Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কুমিল্লায় অগ্নিঝুঁকি বাড়ছে

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

আছে নিরাপত্তা ছাড়পত্র, নেই সরঞ্জাম
আইন মানে না কেউ
 কুমিল্লা শহরের ঝাউতলায় কুইন্স পার্লারে আগুন লাগার সময় পালাতে ব্যস্ত পার্লারের কর্মকর্তা-কর্মচারি। ভেতরে গেস্টদের খবর রাখার সময় নেই। গত শনিবার অগ্নিকাÐের পর দেখা গেছে, ভবনটিতে অগ্নি নির্বাপনের যথাযথ ব্যবস্থা ছিলো না। সাজসজ্জায় বেশ আধুনিক এই ভবনটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো দুর্বল।

শুধু এই ভবনটি নয় কুমিল্লার প্রায় সব আবাসিক ভবন এমনকি শপিং কমপ্লেক্সগুলো রয়েছে অগ্নি ঝুঁকিতে। শপিং কমপ্লেক্সগুলোর ভেতরে-বাইরে আলোর ঝলকানি থাকলেও একবার আগুন লাগলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা মুশকিল। বেশিরভাগ বহুতল ভবনেরই আছে অগ্নি নিরাপত্তা ছাড়পত্র, কিন্তু নেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগ মানুষের নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি ভবনে অগ্নি নিরাপত্তার কিছু বিধিমালা নির্ধারণ করে দিলেও তার কোনো প্রয়োগ নেই ভবনগুলোতে। এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের শামীমা প্রধান বলেন, যখন আমরা কোন ভবন নির্মাণ করি, তখন এই অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টিকে আমলে নেই না। এটা আমাদের প্র্যাকটিসের সমস্যা। সচেতনতা না থাকার সমস্যা। কোন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা যতক্ষণ না কারও জীবনে ঘটছে, তার আগ পর্যন্ত কেউ সচেতন ভূমিকা রাখছেন না।

কুমিল্লায় নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সেইসঙ্গে পুরানো ভবনগুলোয় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন না করায় যেকোনো মুহুর্তে কুমিল্লা ভয়াবহ বিপদের মুখে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের পরিচালক। ভবন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রচলিত নিয়ম মেনেই বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আর সিটি কিংবা পৌর মেয়ররা জানান, জনবল সংঙ্কটের কারণে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ তদারকি করা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অগ্নিনির্বাপণ আইন অনুসারে আগুনের ঝুঁকি এড়াতে মার্কেটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকার কথা। তাছাড়া ছাদে ওঠার সিঁড়ি, ছাদের দরজা খোলা রাখা, বাইরে বের হওয়ার একাধিক দরজা রাখার ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু এই আইন কেউ মানছে না। সূত্র আরো জানায়, বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ১০ তলার ওপর কোনো নতুন ভবন নির্মাণ করার ক্ষেত্রে ওই ভবনে আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার পাম্পসহ আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হয়। কুমিল্লার বেশির ভাগ ভবনই কোনো রকম নিয়ম না মেনেই করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, ছয় তলার অধিক উচু ভবন সাধারণত হাইরাইজ ভবন হিসেবে চিহ্নিত। অধিকাংশ উচু ভবনই জেলা সদরে অবস্থিত। এর বাইরে সদর দক্ষিণ, লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম, বরুড়া, চান্দিনা, দাউদকান্দি, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, হোমনা প্রভৃতি উপজেলায়ও রয়েছে বেশ কিছু হাইরাইজ ভবন, প্রতিটি উচু ভবন নির্মাণের পূর্বে স্থানীয় সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ থেকেও অনুমতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ কোন নিয়মনীতির তোয়ক্কা না করে উচু ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয়ায় শহরসহ জেলার সর্বত্র উচু ভবন নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। প্রতিটি হাইরাইজ ভবন নির্মাণের পূর্বে ভবন মালিকদের দুর্ঘটনা এড়ানোর প্রস্তুতির নির্দেশ থাকলেও মালিক পক্ষের এদিকে যেমন খেয়াল নেই, অগ্নিনির্বাপক বাহিনীও এক্ষেত্রে দেখেও না দেখার ভান করছে।
দায়িত্ব সূত্র জানায়, কুমিল্লায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ ৪ তলা পর্যন্ত উচু ভবনে অগ্নি নির্বাপনের সরঞ্জাম আছে। এর উপরে উচু ভবনে আগুন নিভানোর প্রযুক্তি তাদের নেই। কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই স্থানীয় ফায়ার কর্তৃপক্ষ উচু ভবন নির্মানের অনুমতি দিচ্ছে। সরেজমিনে ঘুরে পাওয়া তথ্যে আরো জানা যায়, শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে যেভাবে উচু ভবন নির্মিত হচ্ছে, দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে কখনো আগুন লাগলে এসব ভবনের কাছে পৌঁছতেও দমকল বাহিনীর মই বা পানিবাহী গাড়িগুলোকে ভীষণ অসুবিধার মুখে পড়তে হবে। শহরের বাগিচাগাঁত্ত, তালপুকুর পাড়, ঠাকুরপাড়া, মনোহরপুর, উজির দিঘীর পাড়, রেইসকোর্স, ঝাউতলা, বাদুরতলা, শিশুমঙ্গল রোড প্রভৃতি এলাকায় রয়েছে এমন বহু সংখ্যক বাড়ি। এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক বলেন, শপিং মার্কেটগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। কোনো নিয়ম-নীতিই সেখানে মানা হয়নি। আগুন নির্বাপক যন্ত্র নেই, পানি নেই, নেই ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম। কোথাও আগুন লাগলে নিজস্ব ফাইটাররা যাতে ফায়ার সার্ভিস আসা পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে ওই ব্যবস্থাও শপিং মার্কেটগুলোয় নেই। মার্কেটের ট্রান্সফরমার, জেনারেটর, বিদ্যুতের সাবস্টেশন সব এক জায়গায় করা হয়েছে। তবে ভবন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রচলিত নিয়ম মেনেই বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। কুমিল্লার সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন উপজেলার পৌরসভার মেয়র দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, জনবল সঙ্কটের কারণে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ তদারকি করা যাচ্ছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ