Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বজ্রসহ সারাদেশে ফাল্গুনী বৃষ্টিপাত

চট্টগ্রামে ১১৮ কিমি গতিতে কালবৈশাখী ষ উড়ে গেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের বৃষ্টিপরিমাপক, শিলাবৃষ্টি না হলে কৃষিতে উপকারী

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

প্রচন্ড বেগে কালবৈশাখী ঝড়ে উড়ে গেছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের বৃষ্টিপরিমাপক যন্ত্র রেইনগজ। আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল সোমবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে কালবৈশাখী ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১৮ কিলোমিটার। ঝড়ে আবহাওয়া অফিসের রেইনগজ উড়ে যাওয়ার এ ঘটনা নজিরবিহীন। এ কারণে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রামে গতকালের বৃষ্টিপাত পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি। ঢাকার আবহাওয়া দপ্তর থেকে একটি কারিগরি টিম এসে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের রেইনগজ মেরামতের চেষ্টা চালাচ্ছে।
তাছাড়া কালবৈশাখী ঝড়ে কাজীর দেউড়ী ও চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সংলগ্ন সড়কে এবং মহানগরী ও জেলার অনেক স্থানে বড়সড় গাছপালা ভেঙে পড়ে। এতে করে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। দিনভর বিভিন্ন স্থানে বিধ্বস্ত গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর কাজে হিমশিম খেতে হয় সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের। জেলার বিভিন্ন এলাকায় শত শত কাঁচা বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
এদিকে গতকাল ভোর থেকেই হঠাৎ আকাশ ঘনঘোর মেঘে ঢেকে গিয়ে রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত, আবার কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হয়েছে। তবে কোথাও শিলাবৃষ্টি হয়নি। শিলাবৃষ্টি না হলেই বোরো ফসল, শাকসবজি আবাদসহ সমগ্র কৃষিতে এই ফাল্গুনী বৃষ্টি উপকারী বলে অভিমত কৃষিবিদদের। যদিও মওসুমের এ সময়ে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েই গেছে। ফাল্গুন মাসের গোড়াতেই এবার রাজশাহী, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে শাকসবজি ও ফল-ফসলের ক্ষতি হয় কমবেশি।
গতকাল চট্টগ্রাম ও বিভিন্ন স্থানে বিকট বজ্রপাতের সাথে বৃষ্টি এবং কালবৈশাখী ঝড় ও দমকা হাওয়া। এ কারণে জনজীবনে দুর্ভোগ তৈরি হয়। ফাল্গুনী বৃষ্টিতে অনেক জায়গায় সড়ক, অলিগলিতে পানি জমে যায়। বন্দরনগরীর চকবাজার, মুরাদপুর, শোলকবহর, ষোলশহর, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদ, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট হঠাৎ পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। নগরীর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের উপরেও পানি থৈ থৈ করতে দেখা গেছে। আকস্মিক বর্ষণে রাস্তায় যানবাহনের অভাবে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তাছাড়া নগর ও জেলার অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অনেক এলাকা বিদ্যুৎবিহীন অন্ধাকারে নিমজ্জিত রয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বঙ্গোপসাগরে স্বাভাবিক লঘুচাপ ও পশ্চিমা লঘুচাপের সাথে পূবালী বায়ুর মিলনের ফলে প্রায় সারাদেশে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত এবং বজ্রবৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি আরও দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নাসির উদ্দিন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এ মুহূর্তে বৃষ্টিপাত ফসলের জন্য উপকারি। বৃষ্টিপাতের ফলে শাকসবজি ও বোরো ধানের ক্ষেত উর্বরা হয়ে উঠছে। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ক্ষেতে এখনও শীতকালীন শাকসবজি রয়েছে। গ্রীষ্মকালীন শাকসবজিরও আবাদ, উৎপাদন শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তা শাকসবজির ফলনে ভাল ভূমিকা রাখবে। বোরো আবাদেও বৃষ্টি কৃষকের জন্য রহমত। তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে শাকসবজির জমিতে পানি জমে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তবে শিলাবৃষ্টি না হলেই এ সময়ে বৃষ্টিপাত যতই হোক তা বোরো ধানের জন্য উপকারী।
আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল সকালে কালবৈশাখী ঝড়ে আনোয়ারার বিভিন্ন স্থানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ২০ মিনিটের ঝড়ে উপকূলীয় এলাকায় গাছপালাসহ দেড় শতাধিক ঘরবাড়ির টিনের চাল উপড়ে গেছে। ঝড়ের কবলে পড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ে। উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীরা মেরামত কাজ চালাচ্ছেন। গাছপালা ভেঙে পড়ে যোগাযোগ সড়ক ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ঝড়ে মাদরাসাসহ রায়পুরের অনেক ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। সাগরে মাছ ধরার অনেক নৌকা ভেঙে গেছে।
বজ্রসহ শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস
পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ এবং দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে স্বাভাবিক লঘুচাপের কারণে গতকাল রংপুর বিভাগ ছাড়া সারাদেশে বৃষ্টিপাত হয়েছে। হিমেল হাওয়ার সাথে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের ফলে সর্বত্র দিন ও রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হ্ওায়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সাথে বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। আজ সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। ঢাকায় বাতাস পূর্ব, উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘন্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে, যা অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে ঘন্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে প্রবাহিত হতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড পটুয়াখালীতে ৪২ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ৩, সীতাকুন্ডে ২১, রাঙামাটিতে ১৯, কুমিল্লায় ১৬, চাঁদপুর ও নোয়াখালীতে ১৪, ফেনীতে ১৬, হাতিয়ায় ৩৪, কক্সবাজারে ১২, কুতুবদিয়ায় ২১, শ্রীমঙ্গলে ১, রাজশাহীতে ১, খুলনায় ১৫, সাতক্ষীরায় ৩১, যশোরে ১০, বরিশালে ১৩, ভোলায় ২৩ মিলিমিটারসহ প্রায় সমগ্র দেশেই বৃষ্টিপাত হয়েছে। পতেঙ্গায় বৃষ্টিমাপক যন্ত্র কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে অকেজো হওয়ায় চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাতের পরিমান নির্ণয় করা যায়নি। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী ও দিনাজপুরে ২৯ এবং সর্বনিম্ন শ্রীমঙ্গলে ১৪.২ ডিগ্রি সে.। ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২৪.৮ এবং সর্বনিম্ন ১৭.৯ ডিগ্রি সে.।
১ নম্বর নৌ সঙ্কেত
দেশের অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরসমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা গেছে, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকা, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কি.মি. বেগে বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদী বন্দরসমূহকে ১ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল সকালে কালবৈশাখী ঝড়ে আনোয়ারার বিভিন্ন স্থানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ২০ মিনিটের ঝড়ে উপকূলীয় এলাকায় গাছপালাসহ দেড় শতাধিক ঘরবাড়ির টিনের চাল উপড়ে গেছে। ঝড়ের কবলে পড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ে। উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীরা মেরামত কাজ চালাচ্ছেন। গাছপালা ভেঙে পড়ে যোগাযোগ সড়ক ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ঝড়ে মাদরাসাসহ রায়পুরের অনেক ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। সাগরে মাছ ধরার অনেক নৌকা ভেঙে গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কালবৈশাখী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ