পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বইমেলা হয়। এসব মেলার উদ্দেশ্য থাকে বই বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করা। তবে বাঙালীর ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে জড়িত অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্দেশ্য শুধুই বই বিক্রি নয়, বরং এর সাথে জড়িয়ে আছে বাঙালী সমাজের উত্থান, ভাষা আন্দোলন ও জাতীয় চেতনার গল্প। তাই এ মেলায় চেষ্টা করা হয় বাঙালীর ইতিহাস, ঐতিহ্যের বিষয়গুলোর সম্মিলন ঘটানোর। অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে গেলে যে কারো চোখে পড়বে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের স্টলটি। মেলার ১১-১২নং স্টলটিতে রয়েছে এ অঞ্চলের ঐতিহাসিক সব পুরাকীর্তি। একাডেমী অংশের গেট থেকে দৃশ্যমাণ স্টলটি প্রাঙ্গনের পুকুর পাড়ে অবস্থিত। এতে ফ্রেমেবাঁধা বাংলার ঐতিহাসিক সব পুরাকীর্তির ছবি সাঁটানো রয়েছে। মোগল আমল থেকে শুরু করে এর আগে ও পরে ইংরেজ শাসকদের আমলের বিভিন্ন স্থাপনার নমুনা দূর থেকে তাকালেই দেখা যায়। প্রত্মতত্ত্ব অধিদফতরের স্বীকৃত ৪৫২টি পুরাকীর্তির ৪৫টির স্থান হয়েছে স্টলটিতে। বড়-ছোট পোস্টার, সিরামিকসের গ্লাস, কাঠে খোদাই করা ভিউকার্ড ও বই এখানে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। আবার নাম মাত্র মূল্যে এখান থেকে যে কেউ সংগ্রহ করতে পারছেন এসব পুরাকীর্তির নমুনা। প্রতিবছর স্টলটিতে গবেষকদের জন্য বিভিন্ন বিশ্লেষণধর্মী বই স্থান পেলেও এবারই প্রথম ইতিহাসের সাথে সাধারণ পাঠক ও শিশু-কিশোরদের পরিচয় করিয়ে দিতে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে নিয়ে আসা হয়েছে ‘ছোটদের প্রত্মতত্ত্ব’ নামক বই। অধিদপ্তরের অফিসার জিসান আহমেদ ও মো. খায়রুল বাসার স্বপনের রচনায় সহজ ভাষায় বিভাগভিত্তিক ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। পাশাপাশি এতে স্থান পেয়েছে এসব জায়গায় যাওয়ার নির্দেশনা এবং স্ব স্ব অঞ্চলের বিখ্যাত খাবারের নাম। মাত্র দু’দিন আগে মেলার ১৫তম দিনে মোড়ক উন্মোচন হওয়া বইটি ইতোমধ্যেই দশনার্থীদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। শনিবার স্টলে কথা হয় বইয়ের লেখক জিসান আহমেদ ও মো. খায়রুল বাসার স্বপনের সাথে। জিসান আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও ৩৫তম বিসিএস এর ক্যাডার। আর খাইরুল ইসলাম স্বপন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও ৩৬তম বিসিএসের ক্যাডার। লেখকদ্বয় বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার মত শিশুদের জন্য কোন মৌলিক বই ছিলো না। ইতিহাস সম্পর্কে ছোটবেলা থেকেই সচেতন করতে এ বইটি প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মোড়ক উন্মোচনের মাত্র একদিনের মাথায়ই বইটির চার’শ কপি বিক্রি হয়ে গেছে। আসা করি এটির মাধ্যমে দেশের ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে সাধারণ মানুষ জানার সুযোগ পাবে।’
প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের স্টলে বিভিন্ন স্থাপনা সম্পর্কিত গবেষণাধর্মী বিভিন্ন বই রয়েছে। পাশাপাশি এখান থেকে ধারণা দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সব পর্যটন স্থান সম্পর্কে। স্টলের সামনে কথা হয় দর্শণার্থী রেজাউল করিমের সাথে। ছেলেকে স্টলে থাকা নমুনাগুলো সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছেন তিনি। রেজাউল করিম বলেন, ছেলে এখানে এসে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা সম্পর্কে জানতে পারছে। এ ধরণের উদ্যোগের জন্য প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন আশা করছি এর দ্বারা সবাই উপকৃত হবে।
গতকাল শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৬তম দিনে মেলায় নতুন বই আসে ২০৬টি। মেলা সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলে। সাপ্তহিক ছুটির দিনর হওয়ায় এদিনও গ্রন্থমেলায় ছিল শিশুপ্রহর। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়। সকাল ১০টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত নির্বাচন। প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে ২১ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতায় মো. মুনতাজিম রহমান সায়মন (প্রথম স্থান), তাইয়্যেবা ও নুসাইবা নাজমী খান (দ্বিতীয় স্থান) ও মোঃ শাহারিয়ার আহম্মেদ (তৃতীয় স্থান) অধিকার করে। উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় নিসার বিন সাইফুল্লাহ জাহিন (প্রথম স্থান), কাশফিয়া কাওসার চৌধুরী (দ্বিতীয় স্থান) ও শাঁওলী সামরিজা (তৃতীয় স্থান) অধিকার করে। প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী অণিমা মুক্তি গমেজ, হাসান মাহমুদ এবং ক্রীড়াবিদ রঞ্জিত চন্দ্র দাস। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর: শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মইনুদ্দীন খালেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ফরিদা জামান, নিসার হোসেন এবং মলয় বালা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিল্পী হাশেম খান। গতকাল লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন আসাদ মান্নান, শাকুর মজিদ, পাপীয়া জেরিন, আবদুল্লাহ আল ইমরান, মাহফুজ রিপন। কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি কাজী রোজী এবং মারুফ রায়হান। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মুস্তাফা ওয়ালিদ এবং কাজি মাহতাব সুমন। নৃত্য পরিবেশন করেন মৈত্রী সরকারের পরিচালনায় নৃত্যসংগঠন ‘স্বপ্নবিকাশ কলা কেন্দ্র’-এর নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী লীনু বিল্লাহ, চম্পা বণিক, বশিরুজ্জামন সাব্বির, প্রিয়াংকা বিশ্বাস, অপু আমান।
আজকের অনুষ্ঠানসূচি :
আজ রবিবার ১৭তম দিনে মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক : শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন খালেদ হোসাইন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মফিদুল হক, আসাদ মান্নান, শিহাব সরকার, আনিসুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কবি মনজুরে মওলা। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমির শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯’ বিষয়ে সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী গ্রন্থমেলার বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।