Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৫ বছরেও হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি

সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলন

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালে আন্দোলনে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারসহ আরও অনেকে। দীর্ঘ প্রচেস্টার পর ২০০০ সালে বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা হিসেবে পালন করা হচ্ছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের অনেক দেশেই এখন চর্চা হয় বাংলা ভাষার। ২০১৪ সালে দেশের সব সাইনবোর্ড, নেমপ্লেট, গাড়ির নম্বর প্লেট, বিলবোর্ড এবং ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার বিজ্ঞাপন বাংলায় লেখা ও প্রচলনের নির্দেশ দেন হাইকোট। একই সঙ্গে বাংলা ভাষা ব্যবহারের নিয়ে রুলও জারি করেন। যা এখনো নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। এদিকে উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা এখনও উপেক্ষিত। কয়েকজন বিচারপতি ব্যক্তিগত আগ্রহে বাংলায় রায় দিলেও এর সংখ্যা খুবই কম। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদালতে রায় বাংলা দেয়ার জন্য বিচারপতিদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
আইনজ্ঞরা জানিয়েছে, সর্বোচ্চ আদালতেও বাংলা ভাষার ব্যবহার সময়ের দাবি। বাংলা ভাষায় উচ্চ আদালতের রায় হলে বিচারপ্রার্থীদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। তাদের মতে, ফুলকোর্ট সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একই সঙ্গে হাইকোর্ট আপিল বিভাগের রুলসও পরিবর্তন করার করতে হবে। অন্যথায় উচ্চ আদালতে সর্বত্র বাংলা চালু হওয়া কঠিন।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩-এ বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। আর অনুচ্ছেদ ২৩-এ বলা আছে, রাষ্ট্র জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং জাতীয় ভাষা, সাহিত্য ও শিল্পকলাসমূহের এমন পরিপোষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, যাহাতে সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখবার ও অংশগ্রহণ করবার সুযোগ লাভ করতে পারেন। ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ বাংলা ভাষা প্রচলন আইনও প্রণয়ন করা হয়।
সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টে রিট করেন একজন আইনজীব। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ দূতাবাস ও বিদেশী প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের সব সাইনবোর্ড, নেমপ্লেট, গাড়ির নম্বর প্লেট, বিলবোর্ড এবং ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার বিজ্ঞাপন বাংলায় লেখা ও প্রচলনের নির্দেশ দেন। এছাড়া বাংলা ভাষা প্রচলন আইন ১৯৮৭ অনুযায়ী অফিস-আদালত,গণমাধ্যমসহ সর্বত্র বাংলা ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
গত বছর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আদালতের সব কাজে বাংলার প্রচলনের উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি ও বর্তমানের আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, উচ্চ আদালতের সর্বক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার চালু করা উচিত। প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারপতিদের মানসিকতা থাকলে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এর আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছিলেন, যদি এমন কোন সফটওয়্যার পাওয়া যায়, যাতে বাংলা মুখে বললে এটি সঙ্গে সঙ্গে টাইপ হয়ে যায় তাহলে বাংলায় রায় দেয়া সুবিধা হবে। অবশ্য এখন এ সফটওয়্যার রয়েছে। অনেকে মোবাইল ফোনে তা ব্যবহারও করছেন।
আদালতে বাংলা ভাষা চালু নিয়ে রিটকারী আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ ইনকিলাবকে বলেন, উচ্চ আদালতে বাংলার প্রচলনের জন্য প্রধান বিচারপতিকে উদ্যোগ নিতে হবে। ফুলকোর্ট সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একই সঙ্গে হাইকোর্ট আপিল বিভাগের রুলসও পরিবর্তন করার করতে হবে। অন্যথায় উচ্চ আদালতে সর্বত্র বাংলা চালু হওয়া কঠিন। তিনি আরো বলেন, আদালত রুল দিয়েছেন ২০১৪ সালে। এখনো তো কোন বাস্তবায়ন হয়নি। উচ্চ আদালতে বাংলা মামলা লিখে নিয়ে গেলে বিচারপতিরাও এ নিতে চান না। একই সঙ্গে অন্যান্য আইনজীবীরা এ নিয়ে হাসিহাসি করেন। মনে হয় সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ইংরেজি জানেন না। কিভাবে বাংলা উচ্চ আদালতে চালু করা সম্ভব বলেন। সবগুলো হতে একটু সময় লাগবে বলে মনে করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। এ বিষয়ে আরও বেশি উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানান তিনি।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়, কয়েকজন বিচারপতি ব্যক্তিগত আগ্রহে বাংলায় মাঝে মধ্যে রায় দিলেও এর সংখ্যা খুবই কম। স¤প্রতি নদী দখল নিয়ে হাইকোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন। আর এর পুরোটাই দেয়া হয়েছে বাংলায়। পর্যায়ক্রমে সব কোর্টেই বাংলায় রায় হবে এমনটা প্রত্যাশা বিচারপ্রার্থীসহ সব মহলের। সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও এ বি এম খায়রুল হক ছাড়াও হাইকোর্টের কয়েকজন বিচারক বিভিন্ন মামলার রায় দিয়েছেন বাংলা ভাষায়। এ বি এম খায়রুল হক বিচারপতি হিসেবে হাইকোর্টে থাকার সময় মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত স্থানসহ স্থাপনা সংরক্ষণ, স্বাধীনতার ঘোষক, ঢাকার চার নদী রক্ষাসহ প্রায় দেড়শ› উল্লেখযোগ্য মামলার রায় বাংলায় দেন। হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল বাংলা ভাষায় রায় লিখেন। বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে যৌথভাবে বিচারকাজে নিয়োজিত আছেন। ওই বেঞ্চের সিনয়র বিচারপতি ইংরেজিতে রায় ও আদেশ দিলেও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন তার লিখিত রায় ও আদেশ বাংলায় লেখেন। বাংলায় লেখা তার উল্লেখযোগ্য রায়ের মধ্যে রয়েছে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা, এমভি নাছরিন-২ লঞ্চডুবি ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও সাজা, অর্থঋণ আদালত, হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের মামলা। এর আগে তিনি ২০১৩ সাল থেকে প্রায় এক বছর হাইকোর্টের একক দেওয়ানি মোশন বেঞ্চেরও দায়িত্বে ছিলেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাইকোর্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ