Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

স্মৃতির বিয়ের ২৪ দিনের স্মৃতি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:৪২ এএম

২৮ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি। মাঝখানে ২৪ দিন। এই কয়েক দিনই আফরুজা সুলতানা স্মৃতির জীবনে স্বামী রাজু স্মৃতি হয়ে রইলো। গত ২৮ জানুয়ারি ধুমধাম করে মেয়ে আফরুজা সুলতানা স্মৃতির (২৪) বিয়ে হয় মাহবুর রহমান রাজুর। অনেক আনন্দ করেছেন আত্মীয়-স্বজনরা।
সেই নতুন জামাতা মাহবুর রহমান রাজু ও তার ছোট ভাই মাসুদ রানা ২১ ফেব্রুয়ারী পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকান্ডের পুড়ে প্রাণ হারিয়েছে। স্মৃতির বাবা মো. আবুল খায়ের মেয়ে-জামাতার সুখস্মৃতির কথা জানিয়ে জামাতার প্রাণ হারানো ভয়ঙ্কর খবর দিয়ে শুধু চোখের পানি ফেলছেন। রাজুর শ্বশুর আবুল খায়ের কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, ভালোই চলছিল মেয়ের নতুন সংসার। কিন্তু রাতে রাতের আচমকা আগুনে সব স্মৃতি শেষ। এই ছিল কপালে! কত আয়োজন করে বন্ধু সাহেব উল্লাহর ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস মাস না যেতেই মা (মেয়ে) আমার বিধবা হলো। ওর (মেয়ে)সামনে আমি কী করে দাঁড়াব।
আবুল খায়ের চকবাজারেই কাপড়ের ব্যবসা করেন। জামাতাও সেখানেই ফোন-ফ্যাক্সের ব্যবসা করেন। দেখে শুনেই রাজুর সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আগুনের খবর মোবাইলে পেয়ে ছুটে আসি। কিন্তু দোকানের কাছেই যেতে পারিনি। পরে শুনেছি ওরা আগুনের ভয়ে দোকানেরর সাটার বন্ধ করে দিয়েছিল। আর বের হতে পারেনি। ওখানেই ওরা...!
আবুল খায়ের বলেন, আগুন লাগার আধাঘণ্টা আগেও রাজুর মা দেখা করে গেছে। বেহাই (রাজুর বাবা) টাকা নিয়ে গেছে। সরকারের উচিত এসব বিষয় খেয়াল রাখা। যেখানে সেখানে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটবে আর মারা যাবে সাধারণ মানুষ, ক্ষতিগ্রস্থ হবো আমরা। সিলিন্ডার ব্যবসা বন্ধ করা উচিত, কড়া নজরদারিতে রাখা উচিত আগুন বোমা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাহবুর রহমান রাজুরা তিন ভাই। রানা টেলিকম নামে তাদের দোকান ছিল। সেখানে ফোন-ফ্যাক্সসহ মোবাইল অ্যাক্সেসরিজ বিক্রি করতো তারা। ছোট্ট ভাইকে নিয়ে বাবা মাসহ ঢাকাতেই চুরি হাট্টার পাশের একটা ভবনে থাকতো।
দুই পুত্র রানা-রাজুকে হারিয়ে বাবা সাহেব উল্লাহর বন্ধু নিজাম উদ্দিন ঢামেক হাসপাতালের মর্গের সামনে কান্নাকাটি করে বলছিলেন, নিজের ছেলের মতো ওদের ভালোবাসি। কত স্মৃতি ওদের সঙ্গে। পরিশ্রমী ছেলে রানা-রাজু এভাবে মারা যাবে ভাবতে পারছি না। বন্ধু আমার ব্যবসা করতো এখন বয়স হয়েছে। রানা রাজুই ছিল উপার্জনক্ষম। ছেলে দুটি প্রাণ হারানোয় ওদের বেঁচে থাকার মেরুদন্ডই ভেঙে গেল। রাজুদের দোকানের পাশেই একটি ফ্ল্যাটে থাকেন তাহমিনা বেগম। তিনিও খোঁজ নিতে এসে বলেন, নিয়মিত ওদের দোকানে ফ্লেক্সি দিতাম, কেনাকাটা করতাম। আগুনে নিজের বোন তানজিলাও দগ্ধ হন। তবে এখন সুস্থ। বোনকে বাসায় রেখে তাদের দুইভাইকে শেষবারের মতো দেখতে এসেছি।
মো. আবুল খায়ের জানান, স্বামী মাহবুর রহমান রাজুকে হারিয়ে মেয়ে আফরুজা সুলতানা স্মৃতি শুধুই কাঁদছেন। বুক চাপরিয়ে শুধুই বলছেন, এই স্মৃতি কি করে ভুলবো। কি নিয়ে বেঁচে থাকবো! ##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিয়ে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ