রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
চলনবিলের অন্যতম নদী বড়াল দখল, দুষণ, বছরের পর বছর খনন কার্যক্রম না থাকায় পলি জমে ভরাট হয়ে পরায় আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে। শুকিয়ে গেছে নদীটি। নদীর তলদেশে আবাদ হচ্ছে ফসলের। এক সময় বছরের অধিকাংশ সময় প্রমত্ত বড়ালে পানি থাকলেও এখন শুকিয়ে গেছে। বড়াল পাড়ের হাজার কৃষক মুখোমুখি হচ্ছেন সেচ সঙ্কটের। নদীর তলদেশে চলছে ধানসহ অন্যান্য ফসলের চাষ। চাটমোহর পৌরসভাসহ নদীপাড়ের হাট-বাজার জনপদের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে। নদীটি এখন আবর্জনার ভাগাড় আর ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। অপরিকল্পিত ¯সুইসগেট ও দখলের কারণে নদী সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। সময়ের বিবর্তনে এক সময়ের গতিময় বড়াল নদী বর্তমানে বিলীন হওয়ার পথে। এতে পরিবেশ বিপর্যয় ও সেচ কাজে স্থবিরতা নেমে আসার পাশাপাশি নদীতে পানি না থাকায় জেলেরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
জানা গেছে, রাজশাহীর চারঘাট থেকে উৎপত্তি হয়ে পদ্মার শাখা বড়াল নদী বড়াইগ্রামের আটঘরি এলাকায় এসে বনপাড়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর উপজেলা হয়ে শাহজাদপুরের হুরাসাগর দিয়ে যমুনায় গিয়ে মিশেছে। আর এখান থেকে নদীর অপর একটি ধারা নন্দক‚জা নামে আহম্মেদপুর হয়ে গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড়ে আত্রাই নদীতে গিয়ে পড়েছে। প্রায় ২শ’ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীতে এক সময় ছোট-বড় নৌকায় করে মাঝিমাল্লা ও সওদাগরেরা ছুটে চলতেন। জেলেরা মাছ ধরে আশপাশের বাজারে বিক্রি করতেন। কিন্তু ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রথমে রাজশাহীর চারঘাটে বড়ালের উৎসমুখে এবং পরে নব্বইয়ের দশকে আটঘরিতে দুটি সুইসগেট নির্মাণ করে। এরপর চাটমোহর উপজেলা পরিষদ উপজেলার রামনগর, নতুন বাজার, বোঁথর এলাকায় ক্রসবাঁধ নির্মাণ করে। নদীকে খালে পরিণত করে জলকর হিসেবে মাছ চাষ শুরু করা হয়। কিছুদিন পরেই বাঘাবাড়ি-নিমাইচড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করে নদীর দহপাড়ায় আরেকটি সুইস গেট থেরি করে পাউবো। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। ২০০৮ সালে চাটমোহর থেকে শুরু হয় বড়াল রক্ষা আন্দোলন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ফলে সরকার বড়ালের ক্রস বাঁধ অপসারণ করে ব্রিজ নির্মাণ করে। একই সাথে দহপাড়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ অপসারণ করা হয়। কিন্তু নদী খনন না করায় এবং নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে পদক্ষেপ না নেওয়ায় বড়াল এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। কচুরিপানায় পরিপূর্ণ শুকনো বড়ালের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল হামিদ রচিত চলনবিলের ইতিকথা গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, বড়াল নদী পদ্মার চারঘাট মোহনা থেকে নাটোরের বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম হয়ে চাটমোহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নূরনগরে গুমানীর সাথে মিশে বড়াল নামেই ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর হয়ে বাঘাবাড়ি দিয়ে হুরাসাগরের সাথে মিশে নাকালিয়া এলাকায় গিয়ে যমুনার সাথে মিশেছে। উনবিঙ্ক শতাব্দীর দ্বীতীয়ার্ধের মাঝামাঝিতে ও নদীটি ¯্রতস্বীনি থাকলেও একেবারে শেষের দিকে রাজশাহী থেকে নূরনগর পর্যন্ত নদীটির অনেক স্থানে ক্রস বাঁধ দেয়ায় এ নদীটি এখন মৃতাবস্থায় পড়ে আছে। যদিও ক্রসবাঁধ অপসারিত হয়েছে। এ নদী উদ্ধারে বড়াল রক্ষা কমিটি দীর্ঘদিন যাবত আন্দোল সংগ্রাম করে আসার ফলশ্রুতিতে চাটমোহর নতুন বাজার খেয়াঘাট, বোঁথর ঘাট ও রামনগরের ঘাটের তিনটি ক্রসবাঁধ অপসারণ করা হলেও এখনও পদ্মার সাথে যমুনার সংযোগ ঘটানো সম্ভব হয়নি। নূরনগর থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত বর্ষায় কিছুদিনের জন্য প্রাণ ফিরে পায় নদীটি।
বর্তমানে নদীটি শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। দুই তীরে বসবাসকারী হাজার হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়েছে। তীরবর্তী মানুষেরা নদীর বুকে ফসলের চাষ করেছেন। কেউ কেউ প্রথমে নদীর বুকে বীজতলা করেছেন, রোপণ করেছেন চারা। কেউ বুনেছেন গম বা খেসারীর বীজ।বড়াল নদী রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান জানান, চলনবিলের প্রাণ হলো নদী, খাল বিল। এগুলো রক্ষা করতে না পারলে চলনবিল তার স্বকীয়তা হারাবেই। দীর্ঘদিন যাবত আমরা এ এলাকার নদী রক্ষায় আন্দোলন করে আসছি। আমাদের প্রাণের দাবি বড়াল নদী সঠিকভাবে খনন করা হোক।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।