Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্যোগে শুঁটকির সর্বনাশ

খুলনা ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ফাল্গুনের আকস্মিক দুর্যোগে দুবলার চরের শুটকি পল্লীতে সর্বনাশার বান ডেকেছে। দেশের প্রধান শুঁটকি উৎপাদন ক্ষেত্র বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের দুবলার চর শুঁটকি পল্লী। প্রতিবছর এই পল্লী থেকে ২০০ কোটি টাকার বেশি শুঁটকি উৎপাদন হয়। শুধু তাই নয় শুঁটকির বর্জ্য থেকেও সোয়া তিন কোটি টাকার উপরে আয় করেন জেলেরা।
সাগরে মাছ আহরণের পর জেলেরা সেগুলো দুবলার চরে নিয়ে আসে। তখন মাছ বাছাইয়ের সময় অনেক সামুদ্রিক প্রাণি বাদ পড়ে যা শুঁটকি হিসেবে বিক্রি করা যায় না। জেলেরা সেগুলোকে রাবিশ (বর্জ্য) বলে। যেমন- ছোট ছোট কাকড়া, কামট, অক্টোপাস, পোটকা, দোয়াত কলম, টেপা, মূল্যে মাছ ও চিংড়ির মাথা উল্লেখযোগ্য।

কিন্তু সম্প্রতি গত কয়েক দিন যাবত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বৈরী আবহাওয়া ও ঝড়ে দুবলার চরের শুঁটকি পল্লীর সর্বনাশ হয়েছে। বৃষ্টিতে প্রায় অর্ধকোটি টাকা মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। শতাধিক জেলেঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। মৌসুমের শেষ মুহূর্তে এসে এমন বিপর্যয়ে চরম লোকসানে পড়েছেন শুঁটকি ব্যবসায়ী, বহদ্দার ও জেলেরা। পাশাপাশি সরকারি রাজস্বতেও ঘাটতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বনবিভাগ।
জানা গেছে, সুন্দরবনের মাঝে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় দুবলার চরসহ সাতটি চরে গত চার দশক ধরে গড়ে উঠেছে দুবলা শুঁটকিপল্লী। প্রতিবছর অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাস চালু থাকে শুঁটকি তৈরির এই মৌসুম। এরই মধ্যে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার ২০ হাজার জেলে ও ব্যবসায়ী দুবলা শুঁটকি-পল্লীতে সাগর থেকে ধরা মাছ দিয়ে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেছে। প্রতিবছর অক্টোবর মাস থেকে সুন্দরবনের দুবলার চরে ভিড় জমান জেলে ও শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। এরপর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা পাঁচ মাস মাছ আহরণ করে শুঁটকি বানাতে ব্যস্ত থাকেন তারা। ৩০ হাজার জেলে ও মৎস্যজীবীর খেয়ে-পরে বাঁচা-মরা নির্ভর করে এর মাধ্যমে।
দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল আহমেদ জানান, মেঘলা আবহাওয়ায় শুঁটকির মাচানে থাকা মাছে পচন ধরেছে। দুবলার চরের আলোরকোল, মেহেরআলীর চর, নারকেলবাড়িয়া, অফিস কিল্লা ও মাঝের কিল্লা শুঁটকি পল্লীর প্রায় ৫০ লাখ টাকার মাছ পঁচে গেছে। ঝড়ে শতাধিক জেলেদের থাকার ঘর এবং শুঁটকির গুদাম বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে প্রস্তুতকৃত অনেক শুঁটকিও ভিজে গেছে। এ অবস্থায় বহদ্দার-জেলেরা মারাত্মক লোকসানে পড়বে।

দুবলার চর ঘুরে দেখা যায়, পুরো চর জুড়ে রয়েছে জেলেদের ছোট ছোট ঘর, মাছ শুকানো মাচা, চাতাল এবং মাছ শুকানোর জন্য মাটিতে নেট বিছানো। সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ করে শুঁটকি প্রক্রিয়ার কাজে ব্যস্ত হাজার হাজার জেলে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের হিসাব মতে, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে দুবলার চরে শুধু ২০ হাজার ৬৩০ মণ বর্জ্য উৎপাদন হয়েছে। যেখান থেকে এক লাখ ৭৯ হাজার ৫০ টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ২২ হাজার ৩১২ মণ বর্জ্যে এক লাখ ৮১ হাজার ৬৮৫ টাকা এবং ১৭-১৮ অর্থ বছরে ২১ হাজার ৭৮০ মণ বর্জ্যে এক লাখ ৭৪ হাজার ২৫৬ টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। চলতি মৌসুমের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ২ হাজার ৯৩০ মণ বর্জ্যে ২৩ হাজার ৭৭৫ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে বন বিভাগ।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক ও শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, কয়েক দিন ধরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং ঝড়, বৃষ্টিতে শুটকি পল্লীর ব্যাপক ক্ষতি হয়। আবহাওয়ার বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে আরো ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে জেলে-মহাজনদের লোকসানের পাশাপাশি রাজস্বতেও ঘাটতি হবে।
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে ভ্যাটসহ ৪৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। সামনের মাসে ৫০ লাখ টাকার রাজস্ব টার্গেট ছিল। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা রাজস্ব কম হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ