Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন সংসদের পথচলা শুরু

বিরোধী দলীয় নেতা এরশাদ বিদেশে

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

নির্বাচনের ৩০ দিন পর প্রথম অধিবেশন শুরুর মাধ্যমে শুরু হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদের পথচলা। নবগঠিত সংসদে বিগত দশম সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী পুররায় স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার অ্যডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া নতুন করে ডিপুটি স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন। রংপুর-৬ আসন থেকে থেকে নির্বাচিত ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নেতৃত্বেই সংসদের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সংসদে এবার গৃহপালিত বিরোধী দলের বদলে ‘অধিনস্থ’ বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে জাতীয় পার্টি। মাঠের বিরোধী দলখ্যাত বিএনপি সংসদে আসবে না সিদ্ধান্ত জানালেও ১৪ দলের শরীক বাম দলগুলোর এমপিরা সংসদে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেছে। রাশেদ খান মেনন বলেছেন, সংসদে এসে আমাদের ভূমিকা কি হবে তা নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেছি। 

পূর্ব নির্ধারিত সময় গতকাল বুধবার বিকাল ৩টায় নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর পরপরই দশম জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে অধিবেশন বসে। প্রথমেই একাদশ সংসদের স্পিকার পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্পিকার পদে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবের সমর্থন করেন নতুন সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। এরপর সংসদে কন্ঠ ভোটে তা পাস হয়। স্পিকার নির্বাচনের পর সংসদের অধিবেশন ৩০ মিনিটের জন্য মূলতবি রাখা হয়। মূলতবির এই সময়ে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ নবনির্বাচিত স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে শপথবাক্য পাঠ করান। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনাসহ সরকার এবং বিরোধীদলের সিনিয়র সদস্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
নবম সংসদের শেষ দিকে তৎকালিন প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর মো. আবদুল হামিদ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে শূন্য হয় স্পিকারের আসন। সে সময় স্পিকার নির্বাচিত হন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সেবার প্রথমবারের মতো আইন সভায় এসে চার বছরের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই স্পিকারের পদে বসেন তিনি। তাছাড়া স্পিকার পদে তিনিই প্রথম নারী। নবম সংসদে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত হয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
স্পিকার নির্বাচন এবং শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে অধিবেশন বসলে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করে সংসদ। নবনির্বাচিত স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দ্বিতীয় পর্বের অধিবেশন শুরু হয়। এসময় ডেপুটি স্পিকার পদে নির্বাচিত হন গাইবান্ধা-৫ থেকে নির্বাচিত অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া। হুইপ আতিউর রহমান আতিক ডেপুটি স্পিকার পদে অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার নাম প্রস্তাব করেন। হুইপ ইকবালুর রহীম এই প্রস্তাবে সমর্থন করেন। পরে এটি কন্ঠ ভোটে সংসদে পাস হয়। অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া দশম জাতীয় সংসদেও ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। এই নিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে এ পদ অলংকৃত করলেন তিনি। এর আগে সংসদ ভবনের নবম তলায় অবস্থিত সরকারি দলের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারের নাম চূড়ান্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার পদে নির্বাচনের পর তাদের অভিনন্দন জানায় নতুন সংসদ। পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম নবনির্বাচিত স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় উপ-নেতা ও জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা নবনির্বাচিত স্পিকারকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আশাকরি এই সংসদও কার্যকর হবে। প্রাণবন্ত হবে। মানুষের আশা-আকাঙ্খার কেন্দ্রে পরিনত হবে এই সংসদ। তিনি এসময় বিরোধীদলের সদস্যদেরও অভিনন্দন জানান। শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক ধারায় সমালোচনা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিরোধীদলের সদস্যদের আশ্বাস দিতে পারি যে তারা সংসদে তাদের সমালোচনা যথাযথভাবে করতে পারবেন। এখানে আমরা কোনো বাধা সৃষ্টি করবো না। কোনো দিন বাধা আমরা দেইনি, দেবোও না।
বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের নবনির্বাচিত স্পিকারকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সংখ্যায় কম হলেও আমরা মনে করি সঠিকভাবে আমাদের কথা এখানে তুলে ধরতে পারলে সংসদ প্রাণবন্ত ও কার্যকর হবে।
চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী
একাদশ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করবেন মাদারীপুর-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নূূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। তার সঙ্গে হুইপ হিসাবে থাকছেন শেরপুর থেকে নির্বাচিত এমপি আতিউর রহমান আতিক, দিনাজপুরের ইকবালুর রহিম, গাইবান্ধার মাহাবুব আরা বেগম গিনি, খুলনার পঞ্চানন বিশ্বাস, জয়পুরহাটের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও চট্টগ্রামের সামশুল হক চৌধুরী। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ গতকাল বুধবার চিফ হুইপ ও হুইপদের নিয়োগ অনুমোদন করেন। পরে সংসদ সচিবালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। চিফ হুইপ মন্ত্রীর এবং হুইপরা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা এবং সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন।
হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নে। ১৯৯১ সাল থেকে মাদারীপুর-১ আসনের প্রতিনিধিত্ব করে আসা লিটন বিগত দশম সংসদের সংসদ কমিটি এবং বেসরকারি সদস্যদের বিল এবং বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। এর আগে নবম সংসদে তিনি হুইপ এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এবার হুইপের দায়িত্ব পাওয়া ৬ জনের মধ্যে আতিকুর রহমান আতিক, ইকবালুর রহিম ও মাহবুব আরা গিনি দশম সংসদেও একই দায়িত্বে ছিলেন। বাকি তিনজন এই দায়িত্বে নতুন।
সভাপতিমন্ডলী মনোনয়ন
সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিনেই নিয়ম অনুযায়ী ৫ সদস্যের সভাপতিমন্ডলীল মনোনয়ন দেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তারা স্পিকার ও ডিপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সংসদ অধিবেশন পরিচালনার দায়িত্বপালন করবেন। এরা হলেন- আবুল কালাম আজাদ, অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, এবি তাজুল ইসলাম, ফখরুল ইমাম এবং সাগুফতা ইয়াসমিন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জয়ী হয় ২৫৮ আসনে। ২২ আসন নিয়ে সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে মহাজোটের শরীক এরশাদের জাতীয় পার্টি। দশম জাতীয় সংসদে এই দলটি ৩৪টি আসন নিয়ে বিরোধীদলের আসনে বসেছিলো। তখন সরকারের মন্ত্রিসভায় এবং বিরোধী দলে একসঙ্গে থাকায় মানুষের কাছে দলটির পরিচয় ছিল গৃহপলিত বিরোধী দল হিসেবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলে। অভিযোগ বলা হয় নির্বাচনের আগের রাতে ২৯৯ আসনের প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে শতকরা ৩৫ থেকে ৪৫ ভাগ ভোটের ব্যালটে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হয়। আইন শৃংখলায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সহায়তায় ব্যালটে এই সিল মারা হয়। এমনকি ভোটের দিন সাধারন ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয় আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইবি এ নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণে জানায় ৫০ আসনের মধ্যে ৪৭টি আসনে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র তারা পেয়েছেন।
একাদশ নির্বাচনের পর ৩ জানুয়ারি নবনির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির ৬ জন, গণফোরামের একজন, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার একজন এবং আরও চারজন বাদে বাকীরা এদিন শপথ নেন। ওইদিনই টানা ত্বতীয়বারের মতো সংসদ নেতা নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি রেকর্ড গড়েন। এবার প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হন বিরোধীদলীয় নেতা। যদিও দশম জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের নেতা ছিলেন তার স্ত্রী ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকায় একাদশ সংসদের প্রথম দিন সংসদ অধিবেশনে হাজির হতে পারেননি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। অন্যদিকে ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও শপথ নিতে পারেননি। ##



 

Show all comments
  • jahid ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:২৯ পিএম says : 0
    আল্লাহ্‌ যদি এই মিথ্যার পথ চলা বন্ধ করে। আল্লাহের বিচার হবেই আকদিন না আকদিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ