পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঐতিহ্যবাহী ছারছীনা দরবার শরীফের বার্ষিক ইসালে ছাওয়াব মাহফিলে সমবেত মুসল্লিগণের উদ্দেশে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, এদেশে দ্বীনি অলেমগণ শত শত বছর ধরে মানুষকে আল্লাহ ও রাসূলের পথে দাওয়াত দিয়ে আসছেন। মানুষকে হেদায়াত করার জন্যই আল্লাহ পাকের তরফ থেকে ওলীয়ে কামেলগণ এ দুনিয়ায় আসেন। তারা জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে মহান আল্লাহর পথে মানুষকে দাওয়াত দিয়ে যান। ছারছীনা এমনই এক দরবার যেখানে আল্লাহর ওলীগণ শুয়ে আছেন। এ জমীনেও আছেন। এখান থেকে একমাত্র আল্লাহর রাস্তায় চলার জন্যই তাগিদ ও নির্দেশনা দেয়া হয়। ছারছীনা কামেল পীরের দরবার। এখানে দুনিয়াবী বাহাদুরীর কোনো স্থান নেই।
ছারছীনা দরবার শরীফের তিন দিনের বার্ষিক ঈসালে ছাওয়াব মাহফিলের দ্বিতীয় দিন গতকাল বাদ মাগরিব পীর ছাহেব হযরত মাওলানা শাহ্্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ ছাহেব-এর বয়ানের পর আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ-এর মত প্রতিষ্ঠান দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করছে। কিন্তু দেশ আজ ভয়াবহ মাদকের ছোবলে। সমাজের সর্বত্র মাদক গ্রাস করছে। দুর্নীতিও সমাজে শক্ত অবস্থান নিচ্ছে।
আর সমাজ সংস্কারে দেশের মাদরাসা শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে জানিয়ে এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, এক্ষেত্রে ছারছীনা দরবারের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দরবারে আলীয়া, কওমিয়া, দ্বীনিয়া মাদরাসা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছারছীনার মরহুম পীর ছাহেবও এ সমাজ ও দেশে ইসলামী শিক্ষা ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন। ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ইসলামী শিক্ষাই কেবল আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলার নির্দেশনা দিয়ে থাকে উল্লেখ করে এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, ইসলামী শিক্ষাই আমাদেরকে সমাজের অন্ধকার থেকে আলোর পথ নিয়ে যেতে পারে, আল্লাহর নির্দেশিত পথে চালাতে পারে। ইনকিলাব সম্পাদক-এর বক্তব্য প্রদানের পর পীরজাদা শাহ মো. হোসাইন ছারছীনা দরবার শরীফে বয়ান করেন।
এর আগে আমীরে হিযবুল্লাহ ছারছীনা শরীফের হযরত পীর ছাহেব আলহাজ মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ তার বক্তৃতায় বলেন, আমরা নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, হজ্বসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি করি। এসব ইবাদতে শয়তান আমাদের ওয়াসওয়াসা দেয় যা আমাদের ইবাদতকে বিনষ্ট করে, মনোযোগ অন্যদিকে ধাবিত করে। শয়তানের ওয়াসওয়াসামুক্ত ইবাদত করার জন্য প্রত্যেক মুসলমানের উচিত তরিকা-তাসাওউফের চর্চা করা। যিক, তাসবীহ-তাহলীল, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরীফ ও নফল ইবাদতে মশগুল থাকাই হলো তরীকায়ে তাসাওউফ। পাশাপাশি হালাল ভক্ষণ ও হারাম বর্জন, পর্দা পালন ইত্যাদি শিক্ষা দেয় তরীকা। আর এই তরীকা তাসাওউফ শিক্ষার জন্যই হক্কানী পীরের সোহবতে যেতে হয়। যারা পীর মুরীদকে শিরক বলে গলা ফাটাচ্ছে তাদের উদ্দেশে পীর ছাহেব বলেন, তাহলে বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী, খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী, হযরত শাহ্্জালাল, হযরত শাহ পরান (রহঃ)সহ অন্যান্য আওলিয়ায়ে কেরামও কি মুশরিক ছিলেন? এসব কথা বলে সরলমনা মানুষের ঈমান নিয়ে ছিনিমিনি খেলে যারা, তারাই ইসলাম ও মুসলমানের দুশমন। এদের থেকে আমাদের সর্বদা সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
পীর ছাহেব আরও বলেন, ঈমান-আকীদা মজবুত রাখার জন্য দ্বীনিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। এ কথা শুধু মুখে বললেই হবে না, বরং সন্তানকে দ্বীনিয়া মাদরাসায় ভর্তি করে, অর্থ দিয়ে ও জায়গা দিয়ে দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের খেদমতে পীরভাই, মুহিব্বীনকে এগিয়ে আসতে হবে।
পীর ছাহেব আরও বলেন, সকল ক্ষমতার একমাত্র মালিক আল্লাহ। এই ক্ষমতা দ্বীনের খেদমতে ব্যবহার করা মুসলমানদের কর্তব্য। ছারছীনা দরবার দলীয় রাজনীতি করে না। কিন্তু যারা ইসলামকে ভালোবাসে, দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে এ দরবার তাদের সফলতার জন্য আল্লাহর কাছে সর্বদা দোয়া করে।
মাহফিলের দ্বিতীয় দিন বিশেষ মেহমান ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী এডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম এমপি। এদিন আরো বক্তৃতা করেন মাওলানা মাহমুদুম মুনীর হামীম, মাওলানা সিরাজুম মুনীর তাওহীদ, মাওলানা আবদুল গফ্ফার কাসেমী, মাওলানা কাজী মফিজ উদ্দিন, মাওলানা মো. বদরুজ্জামান রিয়াদ, মাওলানা মোহেব্বুল্লাহ আল মাহমুদ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ এম. এম. এনামুল হক, বাংলাদেশ জমইয়তে হিযবুল্লাহর নায়েবে আমীর আলহাজ মাওলানা মির্জা নূরুর রহমান বেগ, পিরোজপুরের সার্কেল এস. পি. শাহনেওয়াজ, নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন, ব্যরিস্টার এ. বি. এম সিদ্দিকুর রহমান, নেছারাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে. এম তারিকুল ইসলাম, স্বরূপকাঠী পৌরসভার মেয়র জি. এম কবির প্রমুখ। আজ বাদ জোহর আখেরী মুনাজাত। দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে হযরত পীর ছাহেব আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।