Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ার শঙ্কা

কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

কুষ্টিয়া থেকে এস এম আলী আহসান পান্না | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ভবন প্রকল্পের কাজ দুই বছর বন্ধ থাকার পর নতুন করে সময় বাড়িয়ে কাজ শুরু হলেও যথাসময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারপরও নতুন ডিপিডিতে ১০ একর জমি অধিগ্রহণ ও আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হলেও জমি না পাওয়ায় সেটা পিছিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি হাসপাতাল ভবনের গাড়ি বারান্দার ছাদ ধসের পর কিছুটা হলেও ধীরগতিতে চলছে কাজ।

এদিকে ২০১৬ সালে মূল ক্যাম্পাসের নির্মাণ শেষে নতুন একাডেমিক ভবনে কার্যক্রম চালু হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ক্লাসসহ যাবতীয় কার্যক্রম চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। তবে চলতি বছরেই বাকি কাজ শেষে নতুন ভবনে কলেজ সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে আশাবাদি পিডিসহ অন্য কর্মকর্তারা।
কলেজ সুত্রে জানা গেছে, ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ২০১১ সালে মেডিক্যাল এ্যাসিসটেন্ট টেনিং ইনস্টিটিউট (ম্যাটস) ভবনে অস্থায়ীভাবে যাত্রা শুরু হয় কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের। আর ২০১৩ সালে শহরের লাহেনী এলাকায় ২০ একর জায়গার ওপর ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরে নির্মাণ শুরু হয় কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভবন প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ওই বছর নতুন স্থায়ী ক্যাম্পাসে কলেজের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল।
মেডিক্যাল কলেজের একাধিক সুত্র জানায়, ২০১৩ সালে প্রকল্পের যে কাজ শুরু হয় তার ডিপিডি করা তৈরি করা হয় ২০০৮ সালে । সব কার্যক্রম শেষে যখন কাজ শুরু হয় তখন সব কিছুর বাজার দর বেড়ে যায়। তাই নকশা অনুয়ায়ী প্রতিটি ভবন শেষ না হলেও অর্থ ফুরিয়ে যায়। পরিদর্শনে এসে আইএমইডির টিমের সদস্যরা অনিয়মের অভিযোগ এনে প্রতিবেদন দেন। এতে প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তখন এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন ডা. ইফতেখার মাহমুদ। তিনি একই সঙ্গে অধ্যক্ষ ছিলেন।

এরপর প্রকল্পের পিডি হিসেবে নিয়োগ পান ডা. আশরাফুল হক দারা। তিনি দুই বছর নানা চেষ্টা ও তদ্বিরের পর প্রকল্পের যে জট ছিল সেটা ছাড়াতে সক্ষম হন। ২০১৮ সালে প্রকল্পে মেয়াদ বাড়ানোসহ নতুন করে অর্থ করাদ্দ দেয়া হয়। চলতি বছরের মধ্যে একাডেমিক, ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল ও হাসপাতালসহ যেসব ভবনের উর্দ্ধমুখী স¤প্রসারন কাজ বাকি আছে সেগুলো শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে মাস স¤প্রতি কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভবনের গাড়ি বারান্দার ছাদ ধ্বসের পর এ প্রকল্পের কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইতিমধ্যে দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়মের অভিযোগে গণপুর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী, এসডি, এসওসহ ৪ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। দুইজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনার পর কাজে কিছুটা ধীর গতি শুরু হয়েছে।

কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভবন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা. আশরাফুল হক দারা বলেন, ‘সঙ্কট কাটিয়ে জোরোসোরে কাজ চলছে। প্রকল্পের মেয়াদ আছে এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে যেসব ভবনের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারন কাজ বাকি সেগুলো শেষ করতে হবে। এছাড়া নতুন করে ১০ একর জমি অধিগ্রহনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সেটির কাজ চলমান রয়েছে। জমি পেলে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভবনের কাজ শুরু করা হবে। আর কোন কারনে কাজ শেষ করতে না পারলে সময় বাড়ানোর আবেদন করা হবে।’
গণপুর্ত সুত্র জানিয়েছে, অনেক ভবনের কাজ ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। অন্যগুলোর কাজও চলমান রয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীন সড়ক, সীমানা প্রচীর, পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থার কাজ চলছে। হাসপাতাল ভবনের কাজ এখনো অনেক বাকি রয়েছে। সেটি এ বছর শেষ করা সম্ভব হবে না।
কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ফাতেমা তাবাসসুম বলেন ভর্তির আগে শুনেছিলাম আমাদের ক্লাস হবে নতুন ক্যাম্পাসে। এখন অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ১ বছর ক্লাস হতে চললেও নতুন ক্যাম্পাসের কোন খবর নেই। এখানে লাইব্রেরির সমস্যা। ক্লাসে ফ্যান নেই। এছাড়া শ্রেণী কক্ষে জায়গা সঙ্কট রয়েছে।’
কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, হোস্টেলের পরিবেশ খুব খারাপ। গাদাগাদি করে থাকতে হয়। খাবারের মানও ভাল নয়। এছাড়া সামীনা প্রচীর না থাকায় বাইরের লোকজন ঢুকে পড়ে। মাঝে মধ্যে চুরি হয়।’
মেডিক্যাল কলেজ সুত্র জানিয়েছে, ছোট ছোট কয়েকটি সরকারি ভবন শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল হিসেবে দেয়া হয়েছে। সেখানে জায়গার সমস্যা রয়েছে। নতুন ক্যাম্পাসে না যাওয়া পর্যন্ত সমস্যা দূর করা সম্ভব নয়।
কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এসএম মুস্তানজীদ বলেন, সবার স্বপ্ন থাকে একটি প্রশ্বস্ত ও বড় ক্যাম্পাসে লেখাপড়ার। কিছু কারনে সময়মতো আমাদের ক্যাম্পাসের কাজ শেষ হয়নি। এখন কাজ জোরোসোরে চলমান রয়েছে। আশা করছি চলতি বছরের মধ্যে আমরা ক্যাম্পাসে যেতে পারব। সেই চেষ্টায় করা হচ্ছে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ