Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মানুষ পুড়ে মরে সিটি করপোরেশন কী করে?

শুনানিকালে হাইকোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আগুনের ঘটনাকে অনাকাঙিক্ষত উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেছেন,এটাকে দুর্ঘটনা বলা যাবে না, এটা অবহেলা। এর দায় কাউকে না কাউকে নিতে হবে। একজন দায়িত্বশীল আরেকজনের ওপরে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন, এটা ঠিক না। আগুনে মানুষ পুড়ে মরে তাহলে সিটি করপোরেশন কী করে? শুধু আন্তরিক হলে হবে না। আদালত আরো বলেন, সিটি করপোরেশন দেখেও না দেখার ভান করে। যারা রাস্তায় মারা গেল তাদের কী দোষ? গতকাল সোমবার পৃথক তিনটি রিট আবেদনের শুনানিকালে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালতের রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অমিত তালুকদার ও মো. রিয়াজ উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। শুনানির শুরুতেই রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সময়ের আবেদন করেন। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সরকার খুব আন্তরিক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কাউকে না কাউকে দায় নিতে হবে মন্তব্য করে হাইকোর্ট বলেছেন, আগুনে মানুষ পুড়ে মরে তাহলে সিটি করপোরেশন কী করে? শুধু আন্তরিক হলে হবে না। কাজ করতে হবে। এ সময় আদালত বলেন, নিমতলীর ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির যে সুপারিশ ছিল, সেগুলোর বাস্তবায়ন হলে চকবাজারে এই দুর্ঘটনা ঘটতো না। নিমতলীর আগুনের ঘটনার পরে প্রধানমন্ত্রী দুই বোনকে দত্তক নিয়েছিলেন। তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সরকার এ ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। এ সময় আদালত বলেন, আন্তরিক হলে লাভ নেই। মানুষতো চলে গেছে। কাজ তো করতে হবে। আদালত তখন বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই চকবাজারের ঘটনা তদরকি করছেন। তখন আদালত বলেন, উনি তো একা দেশ চালাতে পারবেন না। এই যে সুপারিশ, এগুলো তো বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দায়িত্ব। আদালত বলেন, ওই সব এলাকার বাড়ির মালিকরা তিনগুণ বেশিতে গোডাউন ভাড়া দেন। আর নিজেরা থাকেন গুলশানে। মারা যায় গরিব মানুষ। সিটি করপোরেশন দেখেও না দেখার ভান করে। যারা রাস্তায় মারা গেল তাদের কী দোষ? আদালত বলেন, পত্রিকায় দেখেছি, সুপারিশ বাস্তবায়নের কোনও পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এটা বাস্তবায়ন করা তাদের দায়িত্ব ছিল। আমরা জানি না তারা কোনও পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা। পদক্ষেপ না নিলে ধরে নিতে হবে তাদের অবহেলা ছিল। পুরান ঢাকার রাস্তা দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও যেতে পারে না। পাঁচ থেকে ছয় মাত্রার ভূমিকম্পে না হয় কিছু হবে না। কিন্তু সাত থেকে আট মাত্রায় ভূমিকম্প হলে কোনও বিল্ডিং থাকবে না। এ ধরনের ভূমিকম্প হলে কাউকে উদ্ধার করারও কেউ থাকবে না।
চকবাজারের আগুনের ঘটনাটি অনাকাঙিক্ষত উল্লেখ করে আদালত বলেন, এটাকে দুর্ঘটনা বলা যাবে না। এটা অবহেলা। এর দায় কাউকে না কাউকে নিতে হবে। একজন দায়িত্বশীল আরেকজনের ওপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন এটা ঠিক না। আমাদের অর্থনীতিতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা দেশের ভাব মর্যাদা নষ্ট করে দিচ্ছে। নিমতলীর ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলোর উল্লেখ করে আদালত বলেন, গভর্নমেন্টকেই বাস্তবায়ন করতে হবে। নিমতলীর ঘটনার পর কিছুটা বাস্তবায়ন হলে এই ঘটনা ঘটতো না। এরপর আদালত এ সংক্রান্ত সব রিট একসঙ্গে নিয়ে আগামীকাল ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর দু’টায় শুনানি করবেন বলে আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ বিষয়ে পৃথক পৃথক রিট আবেদন দায়ের করেন ইউনুস আলী আকন্দ, অ্যাডভোকেট অমিত দাস গুপ্ত, ব্যারিস্টার নূর মোহাম্মদ আজমী এবং খন্দকার মো. সায়েদুল কাউছার ও সাগুফতা তাবাচ্ছুম। আবেদনে হতাহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গোডাউন ও কারখানা অপসারণ ও বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুত করা গ্যাস সিলিন্ডার অপসারণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিমতলী ট্র্যাজেডির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাইকোর্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ