Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণ আজ

ভেঙে পড়েছে মাদক সিন্ডিকেট, কক্সবাজার পৌঁছেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি

বিশেষ সংবাদদাতা, কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

টেকনাফের ৩২ ইয়াবা গডফাদারসহ ৯৮ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন আজ। শনিবার সকালে টেকনাফ হাইস্কুল মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করবেন সেফহোমে অবস্থানরত এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানটি হচ্ছে টেকনাফ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। ইতোমধ্যে এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য কক্সবাজার এসে পৌঁছেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক আসাদুজ্জামান মিয়া।
জানা গেছে, সেফহোমে হাজির হয়েছেন সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ভাই ইয়াবা ডন খ্যাত আবদুর শুক্কুরও। পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শেষ মুহূর্তে আত্মসমর্পণে হাজির হতে পারেন আরও কয়েকজন শীর্ষ গডফাদার। দেশ থেকে মরণ নেশা ইয়াবা নির্মূলে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৫১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১০ জনকে তালিকায় গডফাদার উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন, আকতার কামাল, একরামুল হক, শামসুল হুদা, ইমরান ওরফে পুতিয়া মেস্ত্রী, মো. কামাল, জিয়াউর রহমান, হাবিব উল্লাহ, মো. ইউছুফ জালাল বাহাদুর, মোস্তাক আহমদ মুছু ও বার্মাইয়া শামসু। এক মাসে ৩২ গডফাদারসহ ৯৮ জন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী নিজেরাই সেফহোমে হাজির হয়েছেন। শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তারা আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন। সেফহোমে আশ্রয় নেয়া মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির চার ভাই আবদুর শুক্কুর, শফিকুল ইসলাম, আবদুল আমিন ও ফয়সাল রহমান এবং তার ভাগিনা সাহেদ রহমান নিপুসহ অনেকেই।
এ তালিকায় আরো নাম রয়েছে টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের ছেলে দিদার মিয়া ও পৌর কাউন্সিলর নুরুল বশর ওরফে নুরশাদ, পশ্চিম লেদার বোরহান, নুরুল হুদা মেম্বার, নাজিরপাড়ার আবদুর রহমান, এনামুল হক মেম্বার, সাবরাংয়ের নুরুল আমিন, নাজিরপাড়ার ভূট্টোর ভাগিনা আবছার, শামসু মেম্বার, মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে ধানু মেম্বার, আলী খালির জামাল মেম্বার, শাহপরীর দ্বীপের রেজাউল করিম মেম্বার, হ্নীলার রমজান ও বড় হাবিবপাড়ার ছিদ্দিক, আলী আহমদ চেয়ারম্যানের দুই ছেলে আবদুর রহমান ও জিয়াউর রহমান, হ্নীলা পশ্চিম সিকদার পাড়ার রশিদ আহমদ, ওয়ালিয়াবাদের মারুফ বিন খলিল বাবু, ছৈয়দ আহমদ, পুরাতন পল্লানপাড়ার শাহ আলম, জাহাজপুরার নুরুল আলম, মৌলভীপাড়ার একরাম হোসেন, মধ্যম ডেইলপাড়ার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, চৌধুরীপাড়ার মং সং থেইন ওরফে মমচি ও দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার ইমাম হোসেন, জুবাইর হোসেন।
পুলিশ হেফাজতে থাকার ৬৬ শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী হলেন, হ্নীলা পূর্ব পানখালীর নজরুল ইসলাম, পশ্চিম লেদার নুরুল কবীর, নাজিরপাড়ার সৈয়দ হোসেন, নাইটং পাড়ার মো. ইউনুচ, সাবরাং আলীর ডেইলের জাফর আহমদ, হ্নীলা ফুলের ডেইলের রুস্তম আলী, শামলাপুর জুমপাড়ার শফিউল্লাহ, একই এলাকার ছৈয়দ আলম, উত্তরলম্বরীর আবদুল করিম ওরফে করিম মাঝি, রাজারছড়ার আবদুল কুদ্দুছ, জাহেলিয়াপাড়ার মো. সিরাজ, সাবরাংয়ের মৌলভী বশির, রাসেল, হোসেন আহমদ, শওকত আলম, আলী আহমদ, আবদুল হামিদ, নাজিরপাড়ার মো. রফিক, নুন পল্লানপাড়ার মো. সেলিম, নাইট্যাংপাড়ার মো. রহিম উল্লাহ, নাজির পাড়ার মো. হেলাল, চৌধুরী পাড়ার মোহাম্মদ আলম, তুলাতলীর নুরুল বশর, হাতিয়াঘোনার দিল মোহাম্মদ, একই এলাকার মোহাম্মদ হাছন, দক্ষিণ নয়াপাড়ার নুর মোহাম্মদ, সদর কচুবনিয়ার বদিউর রহমান, পূর্ব লেদার জাহাঙ্গীর আলম, মধ্যম জালিয়াপাড়ার মোজাম্মেল হক, ডেইলপাড়ার আবদুল আমিন, উত্তর আলী খালীর শাহ আজম, দক্ষিণ নয়াপাড়ার আলমগীর ফয়সাল, সাবরাং ডেইল পাড়ার মো. সাকের মিয়া, উত্তর শীলখালীর মো. আবু ছৈয়দ, জাদিমুরার মোহাম্মদ হাসান আবদুল্লাহ, রাজার ছড়ার হোসেন আলী, সাবরাং নয়া পাড়ার মো. তৈয়ব, উত্তর জালিয়াপাড়ার নুরুল বশর মিজি, নাজির পাড়ার জামাল হোসেন, মৌলভীপাড়ার মো. আলী এবং এ এলাকার আবদুল গনি, জালিয়াপাড়া, মো. হাশেম, পুরাতন পল্লানপাড়ার ইসমাইল, নাইট্যাংপাড়ার আইয়ুব, নাইট্যাং পাড়ার হাবিব, আলী খালীর হারুন, মাঠপাড়ার কামাল, ডেইলপাড়ার নুরুল আমিন, শীলবনিয়াপাড়ার আইয়ুব, জালিয়াপাড়ার আলম, লেদার হামিদ, মুন্ডর ডেইলয়ের মনজুর, লেদার রবিউল আলম, হ্নীলার মাহাবুব, বাজারপাড়ার মো. শাহ, লেদার ফরিদ আলম, লেদার মো. হোছন, জালিয়াপাড়ার নুরুল আলম, লেদার জহুর আলম, আবু তাহের, ফুলের ডেইলের আলী নেওয়াজ ও আবু তৈয়ব।
সেফহোমে থাকা কয়েকজন জানান, দুই শর্তে তারা আত্মসমর্পণ করছে। প্রথম শর্ত, জীবনে আর ইয়াবা ব্যবসা করবে না। দ্বিতীয় শর্ত, সমাজে ইয়াবাবিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তারা আরও জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে সুস্থভাবে এলাকায় ফিরতে পারলে ইয়াবা প্রতিরোধে নিজেকে সর্বদা সম্পৃক্ত রাখবে।
পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে দুই লক্ষাধিক ইয়াবা উদ্ধারের মামলা হবে। ওই মামলায় তারা কারাগারে যাবেন। তাদের বিরুদ্ধে দুদকসহ কয়েকটি সংস্থা তদন্ত করবে। আত্মসমর্পণের ব্যাপারে কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসাইন বলেন, যারা সেফহোমে এসেছেন তারা আইনি প্রক্রিয়া শেষে ভালো পথে ফেরার সুযোগ পাবেন। তবে যারা এখনও ইয়াবা ব্যবসা করছে, শনিবারের পর তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ সুপার আরও বলেন, এ পর্যন্ত একশ’র কাছাকাছি ইয়াবা গডফাদার ও ব্যবসায়ী পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
এত কিছুর পরেও বরাবরের মতোই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছেন ইয়াবা সাম্রাজ্যের আলোচিত ব্যক্তি সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি, তার ভাই কাউন্সিলর মৌলভি মুজিবুর রহমান, ইয়াবা ডন হাজী সাইফুল করিম, আনিছুর রহমান ইয়াহিয়া, উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাজাহান মিয়া, বাহারছড়ার ইউপি চেয়ারম্যান মৌলভি আজিজ উদ্দিন ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন, উখিয়া গুয়ালিয়ার ইউপি সদস্য মোস্তাক আহমদ, টেকনাফের নুরুল হক ভ‚ট্টো, ছিদ্দিক আহমদ, কক্সবাজার শহরের বাসটার্মিনাল এলাকার শাহাজান আনসারী, একই এলাকার আবুল কালাম, চকরিয়া পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম সোহেলসহ অনেকে।
জানা গেছে, টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তা বাহিনীর সেফহোমে হাজির হলেও মহেশখালী, চকরিয়া, উখিয়া ও কক্সবাজার সদরের ইয়াবা গডফাদার ও ব্যবসায়ীরা আসেনি। পাশাপাশি আত্মসমর্পণও করছেন না ইয়াবা সাম্রাজ্যের ডন হিসেবে খ্যাত হাজী সাইফুলসহ অন্তত ২০ গডফাদার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইয়াবা

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ