Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এবার প্রকল্পে গতি ফেরাতে মাঠে পরিকল্পনামন্ত্রী

বৈঠক হবে সকল বিভাগে, আজ খুলনায়

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বিদেশি উন্নয়ন সংস্থাগুলো সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতির কারণে বরাবরই বিরক্তি প্রকাশ করে আসছে। অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে একাধিকবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে তাগিদ দিয়ে আসছেন এ সব সংস্থার প্রতিনিধিরা। প্রকল্পের নজরদারী বাড়াতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসকের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছে। এত কিছুর পরও প্রত্যাশিত গতি আনতে এবার নিজেই মাঠে নামছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। প্রতিটি বিভাগ সফর করে তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি আজ বুধবার শিল্পনগরী খুলনা সফর করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় সূত্র জানায়, বুধবার সকালে খুলনায় যাবেন এম এ মান্নান। সফরসঙ্গী হিসেবে মন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন আইএমইডি’র ভারপ্রাপ্ত সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহ। খুলনার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় বিভাগীয় কমিশনার ছাড়াও যশোর, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, বাগেরহাট ও জিনাইদহের জেলা প্রশাসক উপস্থিত থাকবেন।
সূত্র জানায়, খুলনা বিভাগে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে হাজির থাকতে বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আইএমইডির ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ছাড়াও এ সভায় সরকারের বিভিন্ন দফতরের বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনতে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এ মুহূর্তে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার উন্নয়ন নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে প্রকল্পের গতি বাড়ানোর বিকল্প নেই। প্রকল্পের সমস্যা চিহ্নিত করতে দেশের প্রতিটি বিভাগ সফর করবেন বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান, পরিকল্পনা মন্ত্রীর সভাপতিত্বে আজকের বৈঠকে চলমান প্রকল্পের সমস্যাগুলো তুলে ধরবেন সংশ্লিষ্টরা। আলোচনার ভিত্তিতে এ সব সমস্যা সমাধানে সম্ভাব্য করণীয় নির্ধারণ করে দেয়া হবে আইএমইডির পক্ষ থেকে। নির্ধারিত সময়ে মান নিশ্চিত রেখে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে মন্ত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হবে বলেও তারা জানান।
আইএমইডি সূত্র জানায়, সফরকালে খুলনায় নির্মানাধীন খানজাহান আলী বিমানবন্দরের কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন করবেন মন্ত্রী। সফর শেষে আজ রাতেই তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি রোববার তিনি প্রকল্পের কাজ তদারকি করতে সিলেট বিভাগ সফর করবেন। পর্যায়ক্রমে সারা দেশের সব বিভাগেই সফরে করবেন মন্ত্রী।
সূত্র জানায়, প্রকল্পভিত্তিক পরিদর্শন দল পাঠানো ও সংশ্লিষ্টদের মন্ত্রনালয়ে ডেকে আনার বাইরে ২০১৭ সালে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন শুরু করে আইএমইডি। ওই বছরের শেষ অর্ধেক সময়ে ২৯টি জেলায় ভিডিও কনফারেন্স করা হয়। তার আগে পরীক্ষামূলকভাবে কনফারেন্স করা হয় ১০ জেলায়। গতবছরের শুরুর দিকে অবশিষ্ট জেলাগুলোর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।
আইএমইডি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ৪৯ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। ৫৭ মন্ত্রনালয় ও বিভাগ মিলে এবার ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন করছে। এ হিসাবে এডিপি বাস্তবায়নের হার ২৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করতে পরবর্তী ছয় মাসে ব্যয় করতে হবে ১ লাখ ৩১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা।
শুরুর দিকে এডিপি বাস্তবায়নে গতি না আসায় শেষের দিকে লক্ষ্য পূরণে মন্ত্রনালয় ও বিভাগগুলোর সামনে বাড়তি অর্থ ব্যয়ের চাপ পড়ছে। এর ফলে কাজের গুনগত মান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। শেষ দিকে ব্যয়ের বড় একটা অংশ অপচয় হতে পারে বলেও মনে করেন তারা। এ বাস্তবতা মেনে নিয়েই এডিপি কাটছাটের উদ্যোগ নিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় ও অর্থ মন্ত্রনালয়। এর পাশাপাশি এডিপি বাস্তবায়নে গতি আনতে সব মন্ত্রনালয় ও বিভাগের সচিবদের অংশগ্রহণে এ সভার আয়োজন করা হচ্ছে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, পরিকল্পামন্ত্রীর মাঠ পর্যায়ে সফর ভালো উদ্যোগ। কারণ অর্থছাড় হলেও প্রকল্প শেষ হচ্ছে না। তাই পরিকল্পনামন্ত্রীর এ তদারকি কাজে গতি বাড়াবে ঠিক। তবে এটিই সমাধান নয়; কারণ সমস্যাটা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনার দুর্বলতা, দরপত্রের দীর্ঘসূত্রিতা, প্রজেক্ট ব্যবস্থাপনার অস্থিতিশীলতা (প্রকল্প পরিচালকের বদলি), দুর্নীতি, ঠিকাদারদের অনিয়ম এসব মৌলিক সমস্যা দূর করতে হবে। তাই মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রকল্পের মৌলিক সমস্যা দুরীকরণে ভূমিকা রাখতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিকল্পনামন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ