পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বগুড়ায় যে মুলার কেজি ২/৩ টাকা; রাজধানীর বাজারে সেই মুলা বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে। ঢাকা থেকে সোয়া দুইশ কিলোমিটার দুরের বগুড়ার কৃষক উৎপাদন করে এক কেজিতে পাচ্ছেন ৩ টাকা। ঢাকার বাজারে ১৫টাকা বিক্রি হওয়ায় মাঝখানে ১২ টাকা যাচ্ছে মধ্যস্বত্ত্বাভোগীদের পেটে। অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রে প্রায় অভিন্ন অবস্থা। বলা হচ্ছে পণ্যের ঘনঘন হাতবদল, পথে পথে চাঁদাবাজী, পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারণে এই অবস্থা। এই অভিযোগের বাস্তবতা থাকলেও বিশেষজ্ঞদের মতে পাকিস্তান, মিয়ানমার, ভারতের মতো বাংলাদেশের সবজি ইউরোপ-আমেরিকায় রফতানি করা গেলে কৃষককে এই অসহায় অবস্থায় পড়তে হতো না। নানান রকমের টাটকা সবজি রফতানী করে গার্মেন্টসের মতো বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হতো।
এবারও দেশব্যাপি সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। সবজিতে ভরে গেছে ক্ষেতের পর ক্ষেত। বগুড়া, জয়পুরহাট, রংপুর, গাইবন্ধা, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, নেত্রকোনা, যশোর, নাটোরসহ প্রায় কুড়িটি জেলার সবজির উৎপাদন হয়েছে ব্যাপক। কিন্তু ফসল ফলিয়েও গ্রামের কৃষকরা পাচ্ছেন না ন্যায্য দাম। কোথাও কোথাও উঠছে না উৎপাদন খরচ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পথে পথে চাঁদাবাজী ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি জন্যই জমিতে বিক্রি করা সবজি রাজধানীতে তিনগুন চারগুন বেশি দামে ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে। তবে অন্যান্য পণ্যের মতো নানা জাতের সবজি বিদেশে রফতানীর ব্যবস্থা করা গেলে কৃষকরা পণ্যের ন্যার্য্য মূল্য পাবেই। বাংলাদেশের সবজির মান উন্নত দাবি করে তারা বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে সবজি যায় অনেক আগ থেকেই। সেটার পরিমাণ বৃদ্ধি এবং ইউরোপেও চাহিদা বাড়ছে। আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সবজি রফতানির ব্যবস্থা করা গেলে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতির চিত্রই পাল্টে যাবে। এ ক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগ নিতে পারে; আবার ব্যবসায়ীদের সবজি রফতানীতের উৎসাহী করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। যারা বিদেশে সবজি রফতানি করেন তারা জানান, বাংলাদেশের উৎপাদিত সব ধরনের সবজির চাহিদা বিদেশে রয়েছে। যদি ঠিকমতো সবজি রফতানির ব্যবস্থা করা যায় তাহলে সবজি রফতানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। পাকিস্তান, মিয়ানমার, ভারত সবজি রফতানি করে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করে বলে তারা জানান। যদিও এক্ষেত্রে রফতানিতে উদ্বুদ্ধ করাসহ কৃষকদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কথাও বলেছেন সংশ্লিস্টরা।
ইনকিলাবের বুরো, আঞ্চলিক অফিস, জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা সবজি উৎপাদনকারী কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশব্যাপি টমেটো, আলু, মূলা, ফুলকপিসহ নানা ধরণের সবজির ব্যাপক উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে লাভের মুখে দেখছে না কৃষক। এমনকি কোথাও কোথাও লাভ তো দুরের কথা উৎপাদন খরচও উঠছে না। পরিশ্রম করেও মূল্য না পাওয়ায় হতাশ দেশের কৃষক। অধিকাংশ কৃষকেরই মাথায় হাত। এদিকে কৃষক উৎপাদিত পণ্যের দাম না পেলেও পথে পথে চাঁদাবাজী, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এবং একের পর এক হাতবদলে ঢাকায় এখনো সবজির দাম চড়া।
সবজি চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাভের আশায় ধার-দেনা করে অনেক কৃষক জমিতে সবজি চাষ করলেও তা তুলে বাজারে বিক্রি করে যে অর্থ উপার্জন হচ্ছে তা দিয়ে শ্রমিকের মজুরি দেওয়াই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। তাই মাঠে বা ক্ষেতে অধিকাংশ সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ কৃষক সবজি বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলতে না পারলেও বাজারের অবস্থা ভিন্ন। কৃষকেরা যে সবজি তাদের মাঠে বিক্রি করছেন কেজিতে ৩ টাকা থেকে ৫ টাকা। সেই সবজি রাজধানীর বাজারে ওঠার সাথে সাথে বেড়ে হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। তাই আগ্রহ হারাতে বসেছেন উৎপাদনকারী চাষীরা। কৃষক লাভবান হতে না পারলেও সুযোগ নিচ্ছেন মধ্যস্বত্ত¡ভোগী এমনটাই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী চাষীরা। এদিকে সঠিক দাম না পাওয়ায় হতাশ কৃষকরা লোকসান কমাতে আদর্শ বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায় বগুড়াতে মুলার কেজি ২/৩ টাকা হলেও রাজধানীর বাজারে সেই মুলা বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে। অন্যান্য পণ্যের মূল্যেও গ্রাম ও রাজধানীর ঢাকার বাজারের ফরাক প্রায় অভিন্ন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ফুলকপি সর্বোচ্চ ৫টাকা এবং বাধাকপি ২টাকা পিচ বিক্রি হলেও রাজধানীতে ফুলকপি ১৫/২০ টাকা এবং বাধাকপি ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুন রাজধানীতে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও চাপাই নবাবগঞ্জের কৃষক কেজি প্রতি বিক্রি করছেন ৫/৬ টাকায়।
রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ টাকায়। অথচ প্রতি কেজি টমেটো কৃষক বিক্রি করছেন ৫ থেকে ৭ টাকায়। যদিও কৃষকের প্রতি কেজি টমেটো উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৮ থেকে ১০ টাকা। এভাবে দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গ্রামীণ কৃষক।
ময়মনসিংহের আব্দুল মজিদ কারওয়ান বাজারে টমেটো এনে পড়েছেন বিপাকে। তিনি জানান, ক্রেতা কম। যেটুকু বিক্রি হচ্ছে তাতেও গুণতে হচ্ছে লোকসান। অনেকে টমেটো রেখেই চলে গেছেন। বিক্রি না হওয়ায় সেসব হচ্ছে নষ্ট। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের হাটনাইয়া গ্রাম থেকে জমির বাছাই করা টমেটো ৫ টাকা কেজিতে ক্রয় করেছেন সাখাওয়াত হোসেন। তিনি জানান, জমি থেকে ভালো মানের টমেটো কিনেছেন তাই বলে দাম একটু বেশি। পাইকাররা কিনছেন আরও কম দামে। সূত্র জানায়, পাইকারীতে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৫ টাকায়। অথচ প্রতি কেজি টমেটো উৎপাদনে কৃষকের ৫ থেকে ৭ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। যদিও লাভ ঠিকই করছে ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা। অথচ দেশি টমেটোর মৌসুম শেষে ভারত থেকে টমেটো আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। সেসব ভোক্তাদের কিনতে হয় ৮০ থেকে ১৫০ টাকায়। দেশি টমেটো রপ্তানিও হয় না। নেই সংরক্ষণের ব্যবস্থাও। এদিকে অধিকাংশ ক্ষেতে যে পরিমান টমেটো রয়েছে, তা তুলে বাজারে গিয়ে বিক্রি করলে যে পরিমান অর্থ উপার্জন হবে তা দিয়ে শ্রমিকের মূল্য পরিশোধ করাই সম্ভব নয়। তাই মাঠে বা ক্ষেতে অধিকাংশ টমেটো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ইনিকলাবের বগুড়া ব্যুরো জানিয়েছে, বগুড়ায় শীতকালীন সবজি আলু, বেগুন, সিম, ফুলকপি ,বাঁধাকপি, পাতাকপি, ছাঁচি লাউ ও টমেটোর দাম পড়ে গেছে। সবজীগুলোর উৎপাদন খরচতো দূরের কথা সেগুলো কামলা ও পরিবহন খরচ দিয়ে পাইকারী হাট বা আড়ত গুলোতে নিয়ে আসার মত দামও মিলছেনা। উৎপাদক চাষীরা পড়েছে চরম বিপাকে।
গতকাল রোববার বগুড়ার মহাস্থানগড়ের বিরাট পাইকারি হাট ও সেখানকার আড়তগুলোতে পর্যাপ্ত কাঁচামালের স্তুপ জমে আছে। কারণ মওশুমের প্রধাণতম ফসল সাদা হল্যান্ড আলু মাত্র ৩০০ থেকে ৩৫০, লাল হল্যান্ড (ডায়মন্ড) আলু প্রতিমন ৪৫০ টাকায় এবং বগুড়ার বিখ্যাত পাকড়ী আলু ৫০০ টাকা মন দরে বিক্রি করতে গিয়েও মহাজন ফড়িয়া ক্রেতা খুজে পাচ্ছেননা বিক্রেতারা। ফুলকপি মাত্র ৫ টাকা ও বাঁধাকপি ২ টাকা পিস বিক্রি করতে চাইলেও কেউ তা’ কিনছেনা। প্রতিকেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২/৩টাকায় । প্রকার ভেদে বেগুন মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ফলে যেসব সবজী চাষীরা শীতকালীন সবজী ন্যুনতম খরচে বিক্রি করে সংসার খরচ চালাতে এবং উদ্বৃত্ত অর্থে বোরো উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল তাদের তাদের পড়েছে মাথায় হাত। আগামীতে তারা কি করবে তা বুঝে উঠতে পারছেনা।
রপ্তানির সুযোগ
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৬০ ধরনের ও ২০০টি জাতের শাক-সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। আবার এসব শাক-সবজির ৯০ শতাংশ বীজ দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। একই সঙ্গে কৃষি জমির পরিমাণ না বাড়লেও গত এক দশকে বাংলাদেশে সবজির আবাদি জমির পরিমাণ ৫ শতাংশ হারে বেড়েছে।
জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৪০ বছরে বাংলাদেশে সবজি উৎপাদন বেড়েছে কমপক্ষে ৫ গুণ। বাংলাদেশে রবি মৌসুমে; বিশেষ করে নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি মাসে চাহিদার তুলনায় কয়েক গুণ বেশি সবজি উৎপাদন হচ্ছে। ফলে দেশের চাহিদা মিটানোর পরও বিপুল পরিমাণ শাক-সবজি বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে। যদিও এক্ষেত্রে কৃষকদের মধ্যে সচেততনাতর অভাব রয়েছে।
দেশে বর্তমানে প্রায় ২ কোটি কৃষক পরিবার কম-বেশি সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। জমির পাশের উঁচু স্থান, আইল, বাড়ির উঠান, এমনকি টিনের চালাতেও এ দেশের কৃষকরা সবজির চাষ করছেন। এমনও দেখা গেছে, ফল বাগান ও বাড়ির রাস্তার পাশের উঁচু গাছের মধ্যেও মাচা করে সবজির চাষ করছেন অনেক কৃষক। এমন অনেকে বাড়ির ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির সবজি উৎপাদন করছেন। ফলে কৃষি জমির পরিমাণ কমলেও সবজি চাষের এলাকা বেড়েছে। এ ছাড়া নদী ও জলাশয়ে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজির উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে।
বিদেশে বাংলাদেশের শাক-সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে যেসব দেশে বাংলাভাষীরা বসবাস করছেন, সেসব দেশে বাংলাদেশের সবজির চাহিদা বেশি। দেশের রপ্তানিকৃত সবজির প্রায় ৬০ শতাংশই মধ্যপ্রাচ্যে এবং বাকি ৪০ শতাংশ ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে যায়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, গত অর্থবছরে প্রায় ৭শ’ কোটি টাকার সবজি রপ্তানি হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে বাংলাদেশের সবজি রপ্তানি হয়।
বাংলাদেশ ফল, সবজি এবং এ-সংক্রান্ত পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফভিএপিইএ) উপদেষ্টা মনজুরুল ইসলাম বলেন, পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই আমাদের সবজি-ফলের রপ্তানি বেশ ভালো। সেসব দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাই এসব কৃষিপণ্যের বড় ক্রেতা। আমরা যদি মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় মানুষদের ক্রেতা বানাতে পারি, তাহলে আমাদের রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার লোকজনও এ দেশের সবজি খাচ্ছেন। তবে আমরা এখনো বিদেশিদের আমাদের সবজির ক্রেতা বানাতে পারিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।