Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সাগর তীর দিয়ে সংযোগ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

একপাশে সবুজ পাহাড় বন-জঙ্গল ফসলের মাঠ গ্রামীণ জনপদের অপরূপ দৃশ্য। অন্যপাশে অকুল দরিয়া সেই বঙ্গোপসাগরে ঢেউয়ের গর্জন। সমুদ্রের কোলঘেঁষে কোথাও নাক বরাবর সোজা কোথাও কিছুটা এঁকেবেঁকে চলা ভিন্ন রকমের মহাসড়ক। জেলেদের মাছ শিকার, হৃদয়-মন নিংড়ানো সাগরবুকে সূর্যাস্ত অবলোকন, সারি সারি জাহাজের আলোকমালা, লোনা বাতাসের ঝাপটা গায়ে লেগে কখনওবা শিউরে ওঠা। যানজট, কালো ধোঁয়া, ধুলো-মলিন শহর নগরজীবনে ইট-পাথরের যন্ত্রণায় মুক্তির খোঁজে ছুটে চলা।
দেশ-বিদেশের লাখো পর্যটকের জন্য অনাবিল অপার্থিব আনন্দ উজাড় করে দেবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভওয়ে। ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ নান্দনিক এই মহাসড়কটিই হতে যাচ্ছে পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভওয়ে। উত্তর চট্টগ্রামের মীরসরাই সমুদ্র উপকূল থেকে সীতাকুন্ড, বন্দরনগরী, দক্ষিণ চট্টগ্রাম, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর উপজেলা হয়ে সৈকতনগরীর কলাতলী পয়েন্টে এসে যুক্ত হবে চার লেইন বিশিষ্ট মেরিন মহাসড়ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু টানেলের খনন কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে ঘোষণা করেন, চট্টগ্রামের মীরসরাই থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভওয়ে নির্মাণ করা হবে। এরফলে পর্যটন ও জাতীয় অর্থনীতিতে উন্মোচিত হবে ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার। বর্তমানে কক্সবাজার শহরের কলাতলী বীচ থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভওয়ে রয়েছে। যেটি পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভওয়ে।
বিগত ২০১৭ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকস ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে। এখন মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে মেরিন ড্রাইভওয়ে। এটি মীরসরাইয়ে নির্মাণাধীন দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক জোনকে যুক্ত করবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে আন্ত.মন্ত্রণালয় তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রবীণ সাংবাদিক-লেখক কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. বদিউল আলম স্মৃতিচারণ করে গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ‘১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে শেষবার কক্সবাজার সফর করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পর্যটন শিল্প, লবণ শিল্প ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ কক্সবাজারকে ঘিরে তাঁর স্বপ্ন ও পরিকল্পনার কথা বলে গেছেন। আমি তখন দৈনিক বাংলায় কাজ করি। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু কক্সবাজার সফরকালে দীর্ঘতম সৈকতব্যাপী ঝাউবীথি সৃজনের জন্য বনবিভাগকে নির্দেশ দেন’। আজ বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত পথরেখা ধরেই স্বপ্নীল পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
অর্থনীতিবিদ ও পর্যটন বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন মহাসড়কটি নির্মিত হলে আধুনিকরূপে পর্যটন, শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহারসহ কর্মসংস্থানের নতুন দুয়ার খুলে যাবে। মেরিন মহাসড়ক এনে দেবে সমৃদ্ধ ও উন্নত অন্য এক বাংলাদেশ। পৃথিবীর অনেক দেশেরই জাতীয় রাজস্ব আয়ের প্রধান ও স্থায়ী উৎসটি হচ্ছে পর্যটন শিল্পখাত। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ মহাসড়কটি বাংলাদেশকে পর্যটন সম্ভারে ভরপুর সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় গন্তব্যরূপে বিশ^জুড়ে পরিচিত করবে নি.সন্দেহে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভওয়ে নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের ইউজিসি অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এটি হবে অত্যন্ত সময়োপযোগী প্রকল্প। মেরিন ড্রাইভওয়ের ব্যাপ্তিটা হবে কক্সবাজার থেকে পুরো চট্টগ্রাম পর্যন্ত। এরফলে পর্যটনের দ্বার খুলে যাবে। এটি বিকল্প মহাসড়ক হিসেবে দাঁড়াবে, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপর চাপ কমাবে। তাছাড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক হিসেবে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সংযোগ সৃষ্টি করবে। মেরিন ড্রাইভওয়ের সাথে যখন মীরসরাই, আনোয়ারাসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক জোন যুক্ত হবে। শিল্পায়ন ও বিনিয়োগের গতি সঞ্চার করবে।
সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, মীরসরাই থেকে কক্সবাজার চার লেইনের মেরিন ড্রাইভ মহাসড়ক নির্মিত হবে অভিজ্ঞ কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সমীক্ষা এবং স্থানীয় অধিবাসীদের কাছ থেকে তথ্যাবলী জোগাড় করে। এতে একশ’ বছরের সর্বোচ্চ ফ্লাড লেভেল এবং বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ধারাগুলো বিবেচনায় রাখা হবে। এটি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময়ে উপক‚লকে দেবে সুরক্ষা। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে উঁচু ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। মহাসড়কটি হবে সামগ্রিকভাবে পর্যটকবান্ধব। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপদ এবং সেতু বিভাগ। পুরো মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ মেগাপ্রকল্পে চীন সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা মিলবে।
প্রস্তাবিত মেরিন ড্রাইভ মহাসড়ক চট্টগ্রামের মীরসরাই মুহুরী সমুদ্র উপক‚ল থেকে সীতাকুন্ড হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর নেভাল একাডেমি, বঙ্গবন্ধু টানেল, আনোয়ারা চাতরী চৌমুহনী, বাঁশখালী, পেকুয়া, চৌফলদন্ডী, খুরুশকুল সমুদ্র উপক‚ল হয়ে কক্সবাজার শহরে কলাতলী মেরিন ড্রাইভ সড়কে সংযুক্ত হবে। এ মহাসড়কের গড় উচ্চতা হবে ১৫ ফুট। ২৩০ কিলোমিটারের মধ্যে চট্টগ্রাম অংশে ৮০ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার অংশে পড়বে ১৫০ কি.মি.। এটি কক্সবাজার-টেকনাফের সাবরাং পর্যন্ত নির্মিত ৮০ কি.মি. মেরিন ড্রাইভওয়ের সাথে ফোর লেইনে উন্নীত হয়ে যুক্ত হবে। ইতোমধ্যে মেরিন ড্রাইভ মহাসড়কের মীরসরাই প্রান্তে বেজা’র অর্থনৈতিক জোন এলাকায় দুই লেইন সড়কের ৮ কি.মি. অংশকে চার লেইনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলছে। যার বিস্তৃতি ঘটবে কক্সবাজার পর্যন্ত।



 

Show all comments
  • Miyan Mubarak ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
    Alhamdulillah amra shara jibon lale lal,Allah SWT kokkonoi kalo kore nai...Alhamdulillah!
    Total Reply(0) Reply
  • Saleh Ahmed Anik ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
    Good step
    Total Reply(0) Reply
  • Kaba Kaba ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 1
    আবার টাকা খাওয়ার ফনদি
    Total Reply(0) Reply
  • David Mark ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
    Marin drive a kechu bull acha ... R aktu sondar korar chilo
    Total Reply(0) Reply
  • Shamim Haque ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
    যে যাই বলুক, সরকার কিছু কাজ/উন্নয়ন করছে। খারাপ কমেন্ট করলে ত, আর উন্নয়ন হবে না .............. Let's do.thanks
    Total Reply(0) Reply
  • Moontasir Bin Mostafa ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
    ১.৭ কিলোর কি একটা ছাতার মাথা বানাইতে খরচ ধরছে ৪৬৭ কোটি !!
    Total Reply(0) Reply
  • Abir Hossain ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
    Don’t waste money on useless things. Invest in cox's city and make it planned city for tourists. Otherwise flyover won't help you to attract tourist! It will only help gov officer to earn money!
    Total Reply(0) Reply
  • Khorshed Alam ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
    আগামি ২০ বছর পরে হলেও কেউ আমার এই কথাটির মর্ম বুঝতে পারবে। কাজটা শুরু করা দরকার এখন।
    Total Reply(0) Reply
  • Khorshed Alam ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
    চিন বা জাপানের সহায়তায় ঢাকা থেকে কস্কবাজার পর্যন্ত একটি স্পেশাল দ্রুত গতির রেল লাইন করা দরকার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ