বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আঠারো বছর বয়সী স্মৃতি আক্তার। রঙিন স্বপ্নে বিভোর হয়ে গায়ে হলুদে প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। কিন্তু বিজিবি ছোড়া গুলিতে নিমিষেই মুছে গেল তার হলুদ পরার স্বপ্ন। মুহূর্তে মধ্যে স্বপ্ন বিভোর চোখে নেমে এলো শোকের ছায়া। কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়েছে ক্ষনিকের জন্য স্তদ্ধ হয়ে যায় সে। কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারার আগে জানতে পারলো বাবাসহ হারিয়ে গেল আরও দুইটি প্রাণ ।
জানা গেছে, হরিপুর উপজেলার বহরমপুর গ্রামের মৃত সাদেকের কন্যা স্মৃতি বুধবার ছিল তার গায়ে হলুদ বর পক্ষের লোক এসে তার গায়ে হলুদ পরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই বিজিবি গুলিতে নিহত হয় তার বাবা সাদেকুল ইসলাম ।
স্মৃতির বাবার সম্বল ছিল একটি গরু, যা বিক্রি করে বর পক্ষকে আদর-আপ্যায়ন করবে। গত মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় গরুটি বিক্রি করার জন্য জাদুরানি হাট নিয়ে যাওয়ার সময় বিজিবি পথ রোধ করে। অনেক আগে হাট থেকে কেনা গরুর রশিদ বারবার দেখালেও বিজিবি তার কোনো কথা শুনে নেই। শেষ পর্যন্ত বিজিবি গুলি চালায় তার বুকে।
রক্ত মাখা রশিদ নিয়ে কাঁদছে তার কন্যা। সংসারের আয় আয় রোজগারের কেউ না থাকায় স্মৃতি আক্তার এর বিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়লো।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিজিবি লোমহর্ষক বর্বরতার শিকার হয়েছেন আরো দুইজন। তাদের মধ্যে ১২ বছরের শিশু জয়নুলকে মেরেছে নির্মমভাবে। জয়নুলে বাবা নুরুল ইসলাম এর কান্নার রোল যেন গগন বিদারী কাঁদতে কাঁদতে জয়নুলের বাবা বললেন আমার ছেলেটি স্কুল থেকে ফিরে আসার পর ওই ঘটনা দেখতে যায়। গোলাগুলি শুরু হলে সে দৌড়ে পালিয়ে এক বাড়ির ভিতর ঢুকে যায়। বিজিবি সদস্যরা সেখান থেকে টেনে বার করে নিয়ে আসে তার পায়ে গুলি করে। আহত পড়ে থাকা শিশুটিকে স্বজনরা উদ্ধার করার চেষ্টা করলে বিজিবি তাদেরকেও গুলি করার হুমকি দেয় । ফলে কেউ তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। প্রচন্ড রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে নবাব আলী ওই এলাকার একজন জনপ্রিয় শিক্ষক এমন কোন ছাত্র অভিভাবক নেই যিনি এই মানুষটিকে সম্মান করেন না। লোকজনকে কাছে জানা গেছে তিনি প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ জন শিক্ষার্থীকে পড়ালেখা করেন। তার অনেক ছাত্রছাত্রী দেশের বিভিন্ন জায়গায় খ্যাতি অর্জন করেছে। এই মানুষটিকে নির্বিকারে গুলি করা হয়েছে।
এলাকায় চলছে শোকের মাতম। দোষী বিজিবি সদস্যদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের চাপধা বাজারে। ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের-সভাপতি আবুল কাশেম জানান বর্তমান বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ককে বহাল রেখে ন্যায় বিচার সম্ভব না। অধিনায়কসহ ঘটনার সাথে যুক্ত সকল বিজিবি সদস্যদের কে প্রত্যাহার করে তদন্ত পরিচালনা করলে এলাকাবাসী সঠিক বিচার পাবে ।
ঠাকুরগাঁও-২ আসনের এমপি আলহাজ দবিরুল ইসলাম হতাহতদের পরিবারে সমবেদনা জানাতে গিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তর মাধ্যমে দোষী বিজিবি সদস্যদের বিচারে আশ্বাস দেন । যাতে করে দেশের কোথাও বিজিবির হাতে সাধারণ মানুষ নির্যাতিত না হয়।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম নিহতদের দাফনের জন্য নিহত পরিবারের মাঝে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা করেন। তদন্ত কমিটির সদস্য বাড়িয়ে ৭ এ উন্নীত করেন জেলা প্রশাসক। তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেন তিনি।
গত বুধবার সন্ধ্যায় ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে ফেরৎ দেয়া হলে তিনটি লাশ পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। লোকজনের মধ্যে মামলা আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত এডিএম নুর কুতুবুল আলমের নেতৃত্বে গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি এলাকায় গিয়ে আজ তদন্ত কার্যক্রম শুরু করার কথা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।