Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘যেখানে যাও ভালো থেকো’ গানের সুরকার আবু তাহের চিশতীর খোঁজ কেউ রাখে না

আশিক বন্ধু: | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

সত্তর-আশি দশক জুড়ে ‘যেখানে যাও ভালো থেকো, সুখে না হয় দুখে আমায় ডেকো’- গানটি অসাধারণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। গানটি আবু তাহের চিশতীর সুরে গেয়েছিলেন শিল্পী আব্দুল মান্নান রানা, গানটির গীতিকার ডা. গোলাম মোস্তফা। তবে মানুষের মুখে মুখে ফেরা এই গানটির সুরকার যিনি তার নামটি অনেকের কাছে অজানা। প্রচারবিমুখ এই মানুষটির নাম আবু তাহের চিশতী। এমন একটি জনপ্রিয় গান সুর করার পরও তিনি তার প্রাপ্ত রয়্যালিটি বা সম্মানি এখনো পাননি। সে সময় ফজলে লোহানীর জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘যদি কিছু মনে না করেন’-এ গানটি প্রচারের পর সারাদেশে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর ‘জোনাকী জ¦লে’ ও ‘সাগর সেচার স্বাদ’ নাটক দুটিতে গানটি যুক্ত করার পর শ্রোতাদের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এত জনপ্রিয় একটি গানের সুরকার আবু তাহের চিশতী আড়ালেই থেকে গেছেন। অনেকটা অভিমানে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেণ। বাংলাদেশ বেতারে দীর্ঘসময় ধরে সামান্য বেতনে চাকরি করে যাচ্ছেন সংগীত পরিচালক হিসেবে। সুরকার সংগীত পরিচালক আবু তাহের চিশতী বলবেন, ‘অল্প বেতনে কি আর জীবন চলে? তবুও গানকে ভালোবাসি বলেই সুরের নেশায় পড়ে আছি বেতারে। সব গায়ক গায়িকারা লাভবান হয়, তাদেরকে সবাই খোঁজে। কিন্তু দিনশেষে আমরা সৃষ্টির পেছনের মানুষ পেছনেই অবহেলায় পড়ে থাকি। এভাবে হয়তো অবহেলায় একসময় নীরবে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। এটাই কপাল আমাদের। সংগীত জীবনের পেছনে যা অল্প অর্জন ছিল তাও সহধর্মীনীর চিকিৎসা ব্যয়ে খরচ করেছি। এমনকি গানের জন্য নিজের পৈতৃক ভিটেবাড়িটিও বিক্রি করে দিয়েছি। আর যে কয়দিন বাঁচবো, এ সময়টিও কষ্ট করছি। দেশের জন্য, গানের জন্য জীবন দিয়েও যেন একটু শান্তি নাই। তাই সরকারের কাছে এবং গানের মানুষদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আপনারা এগিয়ে আসবেন, তাহলে বাকি জীবনটা একটু হলেও শান্তিতে কাজ করে যেতে পারবো। আবু তাহেরের তিন মেয়ে এক ছেলের অভাবের সংসার টানতে টানতেও গান ছেড়ে যাননি। একাধারে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, সুরকার ও সংগীত পরিচালক তিনি। একটা সময় বেতার থেকে অনেক ইনস্ট্রুমেন্ট হারিয়ে গেছে, তা উদ্ধার করে এখনো আগলে রেখেছেন। এমন ভালবাসা ও দায়িত্বের নজির দিয়েছের শুধুমাএ দেশের জন্য, বাংলা গানের জন্য। এ পর্যন্ত তার সুর করা গানের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে বেতার, টেলিভিশনে ও অডিওতে। ৫০ বছর পার করে চলেছেন গানের ক্যারিয়ারে। একক সুরকার হিসেবে বিশটির মতো একক অ্যালবাম ও শতাধিক মিক্সড অ্যালবামে সুরকার হয়েছেন। আবু তাহের চিশতীর সুর সংগীতে উল্লেখযোগ্য ৫ টি গানের মধ্যে রয়েছে- যেখানে যাও ভালো থেকো, জোছনা রাতে দেখা হয়েছে, মেঘ ছুঁয়েছে নীলগিরি, মেরেছে মরন তীর, কিছু কথা এমন থাকে যা ভোলা যায়না। তার সুর করা গানে কন্ঠ দেওয়া শিল্পীদেও মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য, ‘প্রবাল চেীধুরী, তপন চেীধুরী, কুমার বিশ^জিৎ, আগুন, সৈকত দাস, সাইফুদ্দিন মাহমুদ খান, আতিক হাসান, আব্দল মান্নান রানা, ফাহমিদা রহমান, পাপিয়া আহমেদ, পূর্ণিমা দাস, আলাউদ্দিন তাহের, শিরীণ আক্তার, সাগরিকা বড়–য়া, আলেয়া আরিফসহ অনেকে। দীর্ঘ জীবনে সুরের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন চিটাগং এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাওয়ার্ড-২০১৭, রেডিও এ্যানাউন্সার সংগঠন চট্টগ্রাম , অবসর সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী সম্মাননা, কক্সবাজার সংগীতায়তন পুরস্কার। এসব সংগঠন থেকে সেরা সুরকার সংগীত পরিচালক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। ৬৮ সাল থেকে বাংলাদেশ বেতারে যুক্ত হয়েছেন এবং এখনো কর্মরত তিনি। তাছাড়া বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ’৯৬ সালে ১৯ ডিসেম্বরের উদ্ভোধনী সংগীত ছোট ছোট টেউ তুলি গানটির সংগীত পরিচালনা করে সেদিন প্রশংসিত হন আবু তাহের চিশতী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ