Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ভারত সিন্ডিকেটে স্থবির বাণিজ্য

বেনাপোল বন্দর

বেনাপোল অফিস : | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটে বেনাপোলে আমদানি রফতানি বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। প্রবেশের অপেক্ষায় ৬ হাজার পণ্য বোঝাই ট্রাক আটকে আছ্।ে ফলে আমদানি বাণিজ্য কমে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধস নামতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, ভারতের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট উচ্চ ডিউটি সম্পন্ন পণ্যের চালানগুলো সিরিয়ালের নামে কৌশলে আটকে রাখে। শূন্য ডিউটি সম্পন্ন চালানগুলো রফতানি করা হচ্ছে বাংলাদেশে। উচ্চ ডিউটি সম্পন্ন কমার্শিয়াল চালানগুলো দিনের পর দিন আটকে থাকায় ট্রাক প্রতি ২ হাজার টাকা করে ড্যামারেজ আদায় করা হচ্ছে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের কাছ থেকে। একটি ট্রাক ১০ থেকে ১৫ দিন আটকে থাকায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ড্যামারেজ গুণতে হচ্ছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের। মোটা অঙ্কের লোকসানের কথা ভেবে অনেকই এই পথে আমদানি কমিয়ে দিয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।
কাস্টমস সূত্র জানায়, প্রতি বছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে ৩০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়ে থাকে। বেনাপোল কাস্টমস হাউস প্রতি অর্থ বছরে ৭ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে এই বন্দর থেকে। ভারতের প্রেট্রাপোল বন্দরে এ ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ৫৬০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় কম হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বেনাপোল চেকপোস্টে নানা ধরনের বাড়তি নিয়মকানুন চালু করায় ভারত থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করতে বিলম্ব হচ্ছে। বেনাপোল চেকপোস্টে ভারতীয় এক একটি ট্রাক প্রবেশ করতে ২০ মিনিট করে সময় লাগায় সারাদিনে ট্রাক আসা কমে গেছে। ইতিপূর্বে প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫শ’ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো ভারত থেকে। সময়ক্ষেপনের কারণে বর্তমানে ট্রাক আমদানি সংখ্যা কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৫০। চেকপোস্টে বিজিবি, কাস্টমস ও বন্দর আলাদাভাবে রেজিস্ট্রার খাতায় ট্রাক এন্ট্রি করায় এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। অন্যদিকে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যে চট্টগ্রামে যে মূল্য বেনাপোলে তার চেয়ে বেশি মূল্যে শুল্কায়ন করায় আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে চট্টগ্রাম দিয়ে আমদানি করছে।
বেনাপোল কাস্টমস সিএন্ড এফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বেনাপোল চেকপোস্টে আমদানিকৃত পণ্যবোঝাই ট্রাক এনট্রির নামে অহেতুক সময় নস্ট করায় সারা দিনে ট্রাক ঢোকা কমে গিয়ে রাজস্ব আদায়ে ধস নামতে শুরু করেছে। কাস্টমস চেকপোস্টের একটি পয়েন্টে ট্রাক এনিট্র করলে সময় যেমন বাচবে তেমনি বাড়বে আমদানি- রফতানি বাণিজ্য। আমদানিকৃত পণ্য’র ওপর মনগড়া মূল্য চাপিয়ে শুল্কায়নকরণ বন্ধসহ বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলে এই বন্দর থেকে প্রতিবছর সরকারের ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় সম্ভব বলে ব্যবসায়ীরা অভিমত দিয়েছেন।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুইয়ার নিদের্শে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন আমদানি রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে দু দেশের ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় সভায় করেছেন। বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরে অবিলম্বে যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠন করলে আমদানি রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়।
এছাড়া ভারতীয় বন্দর ব্যবহারকারি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরীর সাথে বৈঠক করেছেন একই দিনে। তারা দু দেশের মধ্যে কিভাবে আমদানি রফতানি বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে বিভিন্ন পয়েন্ট তুলে ধরেন কমিশনারের কাছে। তারাও যৌথ টাস্ক ফোর্স গঠনেরও জোর দাবি জানান। বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বাণিজ্যে স্থবিরতা দূর করা হবে। ভারতের কাস্টমস এর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে পেট্রাপোল বন্দরের সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে।
এদিকে, বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বাণিজ্য দ্রুতকরণ, রাজস্ব আদায়ে স্বচ্চতা ও দিনের রাজস্ব দিনে আদায়ের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিনিধি দল গত বুধবার বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার’র দফতরে কাস্টমস ও বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনের সাথে মত বিনিময় করেছেন। এসময় বক্তব্য রাখেন বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী, বিশ্ব ব্যাংকের কানসালটেন্ট ইভার পিটার সন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ফাস্ট সেক্রেটারি গিয়াস কামাল, বিশ্ব ব্যাংকের কো অরডিনেটর নুরসাদ নাহিদ, কাস্টমস এর অতিরিক্ত কমিশনার জাকির হোসেন, সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোশিয়েশন’র সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব শামসুর রহমান, খাইরুজ্জামান মধূ, মহসিন মিলন, মতিয়ার রহমান প্রমূখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ