Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

তাকদির বিষয়ক জ্ঞাতব্য বিষয়াদি

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীন তাকদির-সংক্রান্ত বিষয়াদি যাতে সাধারণ মানুষ হৃদয়ঙ্গম করতে পারে, সে নিরিখে একে দু’ভাগে বিভক্ত করে বিশ্লেষণ করেছেন। যথা- ক. তাকদিরে মুবরাম, অর্থাৎ চুড়ান্ত, স্থির, অপরিবর্তনযোগ্য তাকদির। এ প্রকার তাকদিরে কোনো রকম পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয় না। লাওহে মাহফুজে একই বাণী লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং তা বাস্তবতা লাভ করবেই।
খ. তাকদিরে মুয়াল্লাক, অর্থাৎ ঝুলন্ত বা পরিবর্তনযোগ্য তাকদির। এ প্রকার তাকদিরে পরিবর্তন অথবা সংযোজন বা বিয়োজন হতে পারে। এ প্রকার তাকদিরকে আল্লাহপাক অন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত করে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখেন। যেমন- অমুক কাজটি না হলে এ কাজটি বাস্তবায়ন হবে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, লতিফ যদি পিতামাতার সেবাযত্ন করে, তবে জীবন দীর্ঘ ও সুখকর হবে। যদি সেবাযত্ন না করে, তাহলে দীর্ঘ হবে না, সুখকর হবে না।
বস্তুত তাকদিরে মুবরাম এবং তাকদিরে মুয়াল্লাক। অর্থাৎ চ‚ড়ান্ত ও ঝুলন্ত তাকদির কেবল বান্দার ইলম ও অনুভুতি হিসেবে। কিন্তু আল্লাহপাকের ইলম ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী ঝুলন্ত বলে কিছুই নেই, বরং সবই মুবরাম। কেননা, যেকোনো কাজ বা বিষয়ের শেষ ও চূড়ান্ত ফলাফল আল্লাহপাক অনাদিকাল হতেই অবগত আছেন।
এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ক. আল্লাহপাক যা কিছু ইচ্ছা মিটিয়ে দেন, আর যা কিছু ইচ্ছা সুদৃঢ় করেন। তার নিকটই রয়েছে মূল কিতাব। (সূরা আর রা’দ: আয়াত ৩৯)। খ. এই আয়াতে কারিমার মর্ম উদঘাটন করতে গিয়ে হাফেজ মোল্লা আলী ক্বারী রহ. বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রা.-এর রেওয়ায়েতে আছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহপাক সৃষ্টির তাকদিরসমূহ লিখে রেখেছেন।
এর অর্থ হলো, আল্লাহপাক বান্দাহর তাকদির এমনভাবে নির্ধারণ করেছেন যে, আল্লাহর ইলমে কাদিমের বিপরীতে কোনো কিছু ঘটতেই পারে না। একেই বলা হয় উম্মুল কিতাব। অথবা লিখে রাখার অর্থ হলো, আল্লাহপাক তাকদির নির্ধারণ করেছেন মুয়াল্লাক হিসেবে। অর্থাৎ লাওহে মাহফুজে আল্লাহপাক লিখে রেখেছেন যে, অমুকে যদি হজ করে তাহলে ২০ বছর বাঁচবে। আর যদি হজ না করে তবে ১৫ বছর।
তাকদির পরিবর্তন হওয়া ও ঠিক থাকা অর্থে এ কথাই বোঝানো হয়েছে। এরূপেই হাফেজ ইবনে আসকালানী রহ. আলোচনা করেছেন। কিন্তু তার আলোচনায় সামান্য একটু অস্পষ্টতা আছে। কেননা, মুয়াল্লাক ও মুবরাম এ দুই ধরনের তাকদিরই লাওহে মাহফুজে লিখিত এবং বাতিল হওয়ার অযোগ্য। তবে এ কথাও সত্যি যে, মুয়াল্লাক তাকদির ও আল্লাহপাকের ইলম, জ্ঞান, প্রজ্ঞা হিসেবে মুবরাম। (আল মিরকাত শরহে মিশকাত: খণ্ড ১, পৃ. ১৪৫-১৪৬)।



 

Show all comments
  • MD Shahajahan ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
    আল্লাহ যা ইচ্ছা তা বাতিল করেন এবং যা ইচ্ছা তা বহাল রাখেন, আর তাঁর কাছেই আছে ‘উম্মুল কিতাব’। [সুরা : রাদ, আয়াত : ৩৯ (দ্বিতীয় পর্ব)]
    Total Reply(0) Reply
  • সাদিয়া আক্তার রিয়া ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
    তাকদিরে বিশ্বাস করা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সাধারণত তাকদির বলতে আমরা বুঝি নিয়তি, অদৃষ্ট, বিধিলিপি, ভাগ্যের লিখন, কপাল, বরাত, কিসমত ইত্যাদি। কথায় আছে, ভাগ্যের লিখন কে খন্ডাতে পারে?
    Total Reply(0) Reply
  • সাদ বিন জাফর ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:০৪ এএম says : 0
    কোরআনে কারিমে এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী; তিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি; সার্বভৌমত্বের তার কোনো শরিক নেই। তিনি তাবৎ কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে।’ -সূরা ফুরকান : ২ কোরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘তুমি তোমার মহান রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো, যিনি সৃষ্টি করেন ও সুঠাম করেন এবং যিনি পরিমিত বিকাশ সাধন করেন ও পথনির্দেশ করেন।’ -সূরা আলা : ১-৩
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নাজীব ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:০৪ এএম says : 0
    এটা সুষ্পষ্ট হয়ে যায় যে, সৃষ্টি জগতের মহান স্রষ্টা আল্লাহতায়ালা সব কিছুর প্রত্যেকটিকে এক নির্ধারিত পরিমাপে সৃষ্টি করেছেন এবং যে পরিকল্পনাধীনে ও যে উদ্দেশ্যে যা সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে সেই অনুযায়ী স্বভাবগুণ ও বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ বেলায়েত হোসেন ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:০৪ এএম says : 0
    আল্লাহর নির্দেশে নির্ধারিত নিয়মেই খাদ্যশস্যাদি, ফলমূল এবং অন্যান্য জিনিস উৎপন্ন হয়। এটাও তাকদিরের অন্তর্গত। এ ছাড়াও পৃথিবীতে যে বৃষ্টিপাত হয় এবং রাত আসে দিন যায়, দিন আসে রাত যায়- এ সবই আল্লাহর নির্দিষ্ট নিয়মে হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • রাসেল পাঠান ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:০৫ এএম says : 0
    তাকদির বলতে বোঝায়, জগতের যাবতীয় বস্তুর উৎপত্তি-বিনাশ, ভালো-মন্দ, উপকার-অপকার ইত্যাদি কখন কোথায় ঘটবে এবং এর পরিণাম কী হবে—সব কিছুই আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করে রেখেছেন। জগতে যা কিছু ঘটছে ও ঘটবে, সবই তাকদিরে লিপিবদ্ধ আছে। এর বাইরে কিছুই নেই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তাকদির বিষয়ক

আরও পড়ুন