Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমদানি-রফতানিতে গতি কমেছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

গত ছয় মাস ধরে কমছে পণ্য আমদানি-ব্যয়। রফতানি আয়েও গতি নেই। আবার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সও আসছে ধীরগতিতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর মাসে আমদানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরের তুলনায় ২০১৮ সালের নভেম্বরে আমদানি ব্যয় কমেছে ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৫০৮ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে আমদানি বাবদ ব্যয় করতে হয়েছিল ৫২২ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এক মাস আগে অর্থাৎ গত অক্টোবর মাসে আমদানিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র তিন দশমিক ৮৪ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিনিয়োগ ও উৎপাদনের শ্লথগতির কারণে দেশের পণ্য আমদানি-ব্যয় কমে গেছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের অনেকেই উৎপাদনে যায়নি। এ কারণে আমদানিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়াকেও আমদানিতে ভাটার পড়ার কারণ হিসাবে উল্লেখ করেন ড. জায়েদ বখত। তিনি বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতে বেশি অর্থ খরচ হয়। ফলে অনেকেই আমদানিতে অনুৎসাহিত হয়। তবে আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো, সরকারকে এখন আগের মতো খাদ্য ও খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হচ্ছে না। গত ডিসেম্বর মাসে নির্বাচনে ব্যস্ত থাকায় সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্যও আগের মতো আমদানি করেনি। বিশেষ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আগের মতো আমদানি করতে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ২ হাজার ৩৭৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে রফতানি থেকে আয় হয়েছে এক হাজার ৪৫৬ কোটি ২৯ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত আগস্ট মাস থেকে আমদানি ব্যয় কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের আগস্টের তুলনায় ২০১৮ সালের আগস্টে আমদানি কমেছে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। আবার গত অক্টোবর মাসে আমদানিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) দেশে পাঁচ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শুধু আমদানিতে ভাটা পড়েনি, রফতানিতে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ডিসেম্বর মাসে পণ্য রফতানি থেকে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় মাত্র ২ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি অর্থ দেশে এসেছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ৩৪২ কোটি ৬১ লাখ ডলার রফতানি আয় দেশে এসেছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আয় হয়েছিল ৩৩৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গত অর্থবছরের শেষ মাস অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুনে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস তিন দশমিক ০৯ শতাংশ। একইভাবে ২০১৮ সালের মার্চ মাসেও রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস এক দশমিক ৩৮ শতাংশ। আমদানি-রফতানি ছাড়াও রেমিটেন্স আয়ও কাঙ্খিত হারে বাড়ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে প্রবাসীরা ১২০ কোটি ২ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে মাত্র ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রবাসীরা ১১৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। রফতানি ও রেমিটেন্সের ধীরগতির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও টান পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারী) রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ৩৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। তারপর থেকে রিজার্ভ নি¤œমুখী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে প্রবাসীরা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিটেন্স তিন শতাংশ কম পাঠিয়েছে। নভেম্বর মাসে ১১৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে, যা ২০১৭ সালের একই সময়ে ছিল ১২১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। তবে বিদায়ী বছরে (২০১৮ সালে) বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন এক হাজার ৫৫৪ কোটি লাখ ডলার (১৫ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন), যা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ ৩০ হাজার ৫৪১ কোটি টাকারও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্নমুখী উদ্যোগের রেমিটেন্স ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। তিনি মনে করেন, আগামী দিনেও রেমিটেন্স ইতিবাচক ধারায় থাকবে। এদিকে এই অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ দ্ঁিড়য়েছে ২৫৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ৪৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সাধারণত, কোনও দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রফতানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ