পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি, দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য কামনা করে শেষ হলো তাবলিগ জামাতের প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত। এটি ছিল মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের পর্ব। প্রায় ২৫ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে আবেগঘন পরিবেশে গতকাল শনিবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে মোনাজাত শুরু করে ১১টা ৭ মিনিটে সমাপ্ত হয়।
আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফ ও মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সমবেত মুসল্লিরা দুই হাত তুলে মোনাজাত করেন। মোনাজাতের সময় ইজতেমা ময়দান ও আশপাশ এলাকা থেকে ক্ষণে ক্ষণে ভেসে আসে ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ গগণবিদারী ধ্বনি। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষ স্থানীয় মুরব্বি বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ জোবায়ের মোনাজাত শুরু করেন। চলে বেলা ১১টা ৭ মিনিট পর্যন্ত। ২৭ মিনিট আরবি ও বাংলা ভাষায় মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনজাতের আগে অনুষ্ঠিত হয় হেদায়াতি বয়ান।
এর আগে সকালে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেওয়া এবং মোনাজাতে শরিক হতে আসা লাখ লাখ মুসল্লি প্রতীক্ষায় থাকেন মোনাজাতের জন্য। মোনাজাতের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলে হঠাৎ ইজতেমার জনসমুদ্রে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। মোনাজাত চলাকালে অনেকে কান্নায় বুক ভাসান। মোনাজাত শুরুর আগে ইজতেমা ময়দানের চারদিক থেকে লাখ লাখ মুসল্লি হেঁটেই ইজতেমাস্থলে পৌঁছেন। সকাল ৯টার আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হলে মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলি, বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। অনেক মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পুরানো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন সিট বিছিয়ে অবস্থান নেন। অনেকে ময়দানের পার্শ্ববর্তী বাসা-বাড়ি-কলকারখানা-অফিস, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদে নৌকায় অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলের চারপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যে দিকেই চোখ যায় সে দিকেই শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পড়া মানুষ আর মানুষ। এদিকে, ইজতেমা এলাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও বিভিন্ন দালানের ছাদে বসে নারীরাও আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন।
আগামী বছরের ইজতেমা
আগামী বছর বিশ্ব ইজতেমা ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি এবং ১৭, ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে বলে মোনাজাত শেষে মুরব্বিরা মাইকে ঘোষণা দেন।
আরো ২ মুসল্লির মৃত্যু
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দেওয়া আরো ২ মুসল্লি মারা গেছেন। শনিবার ভোরে ঢাকার কদমতরা এলাকার মো. আবুল হোসেন (৫৫) ইজতেমা ময়দানে তার নিজ খিত্তায় ভোর ৫টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। এ ছাড়া শুক্রবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার মৃত হাতেম আলীর ছেলে আব্দুর রহমান (৫৫) মারা যান। এ নিয়ে ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী ৬ জন মুসল্লি মারা গেলেন।
১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি সা’দপন্থীদের ইজতেমা
আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা। মোনাজাত শেষে জোবায়ের অনুসারীগণ ময়দান ছেড়ে চলে গেলে আজ রোববার থেকে পরের ২ দিন মাওলানা সা’দ অনুসারীদের পরিচালনায় বিশ্ব ইজতেমা ২য় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার তাদের আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এ বছরের ৪ দিনের বিশ্ব ইজতেমা।
মুসল্লিদের বাড়ি ফেরায় ভোগান্তি
প্রথম দুই দিনের আখেরী মোনাজাত শেষে লাখ লাখ মুসল্লি প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তড়িগড়ি করে এক সাথে মাঠ ত্যাগ করে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করায় যানবাহন সঙ্কটে মুসল্লিদের সিমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ সুযোগে যানবাহনের ভাড়া কয়েকগুণ বেশি আদায় করায় মুসল্লিরা আরো বেশি ভোগান্তিতে পড়েন। আখেরী মোনাজাত শেষে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো লাখ লাখ মুসল্লী বাস, ট্রাক, ট্রেন ও লঞ্চ স্টেশনে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এসময় যানবাহন সঙ্কটে পড়ে মুসল্লিরা তাদের মালছামানা কাধে ও মাথায় নিয়ে মাইলের পর মাইল হাঁটতে দেখা যায় এবং রাস্তার দুপাশে শুয়ে-বসে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। শেষ দুই দিনের ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের ইজতেমামুখী চাপ ও প্রথম দুই দিনের ফিরতি মুসল্লিদের ঘরমুখী চাপে গতকাল দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকতে দেখা যায়।
মুসল্লিদের মাঝে রুটি ও পানি বিতরণ
এদিকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ব্যক্তিগত উদ্যোগে টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ইজতেমায় আগত বাড়ি ফেরা মুসল্লীদের মাঝে রুটি ও খাবার পানি বিতরণ করেন।
মোবাইল নেটওয়ার্ক
গতকাল ইজতেমা ময়দান ও টঙ্গী থেকে কোন মোবাইলে দেশের বিভিন্নস্থানে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। মাঝে মধ্যে লাইন পেলেও মূহুর্তেই কেটে যাচ্ছিল। মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলো নেটওয়ার্ক সুবিধা দিতে ইজতেমা উপলক্ষ্যে ইজতেমার আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত মোবাইল টাওয়ার সংযোগ করেও এ সমস্যার পুরো সমাধান দিতে পারেনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।