রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
কুষ্টিয়ায় বেড়েই চলছে তামাক চাষ। মাটির উর্বর শক্তি হ্রাস, স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়লেও কুষ্টিয়ায় তামাক চাষ অব্যাহত রয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করায় গত বছর আবাদ কিছুটা কমলেও চলতি বছর আবার বেড়েছে তামাক চাষ।
তারপরও এধারা অব্যাহত থাকলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চাষিরা জানান, উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এবং বিভিন্ন কোম্পানির দেয়া প্রনোদনার কারণে তারা তামাক চাষে ঝুঁকছেন।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় তামাক উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে দৌলতপুর, ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলায় উর্বর জমিতেই বেশি আবাদ হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, এ তিন উপজেলায় ধান, গম, আখ, পাট, তিল, ডাল, তেলসহ নানা জাতের খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। স্থানীয় চাহিদা পূরণের পরও উৎপাদিত ফসলের প্রায় অর্ধেক বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খাদ্যশস্য উৎপাদনের জমির পরিমাণ হ্রাস পেয়ে বেড়েছে তামাক চাষ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে জেলায় প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলায় বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটিবি), ঢাকা টোব্যাকো, আবুল খায়ের, জামিল গ্রুপ, নাসির গ্রুপসহ আরও বিভিন্ন কোম্পানি তামাকশিল্প গড়ে তুলছে। এসব শিল্পের কাচামালের সরবরাহ অক্ষুন্ন রাখতে চাষিদের মধ্যে সার, বীজ, কীটনাশকসহ নানা উপকরণ প্রণোদনা হিসেবে দেয়া হচ্ছে। ফলে কৃষি বিভাগ গম, মসুর, ছোলা, মটর, ভুট্টা, সরিষাসহ বিকল্প ফসল উৎপাদনে চাষিদের পরামর্শ দিলেও ফল তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। চাষিরা ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এবং অধিক মুনাফার আশায় তামাক চাষ অব্যাহত রেখেছেন।
মিরপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, উপজেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ২৪ হাজার ৩০ হেক্টর। এর মধ্যে চলতি বছর তামাক চাষ হয়েছে সাত হাজার হেক্টরে। আগে এসব জমিতে গম, মসুর, ছোলা, মটর, ভুট্টা, সরিষার আবাদ হত। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও আড়াই হাজার টন খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকত। কিন্তু তামাক চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।
এ কারণে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত ও বিকল্প লাভজনক ফসল আবাদে চাষিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। তারপরও কোম্পানিগুলোর নগদঅর্থ প্রদানসহ বিভিন্ন উপকরণ সহায়তা দেয়ায় তার আবাদ আশানুরূপভাবে কমেনি। তিনি আরও জানান, এ অঞ্চলের বাস্তবতা বিবেচনা করে বিকল্প ফসল উৎপাদনে সরকারিভাবে সার-বীজ, কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রণোদনা হিসেবে দিলে সাড়া পাওয়া যাবে। না হলে তামাক চাষ অব্যাহত থাকলে জেলায় প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মিরপুরের বারুইপাড়া ইউনিয়নের বলিদাপাড়া গ্রামের তামাক চাষি সাহাবুল বলেন, ‘তামাক চাষের জন্য কোম্পানিগুলো অগ্রিম ঋণে সার ও নগদ অর্থ দিয়ে থাকে এবং ক্রয়ের শতভাগ নিশ্চয়তা দেয়। তাই আমরা তামাক চাষ করি।
ভেড়ামারা উপজেলার সাতবাড়ীয়া গ্রামের মজিবর জানান, ধান, পাট, আখসহ, নানা জাতের সবজি চাষ করেও তার ন্যায্যমূল্য আমরা পাই না। অনেক সময় ধান উৎপাদনে ব্যয়ই আমরা তুলতে পারি না। ফলে নগদ অর্থ ও পারিবারিক ব্যয় নির্বাহে তামাক উৎপাদনে বাধ্য হচ্ছি।
দৌলতপুর উপজেলার আমির হোসেন মালিথা জানান, তিনি চলতি বছর ১৫ বিঘায় তামাক চাষ করেছেন। ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ১৫ বিঘায় চার টন তামাক পাওয়া যাবে। প্রতি টনের গড় মূল্য ৮০ হাজার টাকা হিসেবে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে।
কুষ্টিয়া কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা যায়, সা¤প্রতিক সময়ে জেলার মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর উপজেলায় তামাক আবাদ বেড়েছে। চলতি বছর আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার হেক্টর। গত বছর হয়েছিল ১৪ হাজার হেক্টর। এবং তার আগের বছর তামাকের চাষ হয়েছিল ১৬ হাজার ৭৭৫ হেক্টর।
কুষ্টিয়া কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিভুতিভুষণ সরকার বলেন, ‘তামাক উৎপাদনে সময় লাগে ছয় মাস। অথচ একই মৌসুমে সমপরিমাণ জমিতে তিন মাসের ফসল হিসেবে গম, মসুর, ছোলা, মটর, ভুট্টা, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করে দ্বিগুণ আয় করা সম্ভব। তামাক চাষ বন্ধে আইন প্রয়োগের ক্ষমতা আমাদের নেই। চাষিদের নিরুৎসাহিত করতে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা সচেতন হলে অবস্থার উন্নতি ঘটতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. রওশনারা বেগম জানান, তামাকের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। তামাক চাষ ও সেবন কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ মানবদেহের স্পর্শকাতর অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি করে। জেলায় এবারও বিপদজনক মাত্রায় তামাক আবাদ হয়েছে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।