বেগম খালেদা জিয়ার সাথে নিষ্ঠুর বর্বরতম আচরণের অবসান ঘটাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনাকে
বিএনপির পক্ষ থেকে বলবো-তিন বার সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শুধু প্রতিহিংসাবশত: এমন নিষ্ঠুর বর্বরতম আচরণের অবসান ঘটান। তাঁকে মুক্তি দিন। জামিনে আর বাধা দিবেন না। ঔপনিবেশিক আমলেও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের রাজবন্দীর প্রতি এমন অমানবিক আচরণ করা হয়নি। অবৈধ ক্ষমতা দখলে রাখতে গিয়ে সভ্যতা-ভদ্রতা-ন্যায়নীতি-মানবতা আর বিসর্জন দিবেন না। ক্ষমতা মানুষের জীবনে স্থায়ী নয়। সময় অসময় হতে সময় নেয়না! আপনাদের ক্ষমতার দম্ভ চিরদিন থাকবে না। সোমবার (৪ মার্চ) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা নিতে দেয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে রিজভী বলেন, বেগম জিয়া বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেতে চাননি, শুধু চেয়েছেন বাংলাদেশে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা নিতে। অথচ সেই সুযোগটুকুও তাঁকে দেয়া হয়নি। লোক দেখানোর জন্য তাঁকে ক'দিন পিজি হাসপাতালে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন করে প্রচন্ড অসুস্থ বেগম জিয়াকে সুস্থ বলে ফেরত পাঠিয়েছে অন্ধকার কারাগারে। অথচ আমরা প্রতিদিন নানাভাবে আহবান এবং দাবি করে আসছি-দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর পছন্দমতো বিশেষায়িত হাসপাতালে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তাঁকে জামিনে মুক্তি দিন। তাঁকে জেলে নেয়ার পর থেকে তিনি প্রচন্ড অসুস্থ। দেশবাসী জানেন তিনি হাঁটতে পারছেন না। পা ফুলে গেছে। হাত অবশ। পুরনো রোগগুলো বেড়ে গেছে। চোখেও প্রচন্ড ব্যথা। নির্যাতন সহ্য করতে গিয়ে তাঁর পূর্বের অসুস্থতা এখন আরও গুরুতর রূপ ধারণ করেছে। সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিসের জন্য কাঁধে প্রচন্ড ব্যথা, হিপ-জয়েন্টেও ব্যথার মাত্রা প্রচন্ড। ঝুঁকিপূর্ণ শরীর। প্রতি মুহুর্তে আমরা তাঁকে নিয়ে আশংকায় থাকি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতার কথা তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। আজ আমাদের হৃদয় বিদীর্ণ হচ্ছে কষ্টে। অবর্ননীয় কষ্টে আছেন ‘গণতন্ত্রের মা’। অবৈধ ক্ষমতার মদমত্ততায় বিনা চিকিৎসায় বেগম জিয়াকে পরিত্যক্ত কারাগারের পর্যাপ্ত আলো-বাতাসহীন স্যাঁতসেতে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী করে রাখা হয়েছে। ঘৃন্য ও হিংস্র মিডনাইট মহাভোট কারচুপির সরকার শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য সত্তরোর্ধ একজন প্রৌঢ় মহীয়সী নারী, যিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য আজীবন লড়ে যাচ্ছেন, তাঁকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় কারাগারে ফেলে রেখে চরমতম মানসিক ও শারীরিক শাস্তি দিচ্ছে।
তিনি বলেন, গতকাল রোববার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারের অস্থায়ী আদালতে এসে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। খুবই অসুস্থ আমি। চিকিৎসকরা দরকারী চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না। মাত্র একবার এসে চিকিৎসকরা দেখে গেছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রক্ত নেয়া হয়নি। ডায়বেটিসের রোগী হিসেবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। থেরাপি ঠিকমতো দেয়া হচ্ছে না। আমি সত্যিই অসুস্থ। দেশবাসীর প্রাণপ্রিয় নেত্রী নিজের মুখে এই প্রথম এমন ভয়াবহ অসুস্থতার কথা বললেন। তাঁর স্বাস্থ্যের চরম ক্রমঅবনতিতে দেশবাসির মতো আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। এক পয়সাও তসরুপ না হলেও দুই কোটি টাকার সাজানো মিথ্যা মামলায় এক বছরের বেশী সময় ধরে কারাগারে বন্দী রেখে আর কত প্রতিহিংসার জ্বালা মেটানো হবে ?
ভোট ডাকতির নির্বাচনে তথাকথিত নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাও মাঝে মাঝে গণতান্ত্রিক পরিবেশের কথা বলে ফেলেন মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, তাদের মধ্যে মহাজোটের শরীকের কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলছেন ‘নির্বাচনী ব্যবস্থাকে যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশে এখন গণতান্ত্রিক কোন স্পেস নেই, গণতান্ত্রিক স্পেস তৈরী করতে হবে। আগের রাতে ভোট দেয়ায়, প্রার্থীদের বাধা দেয়ায়, মনোনয়ন পত্র ছিঁড়ে ফেলায়, উর্দ্ধ মহলের ক্লিয়ারেন্স আছে কি না প্রার্থীদের নিকট এমন প্রশ্নও করেছে পুলিশ, টাকা ছড়ানো হচ্ছে-এই হলো বর্তমান ভোটের অবস্থা, ভোটের প্রতি এখন মানুষের কোন আগ্রহই নেই।
তিনি বলেন, এই বক্তব্যগুলো বিএনপি বা জোটের কোন নেতার বক্তব্য নয়, এই বক্তব্য গতকাল জাতীয় সংসদের আওয়ামী জোটের একজন বড় নেতার বক্তব্য। এখন প্রধানমন্ত্রী কি বলবেন ? আমরা বারবার যে বলেছি-দু:শাসনের কুয়াশা এসে ঢেকে দিয়েছে জনগণের শাসনকে-সেটি কি মিথ্যে ? এখন আপনাদের ভেতর থেকেই কেউ কেউ বিবেকের তাড়নায় আসল সত্যটি প্রকাশ করে ফেলছেন। আপনি বন্দুকের শাসনে সমগ্র বাংলাদেশকে হতভাগাদের বসতি বানিয়েছেন। আপনার মতো নির্বাচনের স্টাইলগুলোকে এখন আন্তর্জাতিকভাবে বলা হচ্ছে-‘নির্বাচনী কর্তৃত্ববাদ’। অর্থাৎ জনগণকে ভোটাধিকারহীন, ত্যাজ্য ও বঞ্চিত করে যে নির্বাচন হয়, সেটিই নির্বাচনী কর্তৃত্ববাদ। আপনার সজ্ঞায়িত গণতন্ত্রের প্রধান উপাদান এই নির্বাচনী কর্তৃত্ববাদকে আপনি সুচারুভাবে দেশে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে আপনার এই নির্বাচনী স্টাইল দেশে ও বিদেশে প্রত্যাখাত হয়েছে। কর্তৃত্ববাদী দু:শাসন আর বেশীদিন স্থায়ী হবে না। ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণ অচিরেই সকল অপকর্মের উপযুক্ত জবাব দেবেই। তাদের অধিকার তারা পূণ:রুদ্ধার করবেই।
বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এর কন্যা ও ফরিদপুর জেলা বিএনপি’র সদস্য নায়াব ইউসুফ গতকাল আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিএনপি’র একজন মহিলা নেত্রীকে এভাবে মিথ্যা ও রাজনৈতিক হিংসা চরিতার্থের মামলায় কারান্তরীণ করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা এবং নায়াব ইউসুফ এর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অসত্য মামলা প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে তার নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করেন রিজভী।