Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে সোভা স্কুল

দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে মো. গোলাম ফারুক | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৯, ১২:১১ এএম

দুপচাঁচিয়া উপজেলা সোভা অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি প্রতিবন্ধীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে।
উপজেলা সদরের মাস্টারপাড়া বন বিভাগ সংলগ্ন এলাকায় ২০১২ সালে সোভা অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। কেউ হাঁটতে পারে, কেউ পারে না। আবার কেউ খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটে, কারো হাত বাঁকা, কারো পা বাঁকা আবার কেউ ঠিক মতো কথাও বলতে পারে না। এসবের পরেও আরো কয়েকজন আছে যারা মা বাবার কোলে আসা যাওয়া করে। এমনি সব শারীরিক অঙ্গের আঙ্গিগতা না থাকা প্রতিবন্ধীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে বিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে।

সরেজমিনে মাস্টারপাড়া বন বিভাগ সংলগ্ন বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা গেছে, ৩টি শ্রেণী কক্ষে এসব প্রতিবন্ধীদের নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে পাঠদান চলছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শুধু পড়াশুনায় নয়, লেখাপড়ার পাশাপশি তাদের সাধ্যমত শরীরচর্চা ও বিনোদনমূলক ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মমতাজ মহল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, প্রতিদিন সকাল ১০ টা হতে দুপুর ২ টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে পাঠদান করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে মোট ১১০ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। মোট ১৩ জন শিক্ষক ও ৬ জন কর্মচারীর নিরলস প্রচেষ্ঠায় এই সব প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা শিক্ষিত হচ্ছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বহনের জন্য চালক সহ ২টি ভ্যান রয়েছে। দিন দিন এ বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছেই। বেসরকারি সংস্থা সোভার কার্যালয়ে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম পরিচালনা করতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি আনোয়ার-উল-আজাদ লিটন জানান, স্থায়ী ভাবে বিদ্যালয়টি স্থাপনের জন্য জায়গা ক্রয় করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এ্যাড. নুরুল ইসলাম তালুকদার সরকারি ভাবে জায়গাটির উপর দ্বিতল একটি ভবন নির্মাণ করার আশ্বাস দিয়েছেন। যার প্রক্রিয়াও চলছে। তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়টিতে শুধু দুপচাঁচিয়া উপজেলা নয়, পার্শ্ববর্তী কাহালু উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করছে। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কয়েক জন শিক্ষার্থীর মা জানান, তাদের ছেলে-মেয়েরা এ বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় স্পষ্ট কথা ও চলাফেরা করতে পারতো না। এখন তারা স্পষ্টভাবে কথা বলতে ও আগের চেয়ে ভালো চলাফেরা করতে পারছে। প্রাথমিক অবস্থায় তারা কিছুই বুঝত না এবং লিখতেও পারত না। এখন তারা ইশারায় বলতে ও হাতে লিখতে পারে। বিদ্যালয়ে স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে শিক্ষকরা এই সব শিক্ষার্থীদের পাঠদানের মাধ্যমে তাদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। বিদালয়টির পরিচালনা কমিটির সদস্য সাবেক সহকারী অধ্যাপক আবুল বাশার জানান, শারীরিক অঙ্গের আঙ্গিকতা না থাকলেও এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার যে ইচ্ছা শক্তি তিনি দেখেছেন তাতে তিনি আশা করেন এই সব প্রতিবন্ধীরা অবশ্যই শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে। সোভা অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির অপর সহ-সভাপতি অ্যাড. উৎপল কুমার বাগচি (এপিপি) জানান, সরকারি উদ্যোগে এ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ ও আবাসিক এর ব্যবস্থা করতে পারলে এক দিকে যেমন শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে, তেমনি অত্র উপজেলার এ বিদ্যালয়টিতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। একই সাথে তিনি জানান, প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা না হয়ে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আর দশ জন সাধারন মানুষের মতো সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে। তিনি এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টিও কামনা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ