Inqilab Logo

রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খেয়ে কোনো শিশুর মৃত্যু হয়নি : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

গাভির তরল খোলা দুধে মাত্রতিরিক্ত কীটনাশক, সীসা ও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খেয়ে কোনো শিশুর মৃত্যু হয়নি বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, গত শনিবার দেশব্যাপী পরিচালিত ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনে সোয়া ২ কোটি শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে। তবে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খেয়ে কোনো শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
গতকাল রোববার রাজধানীর মহাখালীস্থ জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) আইএসও সনদ অর্জন এবং দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত খাবারের মানসম্পর্কিত গবেষণা কাজের ফলাফল প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ দাবী করেন। প্রতিষ্ঠানটি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় গাভির খাবার, দুধ, দই ও প্যাকেটজাত দুধের ওপর এই গবেষণা পরিচালন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খেয়ে একটি শিশুর মৃত্যু ঘটেছে বলে যে খবর পাওয়া গেছে তার মৃত্যুল সঙ্গে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুলের কোন সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, শিশুটি সুস্থ অবস্থায় টিকা খেয়ে বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়েছে। ঘুমে থাকা অবস্থায় তার মা তাকে সুজি খাওয়ায়। তখন সেই সুজি তার শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে সমস্যার সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে এ কারনেই তার মৃত্যু ঘটে। খরব পাওয়ার পরেই বিষয়টি তদন্তে স্থানীয় সিভিল সার্জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
এসময় আইএসও সনদ অর্জণ করায় ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের এখন আন্তর্জাতিক ল্যাব হয়েছে। এখানে খাবারের মান যাচাই করা হবে। পাশপাশি দেশের মানুষ যেন র্নিভেজাল, মানসম্পন্ন খাবার খেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
গবেষণা ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে গাভির তরল খোলা দুধে মাত্রতিরিক্ত কীটনাশক, সীসা ও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা। এসব ক্ষতিকর উপাদানের পাশপাশি দুধে তারা পেয়েছেন আলফাটক্সিন এবং বিভিন্ন অণুজীবও। খোলা দুধের পাশপাশি প্যাকেটজাত গাভির দুধেও অ্যান্টিবায়োটিক ও সীসার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি। এমনকি সাধারণ দোকানের দই থেকে শুরু করে নামি-দামী প্রতিষ্ঠানের দইয়েও মিলেছে অতিরিক্ত সীসা-অনুজীব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোন খাবারের মধ্যেমে শরীরে যদি মাত্রতিরিক্ত সীসা, আলফাসক্টিন এবং কীটনাষক প্রবেশ করে তাহলে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ সাময়ীক বা স্থায়ীভাবে অকেজো হয়ে পড়তে পারে। কিডনি বিকল বা ক্যান্সারের মতো রোগ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
এনএফএসএল সূত্র জানায়, এই গবেষণায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাভির দুধের ৯৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ঢাকাসহ তিন জেলার ছয়টি উপজেলাসহ ১৮টি স্থান থেকে দুধের পাশাপাশি অন্যান্য নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। গাভির দুধ ও গোখাদ্য সরাসরি খামার থেকে সংগ্রহ করা হয়। দই ঢাকা শহরের বিভিন্ন নামী-দামী দোকান ও আশপাশের উপজেলা পর্যায়ের সাধারণ দোকান থেকে সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন সুপার স্টোর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত তরল দুধ এবং আমদানি করা প্যাকেট দুধ। এগুলো নির্দিষ্ট নিয়মে ল্যাবরেটরিতে পৌঁছানোর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।
গবেষকেরা জানান, প্রায় সব গোখাদ্যে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। কীটনাশকও মিলেছে কোনো কোনো খাবারে। রয়েছে সিসা ও ক্রোমিয়ামও।
গবেষণায় দইয়ের ৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যার একটিতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ সিসা পাওয়া গেছে। আর ৫১ শতাংশ নমুনায় মিলেছে বিভিন্ন ধরনের অণুজীব।
এনএফএসএলের গবেষণায় দুধ ও দইয়ে যেসব ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে সেগুলো ক্ষতিকর কিনা জানতে চাইলে আইইডিসিআর’র প্রাক্তন পরিচালক প্রফেসর ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, শরীরে মাত্রতিরিক্ত সীসা, আলফাসক্টিন এবং কীটনাষক প্রবেশ করে তাহলে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ সাময়ীক বা স্থায়ীভাবে অকেজো হয়ে পড়তে পারে। কিডনি বিকল বা ক্যান্সারের মতো রোগ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাছাড়া অনুজীব থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে নানা ধরনের মারাত্মক রোগ। খাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহনের মাধ্যমে মনবদেহ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠবে। একটা পর্যায়ে গিয়ে রোগ প্রতিরোধে কোন অ্যন্টিবায়োটিক আর কার্যকর হবে না। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হবে, যখন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে আর রোগ সারানো সম্ভব হবে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য ও বিশ্বস্বাস্থ্য) হাবিবুর রহমান, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি, ন্যাদারল্যান্ড দূতাবাসের আন্ডারসেক্রেটারি, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক নির্মলেন্দু চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ তিন বছরের পরিক্রমায় এনএফএসএল গত ২৫ অক্টোবর আইএসও সনদ অর্জন করে। যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে খাদ্য পরীক্ষাগার হিসেবে প্রথম। এর ফলে আন্তর্জাতিকভাবে খাদ্য ও খাদ্যদ্রব্যের পরীক্ষা সংক্রান্ত রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে এবং রফতানি পণ্যের প্রয়োজনীয় মান পরীক্ষা দেশেই করা সম্ভব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাস্থ্যমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ