পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কিছুদিন থেকে দেশব্যাপি আলোচিত নাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আবজাল হোসেন দম্পতির কয়েক শ’ কোটি টাকার সম্পদের বিষয়টি। কিন্তু অধরাই থেকে যাচ্ছে আবজাল হোসেনের গডফাদার হিসেবে পরিচিত মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু। পুরো স্বাস্থ্যখাতে বিস্তৃত মিঠুর জাল। স্বাস্থখাতে মিঠু একজন মাফিয়া হিসেবে পরিচিত। স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আবজাল হোসেনের মতই একাধিক কর্মকর্তা মিঠুর হয়ে কাজ করে থাকে। শুধু স্বাস্থ্য খাতেই নয়; দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে রয়েছে মিঠুর লোক। আর তাই মিঠু বছরের অধিকাংশ সময়ে বিদেশে থাকলেও তার নির্দেশেই চলে স্বাস্থ্য খাত। মিঠু না থাকলেও সবকিছু পরিচালনা করেন তার ভাগ্নে বেনজীর ও হীরু। এই বেনজীর ও হিরুর নামেও রয়েছে শত শত কোটি টাকার নামে-বেনামে সম্পত্তি। এই মিঠু-আবজাল যোগসাজশেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এ রকমই একটি ঘটনা ইনকিলাবের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
কার্যাদেশের একদিনের মধ্যে আমেরিকা, জার্মানী, ব্রাজিল, জাপান, কোরিয়া, চীন, পোল্যান্ড ও তাইওয়ানের ৮টি দেশের মালামাল সরবরাহ করে স্বাস্থ্য খাতের মিঠু-আবজাল চক্র ৪২ কোটি ৪৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা আত্মসাত করে।
সূত্র মতে, রংপুর সিভিল সার্জন অফিসের অধীনে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের দরপত্রে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৯ মে’ যন্ত্রপাতি সরবরাহের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ওই কার্যাদেশের পরের দিন ৩০ মে’ ৮টি দেশের তৈরি স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি বাজার দরের ১২ থেকে ১৫ গুণ বেশি দরে নিন্মমানের মালামাল সরবরাহ করে। ঠিকাদারকে দেওয়া বিল থেকে দেখা যায়, একটি ওয়েইট এ্যান্ড হাইট স্কেলের বিল ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার অথচ এটির দাম সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা। একই দামে চিনের একটি বেবি স্কেল (নিউনেটাল) সরবরাহ করা হয়। অথচ বেবি স্কেলের দাম ২৪শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা।
চীনের একটি অটো স্পিরোমিটারের দাম নেওয়া হয়েছে ৮ লাখ ৫০ হাজার অথচ এটির দাম ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া জার্মানীর একটি ফার্মাসিউটিক্যাল রেফ্রিজারেটরের দাম নেয়া হয়েছে ২০ লাখ টাকা। অথচ এ ধরনের একটি রেফ্রিজারেটরের দাম দেড় লাখ টাকা। একটি ডিজিটাল মোবাইল এক্সরের দাম নেওয়া হয়েছে ৩ কোটি সাড়ে ১৪ লাখ টাকা। অথচ এটির দাম ২০ লাখ হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠান।
ওই সময়ে দুদক বিষয়টি তদন্ত করে প্রাথমিক প্রতিবেদনও দেয়। কিন্তু দুদকের কিছু অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজশে ওই তদন্ত রিপোর্ট আজ আলোর মুখ দেখেনি।
দুদকের রংপুর কার্যালয়ের ওই সময়ের তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ১০ হাজার টাকার মেশিন কয়েক লাখ টাকা দেখিয়ে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। ওই সময়ে এ সব অনিয়মের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টও প্রদান করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে আমাকে রাজশাহী বদলী করায় আমি আর বিষয়টি জানতে পারিনি। তবে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন পর্যায় থেকে আমাকে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন বর্তমানে অবসের যাওয়া আমিরুল ইসলাম।
নিন্মমানের এই মালামাল সরবরাহ করে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু বড় ভাই মোকছেদুল ইসলামের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কিউ সোর্স। ভাইয়ের নামে প্রতিষ্ঠান হলেও মিঠুই পরিচালনা করেন প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে ওই সময়েই কিউ সোর্সের বিরুদ্ধে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহসহ নানা অভিযোগ, তদন্ত কমিটি ও প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। কিন্তু সবাইকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আবজাল হোসেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক দু’জন সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ সচিব আব্দুল মালেক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসা একজন প্রভাবশালী পরিচালকের সহযোগীতায় এই টাকা উত্তোলন করে নেন মিঠু। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে স্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘদিন থেকে মিঠুর বিভিন্ন অনিয়ম চলছেই। এদিকে রংপুরের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের জন্য এই যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হলেও দীর্ঘদিনেও এর ব্যবহার হয়নি।
মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে নিয়ে একাধিকবার দৈনিক ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশিত হলে কিছুদিন আড়ালে থেকে সবাইকে ম্যানেজ করে আবার স্বাস্থ্যখাতে আধিপত্য বজায় রেখেছেন তিনি।
যদিও সম্প্রতি আবজালের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে স্বাস্থ্যখাতের সর্বত্রই মিঠু চক্রটির নাম বেরিয়ে আসছে। অথচ সদ্য বিদায়ী স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রায়শই বিভিন্ন বক্তব্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যন্ত্রপাতি ক্রয়ে কোন ধরণের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও এটা শুধু তার কথাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। কারণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব কাজে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকায় আড়ালেই থেকেছে মিঠুর এই লুটপাট। আর তাইতো স্বাস্থ্য খাতের অঘোষিত শত্রু হিসেবে পরিচিত মোতাজ্জেরুল ইসলাম ওরফে ‘মিঠু’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের কাছে প্রায়শই দম্ভোক্তি করেন। ‘সরকার আমার, সচিব আমার; মন্ত্রণালয় আমার। আমি কি পারি তা সব ঠিকাদারকে দেখিয়ে দিবো’ বলেন- মিঠু। মিঠু বলেন, সব ঠিকাদারকে আটকে দিয়ে কিভাবে খেলতে হয় তা দেখিয়ে দিয়েছি। সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের কেউই আমার বাইরে কোন কাজ করবে না, তাদেরকে আমি কিনে ফেলেছি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সরবরাহ দেখিয়ে বিভিন্ন সময়েই শত শত কোটি টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। অথচ ওই সব যন্ত্রপাতির দরপত্র কবে হয়েছে তারও ইয়ত্তা নেই। এমনকি আগারগাঁওয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটে (সিপিটিইউ) বিভিন্ন সময়ে খোঁজ নিয়েও এ সম্পর্কিত কোন তথ্য মেলেনি। এমনও হয়েছে যে, ৫ বছরেও যে সব হাসপাতালের কোন ধরণের কাজে দরপত্র চাওয়া হয়নি সেখানেও মালামাল সরবরাহ দেখিয়ে বিল উত্তোলন করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্যখাতের অঘোষিত শত্রু হিসেবে পরিচিত মিঠুর রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের কারণেই হৃদরোগ হাসাপাতালে মেশিন ছাড়া বাক্্র দিয়েই টাকা উত্তোলন,পঙ্গু হাসপাতালে ভবন নির্মানের আগেই সরঞ্জাম ক্রয়, ফরিদপুর হাসপাতালে আইসিইউ বেডের ২ লাখ টাকার পর্দার দাম ৩৭ লাখ টাকা দেখানোসহ কেনাকাটায় বিভিন্ন অনিয়ম স্বাস্থ্যখাতের নিত্ত নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। ওই কর্মকর্তা জানান, এসব অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আজও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই এই চক্রটি প্রতিদিনই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তিনি জানান, মন্ত্রণালয়সহ স্বাস্থ্যখাতের সর্বমহলে মাফিয়া হিসেবে পরিচিত এই মিঠু।
মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তবে স্বাস্থ্যখাতে মিঠুর এই অপকর্মের বিষয়ে বর্তমান স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ড. মুরাদ হাসানের সাথে কথা বলার জন্য মোবাইলে ফোনে কল দিলে তারা রিসিভ করেননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।