মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম রওনক
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের চতুর্থ ধাপেও গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভোটে যথারীতি দখল, বর্জন, ব্যালট ছিনতাইও হয়েছে। অনেক ভোটকেন্দ্রে আগের রাতেই সিল মারার মহোৎসবও ছিল। ৭ মে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৭ জন। আহত হয়েছেন শতাধিক। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। দিনভর অস্ত্রের মহড়াও দেখা গেছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ছাত্রলীগের এক নেতাকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে আরো বলা হয়, বিভিন্ন স্থানে ভোট কর্মকর্তাসহ গ্রেফতার হয়েছেন অর্ধশত। ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের কারণে ৫১টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে। ভোটগ্রহণের পরেও বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জাল ভোটের প্রভাবও ছিল বেশ কিছু এলাকায়। প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে বের করে দিয়ে প্রকাশ্যে সিল মারার ঘটনাও ঘটেছে। বিএনপি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীর পাশাপাশি অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও ভোট বর্জন করেন। এদিকে সহিংসতা ও গোলযোগ কিছুটা কম হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলেছে আগের তুলনায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। বিএনপি বলেছে ৪র্থ ধাপেও ভোট জালিয়াতির মহোৎসব হয়েছে। এ সরকারের কাছ থেকে মানুষ নির্বাচন শব্দটা শুনতে চায় না।
চতুর্থ ধাপের দখল, বর্জন আর গুলির ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিশাল জয় পেয়েছে। তবে এই জয় কতটা প্রকৃত জয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ৮ মে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় মুদ্রিত একটি খবরের শিরোনাম ছিল ‘বাইরে ফাঁকা ভিতরে বাক্স ভর্তি’। খবরটিতে বলা হয়, লালমনিরহাটের সদর আদিতমারী উপজেলার ১৬ ইউনিয়নে ৭ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোট শুরুর পর সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এই সময় আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, বেলা ১টা পর্যন্ত মাঠে ২০০-এর বেশি ভোটার আসেননি। কিন্তু ভোটের বাক্স ভর্তি হয়ে গেছে। সেখানে কোনো বুথে বিএনপির এজেন্টকে দেখা যায়নি। প্রিজাইডিং অফিসার জসিমউদ্দিন বলেন, ৭৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। কীভাবে বৃষ্টির মাঝে এত ভোট পড়লো জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি। এজেন্টের ব্যাপারে তিনি বলেন, না এলে আমরা কী করবো? বিএনপি প্রার্থী নূরুজ্জামান আহমেদ জানান, তার এজেন্টদের বের করে দেয় হয়েছে। আর দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কাজ আইনশৃঙ্খলা দেখার, ভিতরের পরিবেশ নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের খোড়াগাছ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৭৯৩। দেখা যায় বেলা ১১টার মধ্যে ৬০০ ভোট পড়ে গেছে। এখানে ভোট দিতে এসে নিজের ভোট দিতে পারেননি বিএনপির কর্মী আহাদুল। প্রিজাইডিং অফিসার তাকে জানান, ব্যালট শেষ হয়ে গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, লালমনিরহাটের সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসাররা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মুষলধারে বৃষ্টির সময় সরকার দলের ক্যাডাররা ব্যালট নিয়ে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে চলে যায়।
নির্বাচনের এমন চিত্র ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কালিমালিপ্ত করেছে। এমন নির্বাচন জনগণের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করেছে। দখল, বর্জন আর গুলির ইউপি নির্বাচনে বিজয়ের বিষয়টি এখন আর তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এমন ধারার নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়েছেন তারা এলাকা ও মানুষের কল্যাণে কতটা কাজ করবেন তা এক বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোটের আগে বলা হয়েছিল, ইউপি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হবে। তবে এমন নির্বাচনে তৃণমূল পর্যন্ত গণতন্ত্র পৌঁছুতে পারেনি। বরং গুলি, হামলা ও জাল ভোটের দৌরাত্ম্য লক্ষ্য করা গেছে। তাই এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন জাতির কাছে এক প্রশ্নবোধক বিষয় হয়ে উঠেছে। কালিমালিপ্ত এই নির্বাচনে নির্বাচিতদের নিয়ে আমরা কী করব? এই নির্বাচনী কালিমা দূরীকরণে সংশ্লিষ্টরা আগামীতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
ষ লেখক : কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, এলডিপি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।