Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কমছে না ভেজাল ওষুধের কারবার

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, কুমিল্লা থেকে: | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:২৩ এএম

ভেজাল ওষুধে বাজার সয়লাব। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ভেজাল, মানহীন ও নকল ওষুধ। কুমিল্লা শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল সবখানেই ভেজাল ওষুধের দৌরাত্ম্য। জীবন বাঁচানোর ওষুধও কখনো কখনো হয়ে উঠছে প্রাণঘাতি।
ভেজাল ও নকল ওষুধের কারণে অনেক সময় রোগী সুস্থ হওয়ার বদলে হয়ে পড়ছে আরো অসুস্থ। প্রাণহানির ঘটনাও কম নয়। কিন্তু ওই সব ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিরা পার পেয়ে যাচ্ছে আইনের ফাঁকে। বাজারে নকল ওষুধ ছড়ানো চক্রের অনেক সদস্য ধরা পড়ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের খানিকটা শাস্তিও হচ্ছে। কিন্তু তাতেও কমছে না ভেজাল ওষুধের কারবারিদের দৌরাত্ম্য। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে ভেজাল ওষুধ তৈরির কারখানা। অন্যদিকে রোগীর স্বজনরা বিভ্রান্ত হয়ে কিনছে নকল ওষুধ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে গ্রেফতারও হচ্ছে ওই চক্রের সদস্যরা। বাজারে পাওয়া ওষুধ আসল না নকল, তা সাধারণের পক্ষে বোঝা কঠিন। আর ভেজাল ওষুধসহ আটক ব্যক্তিদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে যে ধরনের সাজা দেয়া হয়, তা মূলত প্রতারণা ও ওষুধ নকল করার অপরাধে। এসব ওষুধ সেবনে ক্যান্সার, স্ট্রোক ও কিডনি বিকল হয়েছে অনেকেরই। আবার কারো মৃত্যুও হয়েছে ভেজাল ওষুধের কারণে।
অলিতে গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো কুমিল্লায় গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক ওষুধের দোকান। ওষুধ প্রশাসনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এবং প্রশিক্ষণ ছাড়াই ফার্মেসি দিয়ে বসে পড়েছেন ওষুধ ব্যবসায়। এসব ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই হায়ার এ্যান্টিবায়োটিক, নিষিদ্ধ, ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিভিন্ন নিম্নমানের উত্তেজক নানা প্রকার ওষুধ বিক্রি করছে অবাধে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নকল ওষুধের কারবারিরা বিভিন্ন গোপন কারখানায় ওষুধ তৈরি করে। তাতে রোগ নিরাময়ের উপাদান থাকে না। বরং নানা রকম রাসায়নিক দ্রব্যের মিশ্রণে ওষুধ হয়ে ওঠে বিষ। এরপর তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির লেবেল তৈরি করে লাগিয়ে বাজারে ছেড়ে দেয় নকল ওষুধ। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করে তারা প্যাকেটে মেয়াদ, ব্যাচ নম্বর, মূল্য ইত্যাদি নতুনভাবে সংযোজন করে।
কুমিল্লায় ওষুধের দোকান বা ফার্মেসির সংখ্যা কত এ নিয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, ড্রাগ লাইসেন্স প্রদানকারী সংস্থা, কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি কারও কাছেই সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে ওষুধ প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী কুমিল্লাা জেলায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফার্মেসির সংখ্যা ১৬৭৯টি। কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির তথ্য অনুযায়ী ধারণা অনুযায়ী ওষুধ ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৪ হাজার।
তবে নামে-বেনামে ফার্মেসির সংখ্যা ৬ হাজারের বেশি। যার বেশির ভাগেরই নেই ড্রাগ লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স বা প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্ট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওষুধ ব্যবসায়ী বলেন, লাইসেন্স পাওয়ার জন্য মোটা অংকের ঘুষ দিয়েও ওষুধ প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও দালালদের দ্বারা নানা প্রকার হয়রানির শিকার হতে হয়। তাছাড়া একটি লাইসেন্স নিতে হলে সব শর্ত মানার পরেও ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়ে যায়। মাধ্যমিক পার হননি এমন অনেকেই ফার্মেসিতে চাকরি করছেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অন্তত দশটি ফার্মেসিতে যারা চাকরি করেন অনেকেই মাধ্যমিকের গন্ডি পার হননি। ব্যবস্থাপত্রও পড়তে পারেন না। অনুমান করে ওষুধ বিক্রি করার অভিযোগও আছে। রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত হাই এ্যান্টিবায়োটিক, ঘুমের বড়ি, ব্যথা নাশক ও নিম্নমানের যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট বিক্রি করছে।
জানা গেছে, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে ভালোমানের ওষুধের চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি কমিশন দেয়া হচ্ছে। এতে করে বেশি লাভের আশায় ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রিতে বেশি আগ্রহী হচ্ছে এসব ওষুধ ব্যবসায়ীরা।
কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কুমিল্লার সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, এই সংগঠনের সদস্য হতে হলে ড্রাগ লাইসেন্স ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর দাখিলের সনদসহ ফার্মেসির সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। সংগঠনের বাইরে ৬ গুণ ওষুধের দোকান রয়েছে যাদের ওষুধ প্রশাসনের নির্ধারিত নিয়মে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। সরকারি হাসপাতালের বিক্রয় নিষিদ্ধ ওষুধ এসব দোকানের মাধ্যমেই বিভিন্ন এলাকায় মানুষের হাতে চলে যায়।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কুমিল্লার ড্রাগ সুপার হারুনুর রশিদ বলেন, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ নিম্নমানের ওষুধ ব্যবসায়ীদের বিরদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অলিগলিতে এসব ব্যবসায়ীরা যাতে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে না পারে সে জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম আরো বেশি করে পরিচালিত হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ