Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কবি আল মাহমুদের ইন্তেকাল

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ আর নেই। গতরাত ১১টা ৫ মিনিটে ধানমন্ডির শঙ্করে ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। কবির জামাতা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তার ইন্তেকালে সাহিত্যাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আল মাহমুদ ত্রিশোত্তর আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম কবি। কবিতার পাশাপশি গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং শিশুসাহিত্য রচনা করেও তিনি খ্যাতির শিখর স্পর্শ করেছেন।
৫০-এর দশকের তার সমসাময়িক কবি-বন্ধুরা যখন একে একে মৃত্যুবরণ করছেন তখন কবি আল মাহমুদ বার্ধক্যজনিত নানান অসুখে থেকেছেন গৃহবন্দি। মাঝে মাঝে গেছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। দীর্ঘদিন ধরে চোখে ভালো দেখতেন না, কানেও কম শুনতেন। তবু বিশেষ সংখ্যার জন্য তিনি অন্যের সহযোগিতা নিয়ে মুখে মুখে কবিতা রচনা করতেন।
কবি আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাই স্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড হাই স্কুলে পড়ালেখা করেন। সেই সময় থেকেই তার লেখালেখির শুরু। সেসময় তিনি মধ্যযুগীয় প্রণয়োপাখ্যান, বৈষ্ণব পদাবলি, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল প্রমুখের সাহিত্য পাঠ করেন।
১৮ বছর বয়সে তার কবিতা প্রকাশিত হয়। ঢাকা থেকে প্রকাশিত সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকা এবং কলকাতার নতুন সাহিত্য, চতুষ্কোণ, ময়ূখ, কৃত্তিবাস ও বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকায় লেখালেখির সুবাদে ঢাকা-কলকাতার পাঠকদের কাছে তিনি সুপরিচিত হন।
তার কাব্যগ্রন্থ লোক লোকান্তর (১৯৬৩), কালের কলস (১৯৬৬), সোনালী কাবিন (১৯৬৬), মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো (১৯৬৯) কাব্যগ্রন্থগুলো তাকে প্রথম সারির কবি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। ১৯৯৩ সালে বের হয় তার প্রথম উপন্যাস কবি ও কোলাহল।
১৯৬৮ সালে ‘লোক লোকান্তর’ ও ‘কালের কলস’-এর জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে পান একুশে পদক।
১৯৫৪ সালে আল মাহমুদ ঢাকা আসেন। তখন তিনি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত ও নাজমুল হক প্রকাশিত সাপ্তাহিক কাফেলায় লেখালেখি শুরু করেন। পাশাপাশি দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে সাংবাদিকতা জগতে প্রবেশ করেন। ১৯৫৫ সাল আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী কাফেলার চাকরি ছেড়ে দিলে আল মাহমুদ সেখানে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং যুদ্ধের পরে দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। সম্পাদক থাকাকালীন সময় সরকারের বিরুদ্ধে লেখার কারণে এক বছরের জন্য কারাবরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি গল্প লেখায় মনোযোগী হন। ১৯৭৫ সালে তার প্রথম ছোটগল্প গ্রন্থ পানকৌড়ির রক্ত প্রকাশিত হয়। পরে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে শিল্পকলা একাডেমীর গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহপরিচালক পদে নিয়োগ দেন। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর তিনি পরিচালক হন। পরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
আল মাহমুদ ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দা নাদিরা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে।



 

Show all comments
  • Mohammad Kamrul Ahsan ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:৫৫ পিএম says : 0
    ‘স্মৃতির মেঘলাভোরে’ আল মাহমুদ কোনো এক ভোরবেলা, রাত্রিশেষে শুভ শুক্রবারে মৃত্যুর ফেরেস্তা এসে যদি দেয় যাওয়ার তাকিদ; অপ্রস্তুত এলোমেলো এ গৃহের আলো অন্ধকারে ভালোমন্দ যা ঘটুক মেনে নেবো এ আমার ঈদ। ফেলে যাচ্ছি খড়কুটো, পরিধেয়, আহার, মৈথুন– নিরুপায় কিছু নাম, কিছু স্মৃতি কিংবা কিছু নয়; অশ্রুভারাক্রান্ত চোখে জমে আছে শোকের লেগুন কার হাত ভাঙে চুড়ি? কে ফোঁপায়? পৃথিবী নিশ্চয়। স্মৃতির মেঘলাভোরে শেষ ডাক ডাকছে ডাহুক অদৃশ্য আত্মার তরী কোন ঘাটে ভিড়ল কোথায়? কেন দোলে হৃদপিণ্ড, আমার কি ভয়ের অসুখ? নাকি সেই শিহরণ পুলকিত মাস্তুল দোলায়! আমার যাওয়ার কালে খোলা থাক জানালা দুয়ার যদি হয় ভোরবেলা স্বপ্নাচ্ছন্ন শুভ শুক্রবার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ