রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
এক কালের প্রমত্তা পদ্মার প্রধান শাখা নদী গড়াইয়ের বুক জুড়ে জেগে উঠেছে শুধু চর আর চর। পানি না থাকায় গড়াই নদীর মাঝে ধু ধু করছে বালু। ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে পদ্মা-গড়াই হারিয়েছে তার যৌবন। নদী এলাকায় দেখা দিয়েছে মরুময়তা। নলকুপগুলোতে পানি না ওঠায় খাবার পানির চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দেশের উপকূলভাগের মিঠাপানির অন্যতম আধার গড়াই নদী। সুন্দরবনে মিঠাপানির চাহিদার বড় অংশ মিটায় গড়াই। তবে দুই দফায় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে খনন কাজ করেও দীর্ঘমেয়াদি কোনো ফল পাওয়া যায়নি। নদীর বর্তমান চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে খনন কাজ হয়েছে। গড়াই নদীর খনন কাজে ব্যাপক দুর্নীতি হওয়ায় নদী খনন হয়েছে নামমাত্র। তাই পলি পড়ে প্রবাহ বন্ধ হয়ে গড়াই নদীতে চর জেগেছে। এদিকে বারবার খননেও কাক্সিক্ষত ফল না পাওয়ায় নদীপাড়ের মানুষের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে। এ অবস্থায় তৃতীয় দফায় সুন্দরবন রক্ষায় ৫৯০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে কাজ শুরু হবে। ৪ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে ৩৭ কিলোমিটার নদী খনন ও ৭ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ করা হবে।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, দেশের উপকূলভাগে মিঠাপানির সরবরাহ নিশ্চিত করা ও সুন্দরবনসহ ওই এলাকার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গড়াই খনন প্রকল্প নেওয়া হয় ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর। এতে ব্যয় হয় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এরপর ২০০৯ সালের পর আবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর ফের দ্বিতীয় দফায় গড়াই খনন প্রকল্পে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পটি বছর খানেক আগে শেষ হয়। এরপরও পানি উন্নয়ন বোর্ড দেশীয় অর্থায়নে মেইনটেনেন্স চালিয়ে নদীকে সচল রাখার চেষ্টা করছে। তবে খননে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপরিকল্পিত হওয়ায় এ নিয়ে বিগত সময়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। একাধিক তদন্ত টিমও গঠন করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, সঠিক গবেষণা, অপরিকল্পিত ড্রেজিং কাজ বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে গড়াই খননে সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। অথচ সুন্দরবনকে রক্ষা ও নোনাপানির আগ্রাসন রুখতে সারা বছর মিঠাপানির প্রবাহ সচল রাখতে প্রকল্পটি নেওয়া হলেও দৃশ্যত তেমন ফল মিলছে না বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। আগের তুলনায় শুষ্ক মৌসুমে মিঠাপানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত কয়েক বছরে খুলনা, যশোরসহ কয়েকটি জেলায় নদী অববাহিকায় স্যালাইনিটি (লবণাক্ততা) বেড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুমে গড়াই নদীর দুই কূল পানিতে উপচে পড়লেও শুষ্ক মৌসুমে নদীর চেহারা একেবারেই ভিন্ন। খনন কাজ চলার পরও শুষ্ক মৌসুম এলে দেখা যায় পানি শুকিয়ে প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে নদীর অবস্থা একেবারেই করুণ। নদীর বড় বাজার ঘোড়াই ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। স্রোতের প্রবাহ নেই। এখানে মানুষ হেঁটেই নদী পার হচ্ছে। সাইকেল চালিয়েও নদী পার হচ্ছে অনেকে। খাদে সামান্য পানি জমে আছে। সেখানে গোসলসহ কাপড় ধোয়ার কাজ করছে লোকজন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘খননের পরও নদীতে পানি নেই। জায়গায় জায়গায় কিছু পানি জমে আছে। চর পড়ে শুকিয়ে গেছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘পানির খুব সমস্যা। নদী পাড়ে যারা বসবাস করে তারা বেশি সমস্যায় ভুগছে। চাপকলে পানি ওঠে না। আবার নদীতেও পানি নেই। যা আছে তাতে গন্ধ।’
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পীযুষ কৃষ্ণ কুন্ডু বলেন, ৫ শ’ ৯০ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হলে এ বছরই শুরু হবে। এবার প্রকল্পে স্বচ্ছতার বিষয়ে জোর দেয়া হবে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, গড়াই কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলার লাইফ লাইন। এটি সচল রাখতে সরকার ৫৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। অচিরেই খনন কাজ শুরু হবে।
পরিবেশ ও নদী গবেষক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, ‘সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় গড়াই খননে শত শত কোটি টাকা খরচ করেও তেমন সুফল মিলছে না। বালু খনন করে যদি নদী পাড়েই রাখা হয় তাহলে সমস্যা দূর হবে না। বালু সরিয়ে নিতে হবে। গড়াই আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নদী। গড়াই না বাঁচলে এ অঞ্চল থেকে অনেক মাছ ও জলজ প্রাণী হারিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে অনেক পাখি ও মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে সুন্দরবন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।