Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনাঞ্চলে প্রাকৃতিক উৎসে পানির টান

আবু হেনা মুক্তি : | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

এশিয়ার ৯ম ঝুঁকিপূর্ণ উপক‚লীয় এলাকা খুলনায় পানি নিরাপত্তার জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এ অঞ্চলে ভ‚গর্ভস্থ পানির আধার (এ্যাকুয়াফার) ক্রমেই নিম্নমুখী । গ্রীষ্ম শুরু হওয়ার আগেই পানির এমন সঙ্কট, ফলে গ্রীষ্মের সময় এর ভয়াবহতা আরও বাড়তে পারে। এখনই টিউবওয়েলে পানি নেই। পুকুরে পানি নেই। ভ‚-গর্ভে পানি নেই। প্রাকৃতিক উৎসে পানির টান। এ যেন এক মহাবিপদের অশনি সংকেত। এছাড়া বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের জমিভুক্ত এবং সরকারের খাস খতিয়ানে থাকা কয়েক হাজার খাল সংস্কারের অভাবে এবং পলি পড়ে পানি সংরক্ষণের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খালগুলোর অধিকাংশই এখন প্রভাবশালীদের দখলে। অনেক খাস খাল ও জলাখাল এখন ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। কিছু কিছু খালের অস্তিত্ব বর্ষাকালে থাকলেও শীতকালে বা শুষ্ক মৌসুমে তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে পানি উৎস দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, গ্রীষ্ম শুরু হওয়ার আগেই এবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে পানি উঠছে না অধিকাংশ টিউবওয়েলে। তারা জানান, অনেকে প্রতিবেশীদের সাব মার্সেবল ও ওয়াসার লাইন থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। খুলনা মহানগরী ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শহরে ওয়াসা ও সাব মার্সেবল থেকে পানি পানের সুযোগ থাকলেও গ্রামে নলক‚পই মানুষের শেষ ভরসা।
গ্রামের অনেককেই পানযোগ্য এক কলসি পানির জন্য কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। তারপরই মিলছে কাঙ্খিত পানি। আর যারা ক্লান্ত শরীরে দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দিতে পারছেন না তাদের নগদ টাকার বিনিময়ে কিনতে হচ্ছে খাবার পানি। এভাবেই গ্রীষ্ম শুরু হওয়ার আগেই পানি সংগ্রহে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় খুলনা মহানগরীসহ আশপাশ অঞ্চলের জীবিকা-জীবন, কৃষি-অর্থনীতি, পরিবেশ-প্রতিবেশ নিদারুণ সঙ্কটে। খুলনা ওয়াসা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, গ্লোবাল ওয়াটার পার্টনারশীপ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, উপক‚লীয় অঞ্চল হিসেবে এখানে এক অর্থে অথৈ পানি-কিন্তু তারপরও পানির অভাব। অভাব সুপেয় পানির। কি ভূপৃষ্ঠে, কি ভূগর্ভে। পানি সঙ্কট এখানে জীবনের চ্যালেঞ্জ।
খুলনা মহানগরী এলাকায় এক দশক আগে ৮-১০ ফুটের মধ্যে ‘ওয়াটার টেবিল’ বা জলস্থিতির উপস্থিতি ছিল যা’ এখন ২০-২৫ ফুটে নেমে গেছে। একইভাবে একই সময়ের ব্যবধানে সুপেয় পানির আধার বা অ্যাকুয়াফার ৮০০ থেকে ৯০০ ফুট হতে ক্ষেত্রবিশেষে ১১০০ ফুটে নেমে গেছে।
এছাড়া বিকল্প উৎস হারিয়ে বৃহত্তর খুলনার বোরো ধান ও গমসহ শীতকালিন ফসল চাষে ভ‚-গর্ভস্ত পানির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। এ অঞ্চলের চাষাবাদ দিনে দিনে সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে ৩ হাজার কোটি ঘনফুটের ওপর ভ‚-গর্ভস্ত পানির ব্যবহার হচ্ছে। কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ এ সম্পর্কিত কোন বিশেষ প্রকল্প গত ১ যুগেও গ্রহণ করেনি। তাছাড়া পাউবো নদী ও খাল খননে গত ১০ বছরে তেমন কোন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। দু’ একটি প্রকল্প গৃহিত হলেও কাজের চেয়ে লুটপাট হয়েছে বেশি। নদী খননের ক্ষেত্রে দেখা গেছে দু’পাশের মাটি কোন রকম কেটে পাড় তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু নদী খনন হয়নি। চাল গম আর প্রজেক্টের অর্থ ব্যয় হয়েছে ঠিকই কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ ধরনের কর্মকান্ডের মধ্যে খুলনার নালুয়া নদী, ডুমুরিয়ার কপোতাক্ষ নদ, মাঙ্গা নদী, বটিয়াঘাটার ঝপঝপিয়া নদী অন্যতম।
এই বিষয়ে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, খুলনা মহানগরী এলাকায় প্রতি বছর বিপজ্জনকভাবে ৮ ইঞ্চি করে সুপেয় পানির ‘আধার’ নিম্নমুখী হচ্ছে। নিম্নমুখী এই ধারা উপক‚লীয় শহর খুলনার মানুষের জীবনপ্রবাহে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। ক্রমধাবমান এই নিম্নমুখী গতি রুখতে না পারলে জীবনদায়ী পানির উৎস অচিরেই বিলুপ্ত হতে পারে যা’ মানব সভ্যতার চরমতম বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত হবে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিগত এক দশকের ব্যবধানে খুলনাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভ‚-গর্ভস্ত পানির ব্যবহারে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে বলে পরিবেশবিদরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ