পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চের দুটো মসজিদে সাদা সন্ত্রাসীর ব্রাশফায়ারে ৩ বাংলাদেশীসহ ৪৯ জন শাহাদাতবরণ করেছেন। এসব ঘটনায় অন্তত ২০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলায় জড়িত থাকার দায়ে ব্রেনটন ট্যারেন্ট নামক অস্ট্রেলীয় এক শ্বেতাঙ্গ জঙ্গিসহ ৪ জনকে আট করেছে দেশটির পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডেন একে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, এটি দেশটির ইতিহাসের ‘কালো দিনগুলোর’ একটি। সাদা সন্ত্রাসীর ব্রাশফায়ার থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন সেদেশ সফররত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা। প্রেস কনফারেন্সে ব্যস্ত থাকায় আল নূর নামের ওই মসজিদটিতে যেতে দেরী হওয়ায় ওই নৃশংসতা থেকে রক্ষা পান। শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী লাইভে এসে পুরে হামলার দৃশ্য প্রচার করে। ১৭ মিনিটের এই হামলাকে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা ঠান্ডা মাথায় খুন বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আজ (শনিবার) থেকে পূর্বনির্ধারিত নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তৃতীয় টেস্ট বাতিল করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা আজ শনিবার রাতে দেশে ফিরে আসছেন বলে জানিয়েছেন ক্রিকেট দলের সাথে থাকা কর্মকর্তারা। এদিকে এ সাদা সন্ত্রাসীর ব্রাশফায়ারে মানুষ হত্যার নিন্দা ও নিহতদের প্রতি শোক জানিয়েছেন বিশ্বের মুসলিম, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের নেতৃবৃন্দ, রাষ্ট্রপ্রধান থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ক্রিকেট ঘরানা ও সাধারণ মানুষ।
ক্রাইস্টচার্চের পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আল নূর নামের ওই মসজিদে হামলাকারী সন্দেহে তিনজন পুরুষ এবং একজন নারীকে আটক করা হয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন যে, আরো হামলাকারী পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারে। ৪৯ জনের মধ্যে ৪১ জন ডিন এভিনিউয়ে অবস্থিত আল নূর মসজিদে এবং ৭ জন লিনউড মসজিদে শাহাদাতবরণ করেন। এছাড়া একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন জানিয়েছেন, আটককৃতদের একজন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। তিনি সন্দেহভাজন হামলাকারীকে একজন ‘মৌলবাদী, অতি-ডানপন্থী সহিংস সন্ত্রাসী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর আগে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, নিউজিল্যান্ডের অন্যতম বড় এই শহরটির পরিস্থিতিকে পুলিশ ‘সঙ্কটময় ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করে সবাইকে সতর্ক করেছে। আল নূর মসজিদ ভবনের ভেতরে বেশ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনার পর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন।
শ্বেতাঙ্গ জঙ্গি ট্রাম্প সমর্থক
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ৪০ মুসল্লিকে হত্যাকারী ব্রেনটন ট্যারেন্ট নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক বলে উল্লেখ করেছেন। এ হামলার আগেই হামলাকারী টুইটারে ৭৩ পাতার ইশতেহার আপলোড করে হামলার ঘোষণা দেন। তাতে তিনি বলেছিলেন- এটি একটি সন্ত্রাসী হামলা। এছাড়া অভিবাসনের বিরুব্ধে অবস্থান নেয়ায় তিনি নিজেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক বলে উল্লেখ করেন। হামলাকারী নিজেও একজন অভিবাসনবিরোধী বলে ইশতেহারে উল্লেখ করেছেন। ২০১১ সালে নরওয়ের অসলোতে অ্যান্ডারস ব্রেভিক নামে এক সন্ত্রাসীর হামলায় ৭৭ জন নিহত হয়েছিলেন। হামলাকারী ওই ঘটনা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ হামলা চালায় বলে ৭৩ পাতার ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিবাসীবিদ্বেষী এ হামলাকারী তার ইশতেহারে বলেছেন- হামলা করে তিনি অনুপ্রবেশকারীদের (অভিবাসীদের) দেখাতে চান যে, আমাদের ভূমি কখনও তাদের ভূমি হবে না, যতক্ষণ শেতাঙ্গরা জীবিত থাকবেন। তিনি আরও লিখেছেন, আমাদের এবং নিজেদের শিশুদের ভবিষ্যৎকে নিশ্চিত রাখতে হবে। নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন সমর্থক হিসেবে তুলে ধরে হামলাকারী বলেন, পুনরুজ্জীবিত শ্বেতাঙ্গ পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে আমি অবশ্যই ট্রাম্পের একজন সমর্থক।ইশতেহারে তিনি আরও বলেন, আমি মুসলিমদের অপছন্দ করি। আমি সেসব মুসলিমকে ঘৃণা করি, যারা অন্য ধর্ম থেকে এসে মুসলিম হয়। হামলাকারী এসব মুসলিমকে রক্তের সঙ্গে প্রতারণাকারী বলে উল্লেখ করেছেন। এসব প্রতারণাকারীর বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। হামলাকারী বলেন, আমি ডিলান রুফসহ আরও অনেকের বই পড়েছি। তবে আমি প্রকৃতভাবে অ্যান্ডারস ব্রেভিকের ওই হামলা থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়েছি।
১৭ মিনিট ধরে হামলার দৃশ্য সরাসরি স¤প্রচার
নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে হামলার সে ভয়াবহ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১৭ মিনিট ধরে লাইভ স্ট্রিম (সরাসরি স¤প্রচার) করেছে বন্দুকধারী। সেখানে নিজের পরিচয়ও দিয়েছে সে। জানিয়েছে, তার নাম ব্রেন্টন টারান্ট। বয়স ২৮ বছর। অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত শ্বেতাঙ্গ সে। এরইমধ্যে বেন্ট্রন টারান্ট নামে একটি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে টুইটার কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের দাবি, ভয়াবহ হামলার সে দৃশ্য লাইভ স্ট্রিম করে বন্দুকধারী। পরে তা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ফুটেজের ব্যাপারে তিনি অবগত আছেন। এ ফুটেজ সেখান থেকে সরিয়ে ফেলতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে পুলিশ। মাইক বুশ বলেন, ‘এটি (হামলার ফুটেজ) পাবলিক ডোমেইনে থাকা ঠিক হবে না’। আইসিটি প্রোভাইডার স্পার্ক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিমন মৌটার জানান, ওই ভয়াবহ ফুটেজ বিতরণের চেষ্টাকারী ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ করে দেওয়ার কাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘ক্রাইস্টচার্চে হামলাকারীদের ছড়ানো সে বিদ্বেষমূলক ফুটেজ বিতরণের চেষ্টাকারী ওয়েবসাইট বন্ধে স্পার্ক এর নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমাদের ধারণা, এতে আমাদের গ্রাহকদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাময়িক অসুবিধা হবে।’ স্পার্ক এর মুখপাত্র অ্যান্ড্রু পিরি বলেছেন, প্রযুক্তি কর্মীরা ওই ফুটেজ বিতরণকারী তিনটি প্রাথমিক সাইট শনাক্ত করেছেন। এ ধরনের সাইটগুলো বন্ধে ইন্টারনেট প্রোভাইডারাও একযোগে কাজ করছেন।
মসজিদে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নেন এক সাহসী তরুণ
লিনউড মসজিদে হামলার পর এক তরুণ বন্দুকধারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে অনেকের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন সাহসী ওই তরুণ। গতকাল জুমার নামাজের সময় যখন এই হামলার ঘটনা ঘটে তখন তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে বন্দুকধারী সঙ্গে খালি হাতে লড়াই করে অস্ত্র কেড়ে নেন। আর তার কারণেই প্রাণে বেঁচে যায় অনেক মানুষ। নইলে লিনউড মসজিদেও অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটতো। সাহসী সেই তরুণ জুমার নামাজ পড়তে যান ওই মসজিদে। তার জন্য বেঁচে গেছে বহু মানুষের প্রাণ। অন্যথায় হয়তো আরো মানুষের হত্যাকান্ড দেখতে হতো বিশ্ববাসীকে। নিউজিল্যান্ডের গণমাধ্যম হেরাল্ডকে সেই তরুণের গল্প শুনিয়েছেন ওই মসজিদ থেকে বেঁচে ফেরা সৈয়দ মাজহারউদ্দিন।
সৈয়দ মাজহারউদ্দিন বলেন, ‘তখন লিনউড মসজিদে ছিলেন ৬০ থেকে ৭০ জনের মতো। আচমকা ভেতরে গুলি শুরু হয়। চারপাশের সবাই চিৎকার করে পালানোর চেষ্টা করে। ভয়ে লোকজন দিগি¦দিক ছুটোছুটি শুরু করে। আমি তখন লুকিয়ে পড়ার জায়গা খুঁজছিলাম। এ সময় দেখলাম এক লোক মসজিদের গেট দিয়ে ঢুকল।’
সৈয়দ মাজহারউদ্দিন আরও বলেন, ‘দরজার কাছে কয়েকজন বয়স্ক লোক ছিলেন। হামলাকারী তখন নির্বিচারে গুলি করতে থাকেন। এসময় সুযোগ বুঝে এগিয়ে আসেন সেই তরুণ। সঙ্গে সঙ্গে হামলাকারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। আর হামলাকারীর হাত থেকে বন্দুকটা কেড়ে নেন।’
তিনি তরুণের সাহসিকতার কথা বলছিলেন, ‘বন্দুক হাতে পেলেও কিন্তু বন্দুকের ট্রিগারটা খুঁজে পাচ্ছিলেন না মসজিদের তরুণ। হামলাকারী সেই সুযোগে দৌড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর বাইরে অপেক্ষায় থাকা একটি গাড়িতে উঠে পালিয়ে যান।’
বিশ্ব নেতৃবৃন্দের শোক ও নিন্দা
এ ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা শোক প্রকাশ করেছেন ও নিন্দা জানিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আর্র্দেনের কাছে পাঠানো এক শোকবার্তায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি শোক প্রকাশ করেছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীও। তিনি একে দেশের অন্ধকারতম দিনগুলির মধ্যে একটি বলে বিবৃতি দিয়েছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মসজিদে হামলার ঘটনা বেদনাদায়ক ও নৃশংস বলে উল্লেখ করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউজিল্যান্ডে মসজিদে বন্দুকধারীর গুলিতে ৪৯ জন নিহতের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যম টুইটারে ডোনাল্ড ট্রাম্প মসজিদে বন্দুকধারীদের হামলাকে ‘ভয়ঙ্কার হত্যাকান্ড’ বলে উল্লেখ করেছেন। হামলার নিন্দা জানিয়ে ট্রাম্প লিখেছেন, নিউ জিল্যান্ডের জন্য যে কোনও কিছু আমরা তাদের পাশে আছি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকেও হামলাটির নিন্দা জানানো হয়েছে। ঘৃণার নৃশংস প্রকাশ হিসেবে হামলাকে আখ্যায়িত করে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ক্রাইস্টচার্চে হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। নিহতদের পরিবার ও আহতদের প্রতি আমাদের শোক ও সমবেদনা। ঘৃণার এই নৃশংস কান্ডের বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডের জনগণ ও সরকারের পাশে আছি আমরা।
এদিকে মুসলমানরা গণহত্যার শিকার হচ্ছেন জানিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতা অলসভাবে দেখছে বিশ্ব। এই মুসলমানদের যে ব্যক্তিগতভাবে হয়রানি করা হত, ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদের হত্যাকান্ডের মাধ্যমে সীমান্ত ছাড়িয়ে তা গণহত্যায় রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, এখনই যদি পদক্ষেপ নেয়া না হয়, তবে আমাদের আরো বিপর্যয়ের খবর শুনতে হবে। আল নূর মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ নিশ্চয়ই শহীদদের ক্ষমা করে দেবেন। আহতদের দ্রæত সুস্থ হওয়ার জন্য সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এ হামলার ঘটনায় মুসলিম বিশ্বের পক্ষ থেকে নিউজিল্যান্ডের হতাহত নাগরিকদের প্রতি আমি শোক জানাচ্ছি। ইসলামবিদ্বেষ ও বর্ণবাদ বৃদ্ধির সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হিসেবে এ ঘটনাকে দাঁড় করিয়েছেন মুসলিম বিশ্বের এ নেতা।
এর আগে এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ কখনো ধর্ম হতে পারে না। নিহত ও তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি তিনি সমবেদনা জানিয়েছেন।
ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের বৈদেশিক নীতি প্রধান ফেডারিকা মোঘেরিনি নিউজিল্যান্ডে হামলায় নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘নামাজের স্থানে হামলা করা মানে আমাদের সকলের উপরেই হামলা করা, যারা অভিবাসন এবং ধর্ম ও মত স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।’
জার্মান চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল মসজিদে হামলায় ‘নাগরিকদের উপর হামলা ও বর্ণবাদী ঘৃণা থেকে হত্যার’ উপর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। টুইটারে তার মুখপাত্র স্টিফেন সিববার্টের মাধ্যমে মার্কেল বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদের এই ধরনের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে একত্রে দাঁড়িয়ে আছি। হামলার শিকার মানুষগুলো মসজিদটিতে শান্তিপূর্ণভাবে প্রার্থনা করছিল।’
স্কটল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী নিকোলা স্টুরজন ঘটনাটিকে ‘ভয়াবহতাকেও অতিক্রম করেছিল’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি মুসলমানদের স্কটিশ সমাজের ‘মূল্যবান অংশ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি যোগ করেছেন, ‘স্কটল্যান্ড এবং অন্যত্র মসজিদে মুসলমানরা নামাজ পড়ে। তারা আমাদের বৈচিত্র্যময় এবং বহুসংস্কৃতির সমাজের মূল্যবান অংশ। এই সন্ত্রাসীরা আমাদের সমাজিক মূল্যবোধে আঘাত করে। আমাদের অবশ্যই মুসলিম-বিদ্বেষ এবং সকল ঘৃণার বিরুদ্ধে দাড়াতে হবে।’
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়া এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেটিনো মারসুদি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সরকার ও ইন্দোনেশিয়ার জনগণ হামলার শিকার ও তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে।’
মালয়েশিয়ার ক্ষমতাসীন জোটের বৃহত্তম দলটির নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমি এই নৃশংসতায় গভীরভাবে দুঃখিত, এই ধরণের বিদ্বেষ মানবিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে যায় এবং নাগরিকদের জীবন নেয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভ‚তি ও সমবেদনা জানাচ্ছি।’
অস্ট্রেলিয়ার নিউজিল্যান্ড ও ফিজিতে নিয়োজিত আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত ওয়াহিদুল্লাহ ওয়াসি টুইটারে একজন আফগান বংশোদ্ভ‚ত নিহত ও তিনজন আফগান আহত হয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘আমি ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে গুলির ভয়ানক খবর পেয়েছি। আমি নিহত আফগানের পরিবার ও আহত তিনজনকে নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন।’
অস্ট্রেলিয়া এই দুঃখজনক হামলার পরে নিউজিল্যান্ডের পাশে আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা পাশে আছি এবং শোক প্রকাশ করছি। অবশ্যই এটি একটি চরমপন্থী, ডানপন্থী, সহিংস সন্ত্রাসী দ্বারা সংঘটিত আক্রমণ।’ তিনি মিডিয়াকে নিশ্চিত করেছেন যে, দক্ষিণ নিউজিল্যান্ড শহরের ক্রাইস্টচার্চ শহরের প্রধান মসজিদে হামলাকারী অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণকারী নাগরিক।
আল নূর নামের ওই মসজিদটি ডিন অ্যাভিনিউতে অবস্থিত এবং এটি হ্যাগলি পার্কের মুখোমুখি। এই মসজিদেই জুম্মার নামাজ আদায় করতে যাওয়ার কথা ছিল নিউজিল্যান্ড সফররত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যদের। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিরাপদে রয়েছেন বলে খবরে বলা হয়েছে। হ্যাগলি পার্কেই অনুশীলন করছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। সেখানেই আজ শনিবার থেকে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড দলের মধ্যকার তৃতীয় টেস্ট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের টুইটার পেইজে দেয়া এক পোস্টে জানানো হয়, দুই দলের সম্মতিতে ১৬ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া সিরিজের তৃতীয় টেস্টটি বাতিল করা হয়েছে। এ হামলা থেকে বেঁচে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক ক্যাপ্টেন মুশফিকুর রহিম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলার সময় আল্লাহ আজ আমাদের রক্ষা করেছেন...আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান।’
বিবিসি নিউজ অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের সদস্যরা খুব অল্পের জন্য ওই গোলাগুলির ঘটনা এড়াতে পেরেছেন বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের ওপেনার তামিম ইকবাল ফেসবুকে লিখেছেন ‘পুরো দল বন্দুকধারীদের হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছে!!! ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হলো এবং সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন’।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মুখপাত্র জালাল ইউনুস বলেছেন, বাসে করে দলের বেশিরভাগ সদস্যই মসজিদে গিয়েছিল এবং ঠিক যখন হামলার ঘটনাটি ঘটে তারা মসজিদের ভেতর প্রবেশ করতে যাচ্ছিল। তিনি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘তারা নিরাপদে আছেন, কিন্তু মানসিকভাবে তারা ধাক্কা খেয়েছেন। আমরা তাদেরকে হোটেল থেকে বের না হওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’
ঘটনার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সব খেলোয়াড় নিরাপদ আছেন জানিয়ে দলের টুইটার পেজ থেকে পোস্ট দেয়া হয়। ঘটনার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের খবর সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা সাংবাদিক মোহাম্মদ ইসাম টুইটারে লিখেছেন, ‘তারা (ক্রিকেট দল) হ্যাগলি পার্কের কাছে একটি মসজিদে বন্দুকধারীর হামলার ঘটনা থেকে বাঁচতে পেরেছেন।’
ক্রাইস্টচার্চের সব স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ। সূত্র : বিবিসি, এএফপি, আল-জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।