Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরীক্ষায় ফেল করে আত্মহত্যা নয়

প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এহসান বিন মুজাহির
গত ১১ মে ২০১৬ সালের এসএসসি ও সমমাননা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে সারাদেশে এপর্যন্ত ১১জন ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন বলে জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন অনলাইনপোর্টাল থেকে খবর পাওয়া গেছে। এভাবে প্রতিদিন পত্রিকার পাতায়, অনলাইন মিডিয়ায় আত্মহত্যার সংবাদ আমরা পাচ্ছি। অনেক আত্মহত্যার খবর আবার অগোচরেই রয়ে যায়। পরীক্ষায় এ প্লাস না পেয়ে আত্মহত্যার খবর এখন সর্বত্র আলোচিত! সম্প্রতি এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু মানুষের জীবন এতোটা অর্থহীন নয় যে, আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিতে হবে। মার্কিন লেখক এডওয়ার্ড ডালবার্গ বলেছেন, ‘যখন কেউ উপলব্ধি করে যে, তার জীবনের কোনো মূল্য নেই, তখন সে আত্মহত্যা করে।’
‘এ প্লাস’ প্রাপ্তরাই কেবল মেধাবী এমন চিন্তাটি সঠিক নয়! এ প্লাস না পেলে মেধাবী নয়- সমাজের এমন একচোখা দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই গোগ্রাসে গিলে উগড়ে দিচ্ছে পরীক্ষার খাতায়। যার ফলাফলস্বরূপ ‘এ প্লাস’ অনেকেই পাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পরিপূর্ণ মেধাবী হয়ে উঠতে পারছে না। দুটি সার্টিফিকেটে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার জন্য দৌড়াতে গিয়ে ছিটকে পড়ছে জীবনের মূল লক্ষ্য থেকে। দুটি ছাপানো কাগজ যে শিক্ষার্থীদের ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিতে পারে না একথাটি শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বুঝতে আর কত সময় লাগবে!
পরীক্ষায় সর্বোচ্চ পয়েন্ট জিপিএ-৫ বা এ প্লাস পাওয়ার প্রত্যাশা থাকে সব শিক্ষার্থীর। সেই প্রত্যাশা পূরণের প্রচেষ্টায় সর্বোচ্চ প্রয়াসও তারা চালিয়ে যান। সবার ভাগ্যে জিপিএ-৫ না জুটলেও কারো কারো ভাগ্যে জুটে। আসলে সবই তাকদির। করুণাময় আল্লাহ তায়ালা সাহায্য না থাকলে হাজারো চেষ্ঠা করে কেউ ‘এ প্লাস’ অর্জন করতে পারে না। পরীক্ষা শেষে সবাই ফল পাওয়ায় অধীর প্রতীক্ষায় থাকে। ফল পাওয়ার আগ পর্যন্ত স্কুলের সেরা মেধাবী ছাত্রদের মাঝেও অজানা একটা টেনশন থাকে। ফল প্রকাশের পর টেনশন-অস্বস্তি দূরিভূত হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মেধা যাচাই করা যায়। পরীক্ষা কাউকে সম্মানিত আবার কাউকে অসম্মানিত করে। পরীক্ষায় এপ্লসপ্রাপ্ত কৃতি ও কৃতকার্য ছাত্রছাত্রীরা আরও ভালো কিছু অর্জনের প্রয়াসে ব্যস্ত সময় কাটায়। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা ফেল করার অপমানে খারাপ পথ বেছে নেয়। কেউ গলায় দড়ি লাগিয়ে, কেউ বা বিষপানে আত্মহত্যা করে! এসএসসি পরীক্ষায় অংক ও ইংরেজিতে ফেল করায় গত শনিবার (১৪ মে) মৌলভীবাজার শহরের ফিউচার ব্রাইট স্কুলের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম ডানা নামের এক ছাত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেন। পিরোজপুরের নাজিরপুরে এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করে দিপা আক্তার নামের এক পরীক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। চট্রগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার শরাফতউল্লাহ পেট্রোল পাম্প এলাকায় বুধবার দুপুরে এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় সুপ্রিয়া ধর (১৬) নামে এক ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। বরিশাল নগরীর উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সর্বজিত ঘোষ হৃদয় বুধবার (১১ মে) ফলাফল জানার এক ঘণ্টার মাথায় নগরীর বহুতল একটি ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে।
হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভার নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষ্ণ দেবনাথের মেয়ে লিপি দেবনাথ প্রেমদাময়ী ঘরের ফ্যানের সাথে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় রেনু বালা দাস (১৬) নামে এক শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে টঙ্গীবাড়ীতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে সুমাইয়া নামের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। পরীক্ষায় ফেল করায় ক্ষোভে সবার চোখের আড়ালে গলায় ফাঁসি দিয়েছে শ্রীপুর উপজেলার শিমলাপাড়া গ্রামে জসিম উদ্দিন (১৬)। এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ হওয়ায় খুলনার পাইকগাছায় শান্তি বিশ্বাস (১৭) নামে এক ছাত্রী গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এসএসসি পরীক্ষায় পাস করতে না পেরে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলায় শাপলা আক্তার (১৬) নামের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
আত্ম্যহত্যা বা স্বেচ্ছা মৃত্যু কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। একজন শিক্ষার্থী, যে কেবল জীবনের চৌকাঠে পা রেখেছে, কিন্তু ফেল করার অপমানে তারা দরজা থেকেই ফেরত যেতে হয়, কেন তাদেরকে আমরা ফুলেল ডালা নিয়ে বরণ করতে পারি না, কেন তাকে আমরা নিঃস্ব হাতে ফেরত পাঠাই, কেন বেছে নিতে বলি স্বেচ্ছামৃত্যুর মতো করুণ উপসংহারকে!
আত্মহত্যা সমাজে ঘৃণিত-নিন্দীত কাজ। ইসলামের দৃষ্টিতেও বড় গোনাহ আত্মহত্যা। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা আত্মহত্যাকে হারাম করেছেন এবং আত্মহত্যাকারীর ভয়াবহ পরিণামের কথা জানিয়েছেন। ইসলামে আত্মহত্যা হলো মহাপাপ। আল্লাহ মানুষকে মরণশীল করে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই মৃত্যু ঘটান। কিন্তু আত্মহত্যার ক্ষেত্রে বান্দা স্বাভাবিক মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মৃত্যুকে নিজের হাতে নিয়ে নিজেই নিজেকে হত্যা করে ফেলে। এ কারণে এটি একটি গর্হিত কাজ। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা আত্মহত্যা কর না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল।’ (সুরা নিসা : ২৯) আল্লাহপাক আরও এরশাদ করেন- ‘তোমরা তোমাদের নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ কর না। (সুরা বাকারা : ১৯৫ আয়াত)
হজর আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে আত্মহত্যা করতেই থাকবে এবং এটিই হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সর্বক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢুকাতে থাকবে, আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
ষ লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরীক্ষায় ফেল করে আত্মহত্যা নয়
আরও পড়ুন