Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধ্বংস হচ্ছে উপকূলীয় বনাঞ্চল

ইমাম হোসেন, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:৪২ এএম

মীরসরাইয়ে দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে উপকূলীয় বনাঞ্চল। উপজেলার প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর উপকূলীয় বনাঞ্চল রক্ষায় মাত্র ৬ জন ফরেস্ট গার্ড দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে বিশাল এলাকায় অল্প সংখ্যক বনরক্ষীদের দুর্বল অবস্থানের সুযোগ কাজে লাগিয়ে একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র উপকূলীয় বনের গাছ কটে উজাড় করছে। উপকূলীয় বন ধ্বংসের ষোলকলা পূর্ণ হলে দুর্যোগ থেকে রেহাই পাবে না এ উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। এ বছর অন্য বছরের তুলনায় শীত কম হওয়ায় নির্বিচারে গাছপালা কেটে ফেলাকে দায়ী করছেন অনেকেই।

জানা গেছে, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটি ইউনিয়ন উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত। এসব উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর বনাঞ্চল রয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে নতুন করে আরো প্রায় একশ’ হেক্টর নতুন বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু উপজেলার সাহেরখালী, ইছাখালী এবং ওসমানপুর ইউনিয়নে অবস্থিত উপকূলীয় বনায়ন ঘুরে দেখা গেছে বন উজাড়ের নানা চিত্র। এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এক শ্রেণির মানুষ বন উজাড়ের সাথে জড়িত। আবার স্থানীয়দের কেউ কেউ সামান্য জ্বালানি (লাড়কি) হিসেবে কাঠ বিক্রি করতে কেটে ফেলছে মূল্যবান বনাঞ্চল। তবে ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার মত শক্তিশালী যেকোন বন্যার করাল গ্রাস থেকে মীরসরাইকে রক্ষা করতে এসব উপকূলীয় বনায়নের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন স্থানীয় উপকূলবাসী।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই এলাকায় সক্রিয় রয়েছে বেশ কয়েকটি বনদস্যু সিন্ডিকেট। দিনের বেলা নৌকা নিয়ে দা, কুড়াল হাতে বনদস্যূরা গভীর বনাঞ্চনে ঢুকে পড়ে। গাছ কাটা শেষ হলে জোয়ারের সময় নৌকায় আর ভাটার সময় পানিতে ভাসিয়ে কাঠ নিয়ে আসে। এরপর প্রকাশ্যেই রিকসা, ভ্যানে করে গাছ অন্যত্রে সরিয়ে নেয়া হয়। উপকূলীয় বনাঞ্চল থেকে কেটে আনা অধিকাংশ গাছ জ্বালানি (লাড়কি) হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়।

উপজেলার সাহেরখালী, মঘাদিয়া, গজারিয়া, দমদমা, ঘোনা, বদি উল্যাহ পাড়া, খূড়াখালী, কাজীর তালুক, সারেং পাড়া, মিয়া পাড়া, সোনাপাড়ার এলাকায় জাহাঙ্গীর, আলমগীর, বেলাল, হকসাব, সাইফুল, রাজন, বেলাযেত, রবি, লাতু, আলাউদ্দিন, আজিজুল হকসহ অর্ধশতাধিক লোক বন উজাড়ের সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানায় স্থানীয় জনগণ। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে উপকূলীয় বন বিভাগ দায়ের করা মামলা রয়েছে। এরপরও উপকূলীয় বনাঞ্চল থেকে গাছ কাটা রোধ করা যাচ্ছে না। এছাড়া স›দ্বীপ ও সোনাগাজীর গাছ চোরেরা ট্রলার (ইঞ্জিনচালিত নৌকা) করে গাছ কেটে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনেক ক্ষেত্রে বনরক্ষীরা অভিযান চালালে বনদস্যুদের আক্রমণের মুখে বাধাগ্রস্থ হয়। প্রতিদিন গাছ কেটে বনদস্যুরা পিকাপ, ভ্যান, ঠেলাগাড়ী এবং স›দ্বীপ চ্যানেল দিয়ে ট্রলার ও নৌকায় করে গাছ পাচার করে। পাশ্ববর্তী সোনাগাজী উপজেলা থেকে এসেও বনদস্যুরা গাছ কেটে নৌকায় ভরে নিয়ে যায়। বিভিন্ন প্রজাতির গাছের মধ্যে বাউল, কেওড়া, বাইন, গড়ান, কাকরা, গেওয়া, ঝাউ, আকশমনি, বাবলা, নিম, ইপিল-ইপিল, নারিকেল, খেজুর, তালগাছ বেশি নিধন করছে।

উপকূলীয় রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় বনাঞ্চল রক্ষায় তিনটি বিট অফিস ও একটি ক্যাম্প অফিস রয়েছে। এগুলো হলো মঘাদিয়া, বামন সুন্দর, ডোমখালী বিট অফিস ও ইছাখালী ক্যাস্প অফিস। ডোমখালী বিট অফিসের বিট কর্মকর্তার পদটি শূন্য রয়েছে। একজন মাত্র ফরেস্ট গার্ড সব কাজ করছেন। এছাড়া মঘাদিয়া ও বামন সুন্দর বিট অফিসে ৫ জন ফরেস্ট গার্ড বন রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন।
উপক‚লীয় ভারপ্রাপ্ত বন রেঞ্জ কর্মকর্তা এরফান হোসেন জানান, উপকূলীয় ইউনিয়ন সাহেরখালীতে কোস্টগার্ড থাকায় বনাঞ্চল থেকে গাছ কাটার ঘটনা এখন অনেক কমে গেছে। এরপরও কিছু কিছু লোক বন থেকে গাছ কাটার কাজ করে যাচ্ছে। গত ৩ বছরে বাগানের গাছ কাটার ঘটনায় কমপক্ষে অর্ধশত মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় তারা বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ