিয়া আফরোজি রানী (২৮৮৭৭), চঞ্চল কুমার বিশ্বাস (২৮৫২) ও মো. শামীম সরদার (২৯৮৩) ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
এই দুটি প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ২ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান। তিনি ৪৩ ভোট পেয়েছেন। আর ইউনুছ আলী আকন্দ ৫৩ ভোট পেয়েছেন। আর স্বতন্ত্র প্রাথী ছিলেন মনির হোসেন। তিনি ৬৯ ভোট পান। সমিতির নির্বাচনে দুইদিন ব্যাপী ভোটগ্রহণ গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় শেষ হয়। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হয়। ভোটগ্রহণ শেষে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে গণনা শুরু হয়। আগামী এক বছর এই নতুন কার্যনির্বাহী কমিটিই দেশের শীর্ষ আদালতের আইনজীবী সমিতির নেতৃত্ব দেবে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে স্বচছতা নিয়ে সাধারণ আইনজীবীদের জানিযেছেন, এখানে নির্বাচনে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া। এখানে কেন্দ্র দখল নেই, ব্যালট বাক্স ছিন্তাই নেই, পেশী শক্তি নেই, ফলে যারা বেশি ভোট পান তারাই বিজয়ী হন।
টানা সপ্তমবারের মতো সম্পাদক খোকন: এক বছর বিরতী দিয়ে টানা অর্ধ যুগের বেশি সময় ধরে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়শেনের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থক প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নির্বাচিত হয়ে আসছে। সভাপতি পদে বিএনপি সমর্থক প্যানেলে খন্দকার মাহবুব হোসেন ৪ বার নির্বাচিত হন। এ প্যানেলে এজে মোহাম্মদ আলী ১ বার ও জয়নুল আবেদীন ৩ বার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সম্পাদক পদে মাহবুব উদ্দিন খোকন একটানা ৭ বার নির্বাচিত হলেন। সপ্তমবারের মতো সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়া নিয়ে মাহবুব উদ্দিন খোকনের কাছে জানতে চাইলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীরা কাজ করতে চায়। আমি অনেক খুশি সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে। সাধারণ আইনজীবীরা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় তাদের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ও গণতন্ত্র রক্ষায় ভূমিকা রাখার প্রত্যায় ব্যক্ত করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।