বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দীর্ঘদিনের জমানো ক্ষোভ ও মাদক সেবনের জন্য টাকা চেয়ে দফায় দফায় বিরক্ত করায় রাগান্বিত হয়ে জুসে চেতনানাশক মিশিয়ে অজ্ঞান করে ও হাত-পা বেঁধে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় নটরডেম কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইয়োগেন সালভেস (২২)কে। গত শনিবার দিবাগত রাতে উত্তর মুগদা থেকে গ্রেফতারকৃত সখিনা বেগম সবিতা (২৬) র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এ সব জানিয়েছে বলে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান জানান। গতকাল রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন র্যাব কর্মকর্তা এমরানুল হত্যাকান্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি সবুজবাগের একটি বাসা থেকে ইয়োগেন সালভেসের লাশ উদ্ধার করা হয়। ইয়োগেন চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা এলাকার ম্যাকলিন গোন সালভেজের ছেলে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় পুলিশের মামলা হয়েছে এবং আইনানুগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
লে. কর্নেল এমরানুল হাসান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইয়োগেন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী সখিনা বেগম সবিতা। সখিনা বেগম সবিতার (২৬) দায়ের করা এক মামলায় সাক্ষী ছিল নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী ইয়োগেন। সাক্ষী হওয়ার সুবাধে সবিতার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিত সে। এক পর্যায়ে তা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। জ্বালাতন থেকে বাঁচার জন্য পরিকল্পিতভাবে ইয়োগেনকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি হত্যা করে সবিতা। গাজীপুরের পূবাইলের মৃত সেকান্দার আলী ভূইয়ার মেয়ে সবিতা। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করে ঢাকা জজ কোর্টে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। এছাড়া ঢাকার একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করতেন। হত্যাকান্ডের সাথে আর কারো সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তাও তদন্ত করা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে এমরানুল হাসান জানান, স্ট্যামফোর্ডের ধানমন্ডি ক্যাম্পাসে পড়ার সময় ২০১৩ সালে অ্যাডভোকেট জাফর উল্ল্যাহ রাসেলের সঙ্গে পরিচয় হয় সবিতার। সেসময় সবিতাকে ক্যাম্পাসে র্যাগিং করে জাফর উল্ল্যাহ। পরে অবশ্য এসব মিটে গেলে দুজনের মধ্যে সখ্যতা তৈরি হয়। এর এক পর্যায়ে জাফর নিজের গড়া ‘পুওর পিপলস্ হেল্প ফাউন্ডেশন (পিপিএইচএফ)’ নামের প্রতিষ্ঠানে সবিতাকে কাজ করার জন্য আহ্বান জানায় এবং আজীবন রক্তদাতা হিসেবে সদস্য করে। একই প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতো ইয়োগেন। কিছুদিন পর এই প্রতিষ্ঠানে জাফর উল্ল্যাহর দ্বারা হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হন সবিতা। এদিকে বিভিন্ন বিষয়ে জাফর ও ইয়োগেনের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ২০১৭ সালে জাফর উল্ল্যাহর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সবিতা। আর এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন ইয়োগেন। সাক্ষী হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন সময় সবিতার কাছে টাকা দাবি করত ইয়োগেন। টাকা না দিলে সে সবিতাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করত। জাফরের বিরুদ্ধে সবিতার মামলার সাক্ষী হওয়ায় সে তার রোষ থেকে আড়াল করতে চাইছিল সবিতা। এজন্য এ মাসে ইয়োগেনের জন্য রাজধানীর সবুজবাগে বাসা ভাড়া নেন তিনি। আগামী মার্চ মাসে ওঠার শর্তে বাড়িওয়ালাকে ফেব্রুয়ারির শুরুতে ভাড়া বাবদ ৫ হাজার টাকা অ্যাডভান্স করেন সবিতা। এ বাসার ভাড়া দুজনে শেয়ার করার কথাও ছিল তাদের। কিন্তু গত ২ ফেব্রুয়ারি ইয়োগেন মার্চের ভাড়া বাবদ অ্যাডভান্স ৮ হাজার টাকা সবিতার কাছে দাবি করে। এছাড়াও মোবাইল বিল ও নেশার টাকা বাবদ প্রতিদিনই সে ২-৩ বার করে সবিতার কাছে টাকা চাইতো। এই জ্বালাতন থেকে বাঁচতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বলে র্যাবকে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন সবিতা।
সুপরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে উল্লেখ করে লে. কর্নেল এমরানুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, সবিতা চরম বিরক্ত ও রাগান্বিত হয়ে ইয়োগেনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এজন্য গত ৫ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকা হতে ৪৫০ টাকা দিয়ে কালো ও সবুজ রংয়ের ১টি ব্যাগ এবং ৬৫০ টাকা দিয়ে ১টি বঁটি কিনে আনে এবং হত্যা করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইয়োগেন সবিতার সঙ্গে কোর্টে দেখা করতে রাজি হয়। তারপর তাকে সঙ্গে করে তার ভাড়া করা বাসায় যাওয়ার কথা বলে সবিতার তার মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। এরপর ইয়োগেনকে হিরাঝিল গলির মাথায় সাড়ে তিনটার দিকে অপেক্ষা করতে বলে। বাসাবো টেম্পুস্ট্যান্ড থেকে একটি লাচ্ছি কিনে সবিতা এবং মুগদা হাসপাতালের টয়লেটে গিয়ে বোরখা পড়ে হিরাঝিল গলির মাথায় আসে। সেখানে আসার পর ইয়োগেনসহ তাদের ভাড়া বাসায় যায়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাসায় প্রবেশের পর ইয়োগেনের পিপাসা পাওয়ায় জুস কিনতে বাইরে যায়। এই ফাঁকে সবিতা আগে থেকে কিনে রাখা লাচ্ছির সঙ্গে চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে রাখে। সে জুস কিনে বাসায় ফেরার পর একটি প্লাস্টিকের ওয়ানটাইম প্লাসে করে এই লাচ্চি ইয়োগেনকে খেতে দেয় সবিতা। চেতনানাশক ওষুধ মেশানো লাচ্চি খেয়ে অচেতন হয়ে পড়লে তার হাত-পা-মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে সবিতা। তারপর বঁটি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে সবিতা। কোপানোর একপর্যায়ে ইয়োগেন চিৎ অবস্থা হতে উল্টে যায়। তখন সবিতা তার পিঠের ওপর এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর সবিতা সেলোয়ার কামিজ ও ওড়না পরে খালি পায়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। হত্যার পর থেকেই প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য র্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে। যার প্রেক্ষিতে ইয়োগেন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী সখিনা বেগম সবিতাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।