পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে’ রবি ঠাকুরের একটি কবিতায় নদীমাতৃক বাংলাদেশে বৈশাখ মাসের এটি ছিল সাধারণ চিত্র। রবি ঠাকুর আজ বেঁচে থাকলে হয়তো এখন মাঘ মাসেই এদেশে পানির অভাবে ছোট ছোট নদীগুলোর অপমৃত্যু আর পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলার মত বড় বড় নদীগুলোর মুমূর্ষু দশা দেখে লিখতেন করুণ সব ছন্দমালা। তবে বর্তমান কালের কবিরা সামাজিক মাধ্যম নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে নদীর কান্না, হাহাকার, আর্তনাদ এসবের কিছুই তাদের কাব্যের উপজীব্য হয় না।
সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে উত্তরে কাজিপুর, ধুনট, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা হয়ে ফুলছড়ি বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত নৌপথে ঘুরে দেখা গেছে উত্তর জনপদে শত শত নদ-নদীর অপমৃত্যু রোধে এক যোগে কবি সাহিত্যিক, চলচ্চিত্রকার, রাজনীতিবিদ সবাই একাট্টা হয়ে মাঠে না নামলে অনিবার্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে দেশকে। এককালের সুজলা সুফলা উত্তর জনপদে নিরবে যে মরুময়তা গ্রাস করছে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে প্রতিবেশি দেশও রেহাই পাবে না ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথ নদী কমিশনের বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে দেখা যায়, ৭৫ এর আগে উত্তর জনপদের বৃহত্তম নদী পদ্মার উজানে ফারাক্কায় ব্যারেজ পরীক্ষামূলকভাবে চালুর কথা বলে শুকনো মওশুমে পানি প্রত্যাহার করে ভারতীয় ভূখন্ডের ভাগিরথি নদীতে নিয়ে যেতে থাকে। এর প্রভাবে রাজশাহী অঞ্চলের পদ্মার শাখা নদীগুলো আস্তে আস্তে শুকিয়ে যেতে থাকে। অন্যদিকে ২০১৪ সালে তিস্তার উজানে ভারতের গজল ডোবায় ব্যারেজ নির্মাণ করে সম্পূর্ণ পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় রংপুর অঞ্চলের দেড় শতাধিক নদনদী এখন রীতিমত মুমুর্ষু।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা প্রায় সব নদ-নদীর উজানেই ছোট বড় স্পার, ব্যারেজ ইত্যাদি নির্মাণ করে শুকনো মওশুমে পানি প্রত্যাহার করে ভারত নিজ ভূখন্ডে জমিতে সেচ সুবিধা দিচ্ছে। আবার বর্ষা মওশুমের অতিরিক্ত পানি প্রবাহ ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশ অংশে বন্যার সৃষ্টি করছে। অথচ উত্তরের আঞ্চলিক রাজনীতিতে পানি সঙ্কটের ভয়াবহতা নিয়ে কোন আলোচনাই নেই। ১৯৭৬ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কামুখী বিশাল লং মার্চের খবরাখবর ভারতকে আন্তর্জাতিকভাবে কোনঠাসা করে ফেলেছিল। তিস্তা চুক্তির বিরোধিতা করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সৃষ্ট রাজনীতিক বক্তব্য থেকেও এদেশের রাজনীতিবিদদের অনেক শিক্ষণীয় উপাদান থাকলেও তা নিয়ে উত্তরের স্থানীয় রাজনীতিবিদদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
সম্প্রতি তিস্তা নদীর উজানে ভারতীয়রা নদীর প্রায় সব পানিই একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এতে নীলফামারী ও লালমনিরহাটের সীমানা সন্নিহিত তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ কমে প্রায় এক হাজার কিউসেকে নেমে আসে। ফলে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে তিস্তা নদী। তিস্তা পানিশূন্য হয়ে পড়ায় তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের মিলিত ধারা নিয়ে সৃষ্ট যমুনাও এখন পানির অভাবে ধুঁকছে। যমুনা সেতুর নীচে এখন কেবলই নালার মত ক্ষীণকায় স্রোতধারা বয়ে চলেছে। যমুনা সেতুর উত্তর থেকে বাহাদুরাবাদ, ফুলছড়ি পর্যন্ত নাব্য সঙ্কটে বড় নৌযান, জাহাজ, স্টিমার চলাচল বন্ধ রয়েছে। পানির অভাবে বাঘাবাড়ি ঘাটে সার, সিমেন্ট , তেলবাহী বার্জগুলোর ঘাটে নোঙর করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ।
বৃহত্তম যমুনা নদীর দুকূলেই পানির অভাবে অনেক নৌকায় ডাঙ্গায় তুলে বা নদীর কিনারে ফেলে রাখা হয়েছে। নৌকার মাঝিদের ভাষায় এখন ঢাল সিজন, বর্ষা আসলে নদীতে পানিপ্রবাহ বাড়লে নৌকাগুলো পুনরায় ভাসানো হবে। বগুড়ার সারিয়াকান্দির নৌকা ব্যবসায়ী মাঝি এনামুলের ভাষায় ফেব্রুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত ঢাল সিজনে তাদের সারা দিনে যে ক্ষ্যাপ পাওয়া যায় তাতে নৌকা প্রতি আয় আসে ৪০০-৫০০ টাকা। আবার বর্ষাকালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২/৩ হাজার বা তারও বেশি। ৩৮ বছর বয়সী এনামুল তার বাল্য ও কৈশোরের স্মৃতি হাতড়ে বলে, ২ যুগ আগেও মাঘ-ফাল্গুন মাসে যমুনায় শত শত মৎস্যজীবী দিনে রাতে নৌকায় নৌকায় ঘুরে বেড় জাল ফেলে পাঙ্গাশ, ইলিশ, বোয়াল, রুই, কালিবাউশ মাছ ধরে তা বিক্রি করে সুখে দিন গুজরান করতো । আর এখন পানিও নাই, মাছ ও নাই। বাধ্য হয়ে পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে গেছে মাঝি’ নামে এলাকায় পরিচিত মৎস্যজীবীরা ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।