বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
এস এম সাখাওয়াত হুসাইন
মাদরাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়নের নামে অভিন্ন পাঠ্যপুস্তক চালুর মাধ্যমে আলীয়া নেসাবের মাদরাসা শিক্ষার স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে মাদরাসাসমূহ বন্ধ করার আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। আরবী সাহিত্য, কুরআন-হাদীস, ফিকহ, নাহু-ছরফ সহ কয়েকটি বিষয় ছাড়া বাকিসব স্কুলের পাঠ্যপুস্তক পড়ানো হচ্ছে। বইয়ের কাভারে ইবতেদায়ী বা দাখিল লেখা থাকলেও বই মূলত স্কুলের। যে পাঠ্যপুস্তক পাঠের মাধ্যমে গোটা জাতিকে ধর্মহীন বানানোর ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে শিক্ষার্র্থীদের হাতে যে পাঠ্য পুস্তক তুলে দেওয়া হয়েছে তাতে মাদরাসা ছাত্রদেরকে হিন্দুত্ববাদ পড়তে বাধ্য করা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণির বাংলা বইয়ে যেসব লেখকদের গল্প-কবিতা প্রাধান্য পেয়েছে তাদের অধিকাংশই হিন্দু ও মুসলিম নামধারী স্বঘোষিত নাস্তিক। ইসলামী চেতনা সম্পন্ন প্রবন্ধ, গল্প ও কবিতা বাদ দিয়ে সেখানে দেওয়া হয়েছে হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদী গল্পÑকবিতা। মাদরাসার সিলেবাসেও একইভাবে নাস্তিকতা ঢোকানোর ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় বাংলা সাহিত্যে বইয়ের ১৪৪টি কবিতা ও গল্পের মধ্যে ৭৫টি হিন্দু ও স্বঘোষিত নাস্তিকদের। এর মধ্যে ৬৪টি হিন্দু এবং ১১টি গল্প-কবিতা নাস্তিকদের বাকি ৬৯টি গল্প-কবিতা মুসলিম নামধারীদের হলেও এখানে স্থান পায়নি মুসলিম জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কবি ফররুখ আহমদ, কায়কোবাদ, গোলাম মোস্তফাসহ আরো অনেকের ইসলামী ভাবধারার গল্প-কবিতা।
এক শ্রেণির মতলববাজ লোক একমুখী শিক্ষার কথা বলে মাদরাসা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলে। তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন! বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ তৈরির জন্য যদি আলাদা ব্যবস্থা থাকে, যেমন- ডাক্তারী পড়তে হলে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হয়। সেখানে মেডিকেলের বিষয়ের প্রতিই গুরুত্ব দেওয়া হয়। ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় অথবা পলেটেকনিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে হয়। সেখানে ঐ বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে পড়লে সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়া যায়। এমনিভাবে প্রত্যেক বিষয়েই বিশেষজ্ঞ তৈরির জন্য স্ব-স্ব বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাহলে কেউ কুরআন-সুন্নাহর বিশেষজ্ঞ আলেম হতে চাইলে তাকে অবশ্যই মাদরাসায় পড়তে হবে। মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আগে দ্বীনি ইলম অর্জনের প্রতি গুরুত্ব দেবে, পাশাপাশি জাহেলিয়াতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য তারা অন্যান্য বিষয়ও পড়বে।
আমাদের দেশে আলেম তৈরির দুই ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তিত আছে; একটি আলীয়া নেসাবের আরেকটি দরসে নেজামী। দরসে নেজামী যেহেতু সরকারি সনদের স্বীকৃতি নেয় না তাই তাদের ওপর সরকারের কোনো খবরদারি নেই। কিন্তু আলীয়া নেসাবের মাদরাসা যেহেতু সরকারের সুবিধা নেয় তাই সরকারের খবরদারী তাদের মেনে নিতে হয়। সেই খবরদারী কতটুকু মানবেন এ ধারার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও দ্বীন দরদী সূধীজনেরা। মাদরাসা শিক্ষা বন্ধে যে কৌশলী পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে বিনা ঘোষণায় মাদরাসা শিক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে। চাকরি হারাবে হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী।
“১৯৫১ সালে ইস্ট বেঙ্গল এডুকেশন রিকনস্ট্রাকশন সিস্টেম অনুযায়ী ১৯৪৭-১৯৪৮ সনে পূর্ব বঙ্গে নিউস্কীমভুক্ত জুনিয়র ও সিনিয়র মাদরাসার মোট সংখ্যা ছিল ১০৭৪টি। আর ছাত্র সংখ্যা ছিল ৮৫,৬২৯ জন। পক্ষান্তরে ঐসময় ওল্ডস্কীম মাদরাসা সংখ্যা ছিল ৩৭৪টি। আর ছাত্র সংখ্যা ৩৯,৫১২ জন। উল্লেখ্য যে ১৯১৪-১৯১৫ সালে কোলকাতা আলীয়া (বর্তমান ঢাকা আলীয়া) ও সিলেট আলীয়া মাদরাসা (বা শর্ষীনা আলীয়া মাদরাসা) নিউ স্কীম পদ্ধতি চালু করতে অস্বীকার করায় বাকি সব মাদরাসাতেই নিউস্কীম পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। (উল্লেখিত দু’টি মাদরাসায়ও নিউস্কীমের শাখা চালু করা হয়েছিল, পরে তা স্কুল-কলেজের সাথে মিশে যায়।) কিন্তু দুঃখের বিষয় ১৯৫৭ সালে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার নিউস্কীমের সকল জুনিয়র ও হাই মাদরাসা এবং ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজকে সাধারণ সেকেন্ডারি শিক্ষার সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। রাতারাতি মাদরাসাগুলো স্কুলে এবং ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজগুলো জেনারেল ইন্টারমিডিয়েট কলেজে পরিণত হয়।” (সূত্র : মাদরাসা শিক্ষার অস্তিত্বের দাবি, ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী)
ড. ঈসা শাহেদী তার বইয়ে আরো বলেন, “আমার বুঝ মতে, নিউস্কীম পদ্ধতিটা আলিয়া নেসাবের মাদরাসাসমূহের বর্তমান সিলেবাসের মতই ছিল। এমন কি তার চাইতে উন্নত ও সুবিন্যস্ত ছিল। এর ফলেই নিউস্কীম মাদরাসা থেকে অনেক জ্ঞানী মনীষী জন্ম নিয়েছেন। জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজ, সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান বিশ্বাস, অনেক জজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, উচ্চপদস্থ অফিসার নিউস্কীমের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু এরপরও নিউস্কীমের এই করুণ পরিণতি কেন হল, জানি না কেউ তার কারণ উদঘাটন করেছেন কি না? কেউ কেউ নেহাত রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে হয়ত বলতে চাইবেন যে, ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক সরকার এতবড় জঘন্য সিদ্ধান্তটি নিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হল, অনেক আগে থেকেই সংস্কারকৃত সিলেবাসের প্রভাবে মাদরাসাগুলো দ্বীনি চরিত্র হারিয়ে ফেলেছিল। ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যেও এই মনোভাব সৃষ্টি হয়েছিল যে, শুধু শুধু ‘মাদরাসা’ নামের তমগা বহন করে লাভ কি। এ কারণেই একটি সরকারি ঘোষণার মাধ্যমে রাতারাতি মাদরাসাগুলো স্কুল কলেজ বানানো সত্ত্বেও কার্যকর কোন প্রতিবাদ হয়নি।”
নিউস্কিমের কবলে যেসব মাদরাসা কলেজে পরিণত হয় তার মধ্যে ঢাকার কবি নজরুল কলেজ, চট্টগ্রামের মহসিন কলেজ পূর্বে মুহসেনিয়া মাদরাসা ছিল, ঝিনাইদহের ওয়াজির আলী হাই স্কুল, রাজশাহীর হাই মাদরাসা, ঢাকার আরমানিটোলার হাম্মাদিয়া মাদরাসা, উল্লেখযোগ্য
নিউস্কিম নাম না দিলেও বর্তমান সরকার মাদরাসা ও জেনারেল শিক্ষাকে একিভূত করার দিকেই এগুচ্ছে। একজন অভিভাবক বা শিক্ষার্থী যখন দেখবে মাদরাসা ও স্কুল কলেজের বই অভিন্ন তখন মাদরাসায় পড়া ও পড়ানোর আগ্রহ হারাবে, ফলে মাদরাসায় শিক্ষার্থী কমে যাবে তখন মাদরাসা বন্ধের জন্য কোন ঘোষণা দেওয়া লাগবে না। যারা মাদরাসা ছাত্রদেরকে সমান অধিকার দেওয়ার কথা বলে অভিন্ন সিলেবাস পড়তে বাধ্য করছেন তাদের বলব, একজন মাদরাসার ছাত্র পূর্বেকার মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের কোর্স কারিকুলাম পড়ে যে যোগ্যতা অর্জন করতো সেখানে সমস্যা কী ছিল। মাদরাসার ছাত্ররা বাংলা এবং ইংরেজি পড়েই তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। আমার জানামতে দারুন নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসার এক ছাত্র আরিফুল ইসলাম ২০০৯/১০ সেশনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ঢাবিতে খ ও ঘ ইউনিটে মেধা তালিকায়, জাবিতে সরকার ও রাজনীতি, ভূগোল ও পরিবেশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে, অর্থনীতিতে, সাংবাদিকতায় ও লোক প্রশাসনে মেধাতালিকায় ১ম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন মুসলিম বিধানে মেধা তালিকায় ১ম বিবিএ-তে মেধা তালিকায় ১ম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে মেধা তালিকায় ছিল। এরকম অসংখ্য ছাত্রের তালিকা দেওয়া যাবে যারা মাদরাসায় পড়েই মেডিকেলে, বুয়েটে, কারিগরিতে, কৃষিতে ভালো ফলাফল করছে। তাহলে মাদরাসায় অভিন্ন সিলেবাস পড়ানোর মতলব মাদরাসা ছাত্রদের উন্নয়ন নয় মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার গভীর চক্রান্ত।
প্রস্তাাবিত শিক্ষা আইনে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের ব্যাপক পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাবগুলো আইনের আওতায় আনা হলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় আমূল পরিবর্তন আসবে। তবে এ নিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা নিয়ে সংশয় ও প্রশ্ন ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। আইনে শিক্ষার স্তর হবে চারটি। এগুলো হলো প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীর বয়স হবে চার থেকে ছয় বছর। প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হবে ছয় বছর বয়স থেকে। এ স্তর হবে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি হবে মাধ্যমিক স্তর। এরপর শুরু হবে উচ্চশিক্ষার স্তর। তবে অষ্টম শ্রেণি শেষে পাবলিক পরীক্ষার বিধান থাকলেও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার বিষয়ে নির্বাহী আদেশ দিয়ে সরকার সিদ্ধান্ত জানাবে।
প্রস্তাবিত আইনে মাদরাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে দাখিল ও আলিম পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, বাংলাদেশ স্টাডিজ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ পরিবেশ পরিচিতি এবং বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়সমূহ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কওমি মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন ও কওমি মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা আইনে উল্লেখ রয়েছে।
খসড়া শিক্ষা আইনের ৭ এর ২, ৩, ১১ ও ১২নং উপধারায় বর্ণিত নির্ধারিত পাঠ্যসূচির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এনসিটিবি’র অনুমোদন ছাড়া কোনো স্কুল বা মাদরাসায় কোনো পাঠ্য বই পড়ানোর সুযোগ থাকলো না। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে ইসলাম ও আদর্শ শিক্ষাকে ঠেকানোর চক্রান্ত চূড়ান্ত করা হলো।
এদিকে, পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিতরণের জন্য একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়। ফলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কেবল পাঠ্যপুস্তক ও অন্যান্য পাঠসহায়ক সামগ্রী প্রণয়নের দায়িত্ব পালন করবে। কোনো প্রকার নোট বই ও গাইড বই প্রকাশ করা যাবে না। এ বিধান লংঘন করলে অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থ দ- বা ছয় মাসের কারাদ- কিংবা উভয় দ-ের প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়। অবশ্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এনসিটিবি থেকে পা-ুলিপির অনুমোদন নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বা প্রকাশক কেবল সহায়ক শিক্ষা উপকরণ বা সহায়ক পুস্তক বা ডিজিটাল শিখন-শেখানো সামগ্রী প্রকাশ করতে পারবে।
আইনে প্রাথমিক শিক্ষাকে (প্রথম-অষ্টম শ্রেণি) অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী ২০১৮ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্র্রেণিতে উন্নীতের জন্য ইতোমধ্যে কাজ করছে সরকার।
স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে কোনো কোনো জায়গায় ইসলাম ও মুসলমানদের বাদ দেওয়া হয়েছে এবং কোনো কোনো জায়গায় হিন্দুত্ব ঢোকানো হয়েছে। বিষয়গুলো হচ্ছেÑ ১) দ্বিতীয় শ্রেণিÑ বাদ দেওয়া হয়েছে ‘সবাই মিলে করি কাজ’ শিরোনামে মুসলমানদের শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত। ২) তৃতীয় শ্রেণিÑ বাদ দেওয়া হয়েছে ‘খলিফা হযরত আবু বকর’ শিরোনামে একটি সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত। ৩) চতুর্থ শ্রেণিÑ খলিফা হযরত ওমরের সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত বাদ দেওয়া হয়েছে। ৪) পঞ্চম শ্রেণিÑ ‘বিদায় হজ’ নামক শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত বাদ দেওয়া হয়েছে। ৫) পঞ্চম শ্রেণিÑ বাদ দেওয়া হয়েছে কাজী কাদের নেওয়াজের লিখিত ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ নামক একটি কবিতা। যাতে বাদশাহ আলমগীরের মহত্ব বর্ণনায় উঠে এসেছে এবং শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে আদব কেমন হওয়া উচিত, তা বর্ণনা করা হয়েছে। ৬) পঞ্চম শ্রেণিÑ শহীদ তিতুমীর নামক একটি জীবন চরিত বাদ দেওয়া হয়েছে। এ প্রবন্ধটিতে মুসলিম নেতা শহীদ তিতুমীরের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের বিবরণ উল্লেখ রয়েছে। ৭) ষষ্ঠ শ্রেণিÑ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ লিখিত ‘সততার পুরস্কার’ নামক একটি ধর্মীয় শিক্ষণীয় ঘটনা বাদ দেওয়া হয়েছে। ৮) ষষ্ঠ শ্রেণিÑ মুসলিম সাহিত্যিক কায়কোবাদের লেখা ‘প্রার্থনা’ নামক কবিতাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। ৯) সপ্তম শ্রেণিÑ বাদ দেওয়া হয়েছে ‘মরু ভাস্কর’ নামক শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত। ১০) অষ্টম শ্রেণিÑ বাদ দেওয়া হয়েছে ‘বাবরের মহত্ব’ নামক কবিতাটি। ১১) অষ্টম শ্রেণিÑ বাদ দেওয়া হয়েছে বেগম সুফিয়া কামালের লেখা ‘প্রার্থনা’ কবিতা। ১২) নবম-দশম শ্রেণিÑ সর্বপ্রথম বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের বাংলা কবি শাহ মুহম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’ নামক ইসলাম ধর্মভিত্তিক কবিতাটি। ১৩) নবম-দশম শ্রেণিÑ এরপর বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের মুসলিম কবি ‘আলাওল’-এর ধর্মভিত্তিক ‘হামদ’ নামক কবিতাটি। ১৪) নবম-দশম শ্রেণিÑ আরো বাদ দেওয়া হয়েছে মধ্যযুগের মুসলিম কবি আব্দুল হাকিমের লেখা ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি। ১৫) নবম-দশম শ্রেণিÑ বাদ দেওয়া হয়েছে শিক্ষণীয় লেখা ‘জীবন বিনিময়’ কবিতাটি। কবিতাটি মুঘল বাদশাহ বাবর ও তার পুত্র হুমায়ুকে নিয়ে লেখা। ১৬) নবম-দশম শ্রেণিÑ বাদ দেওয়া হয়েছে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা বিখ্যাত ‘উমর ফারুক’ কবিতাটি। ওপরের বিষয়গুলো বাদ দিয়ে স্কুলের নতুন পাঠ্যবইয়ে নিচের বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছেÑ ১) পঞ্চম শ্রেণিÑ স্বঘোষিত নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ লিখিত ‘বই’ নামক একটি কবিতা, যা মূলত মুসলমানদের ধর্মীয়গ্রন্থ পবিত্র কোরআনবিরোধী কবিতা। ২) ষষ্ঠ শ্রেণিÑ প্রবেশ করানো হয়েছে ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ নামক একটি কবিতা। যেখানে রয়েছে হিন্দুদের ‘দেবী দুর্গা’র প্রশংসা। ৩) ষষ্ঠ শ্রেণিÑ সংযুক্ত হয়েছে ‘লাল গরুটা’ নামক একটি ছোট গল্প যা দিয়ে কোটি কোটি মুসলিম শিক্ষার্থীদের শখানো হচ্ছে গরু হচ্ছে মায়ের মতো, অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদ। ৪) নবম-দশম শ্রেণিÑ প্রবেশ করেছে ‘আমার সন্তান’ নামক একটি কবিতা। কবিতাটি হিন্দুদের ধর্ম সম্পর্কিত ‘মঙ্গল কাব্য’-এর অন্তর্ভুক্ত, যা দেবী অন্নপূর্ণার প্রশংসা ও তার কাছে প্রার্থনাসূচক কবিতা। ৫) নবম-দশম শ্রেণিÑ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ভারতের পর্যটন স্পট ‘পালমৌ’-এর ভ্রমণ কাহিনী। ৬) নবম-দশম শ্রেণিÑ পড়ানো হচ্ছে ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ শিরোনামে বাউলদের বিকৃত যৌনাচারের কাহিনী। ৭) নবম-দশম শ্রেণিÑ ‘সাকোটা দুলছে’ শিরোনামের কবিতা দিয়ে ’৪৭-এর দেশভাগকে হেয় করা হয়েছে, যা দিয়ে কৌশলে ‘দুই বাংলা এক করে দেয়া’ অর্থাৎ বাংলাদেশকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হতে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।
এমতাবস্থায় একজন সচেতন নাগরিক ও দ্বীনদরদী মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে তা রুখে দেওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা গড়ে তোলা।
য় লেখক : সাংবাদিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।