মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম রওনক
সারাদেশ যখন প্রচ- দাবদাহে পুড়ছে এবং সীমাহীন লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠেছে তেমন এক কঠিন সময়েও আশার কথা শুনিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী। সম্প্রতি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, দু’একদিনের মধ্যেই বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। সংকট তথা লোডশেডিংয়ের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সবকিছুর জন্য নাকি নৌপরিবহনের ধর্মঘট দায়ী। ধর্মঘটের কারণে উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি তেল পৌঁছানো সম্ভব হয়নি বলেই হঠাৎ করে লোডশেডিং শুরু হয়েছিল।
গ্রামাঞ্চলে তো বটেই, রাজধানীসহ সব নগরী-মহানগরী ও শহরেও এখন লোডশেডিং হচ্ছে যখনতখন। কোনো কোনো এলাকায় এমনকি ১২-১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। কোথাও কোথাও একনাগাড়ে আট-দশ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে নাভিশ্বাস উঠেছে জনগণের। ওদিকে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শেষপ্রান্তে এসে যাওয়া ইরি ধানের চাষাবাদ এবং শিল্পের উৎপাদন। অথচ হঠাৎ করে এত বেশি লোডশেডিং হওয়ার কথা নয়। কারণ, সরকারের পক্ষ থেকে অনেক উপলক্ষেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করার দাবি জানানো হয়েছে। দেশে বর্তমানে নাকি দশ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে! সরকার একই সঙ্গে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের প্রশংসায়ও পঞ্চমুখ। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকারের দাবি সত্যের কিছুটা কাছাকাছি হলেও এভাবে সীমা ছাড়ানো লোডশেডিং হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া পর্যায়ক্রমে সরকার বিদ্যুতের দামও যথেষ্টই বাড়িয়েছে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের খাতে বছরে ২২ থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দেয়ার দোহাই দিয়ে দাম বাড়ানোর ফলে গ্রাহকদের বিলের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। কিন্তু এত কিছুর পরও বিদ্যুৎ সংকট থেকে রেহাই তো মেলেইনি, উপরন্তু বিগত মাস দেড়েকের মধ্যে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা মানুষকে দিশেহারা করে ফেলেছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পানির কষ্টও। ওদিকে লো-ভোল্টেজের কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রেফ্রিজারেটর ও এয়ারকুলারের মতো অতি মূল্যবান সামগ্রীÑযেগুলো মানুষের পক্ষে সহজে কেনা সম্ভব নয়।
এমন অবস্থা চলতে পারে না। কারণ, বিদ্যুতের সঙ্গে চাষাবাদ ও শিল্পের উৎপাদন থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া পর্যন্ত প্রতিটি বিষয় জড়িত। এই সময়ে একদিকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চলছে, অন্যদিকে মানুষ পুড়ছে প্রচ- গরমে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও যে দশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের গল্প শুনিয়ে থাকেন সে বিদ্যুৎ তাহলে গেলো কোথায়? বন্ধুরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা বিদ্যুতেরই বা খবর কি? পর্যালোচনায় দেখা যাবে, বাস্তবে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের নামে দলীয় লোকজনকে ব্যবসা পাইয়ে দেয়ার এবং পকেট ভারি করার ব্যবস্থাই শুধু করা হয়েছে। কারণ, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেখানে ব্যয় হয় দেড় থেকে দুই টাকার মতো সেখানে তেলভিত্তিক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের ব্যয় ১৬ থেকে ১৮ টাকা। এজন্যই একদিকে সরকার দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে অন্যদিকে দলীয় লোকজনকে বছরে ভর্তুকি দিচ্ছে ২৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এত বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেয়ার পরও সংকটের সমাধান হচ্ছে না। কারণ, কোনো রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রই চাহিদা বা চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। এখানে মাত্র কয়েকদিনের নৌধর্মঘট কোনো কারণ হওয়ার কথা নয়। সেজন্যও প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসে জনমনে আস্থা ফিরে আসেনি।
তীব্র সংকটের এই সময়ে সরকারের উচিত জনগণের কষ্ট ও ভোগান্তিকে প্রাধান্য দেয়া এবং রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত অসম চুক্তি বাতিল করা। ভারত থেকে আমদানির ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত পাল্টানো দরকার। সরকারকে একই সঙ্গে গ্যাসভিত্তিক প্রচলিত সকল কেন্দ্র সংস্কার করে সেগুলোর মাধ্যমে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে মানুষের কষ্ট ও ভোগান্তি তো বাড়বেই, শিল্পায়নের সঙ্গে সামগ্রিক সমৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হবে এবং নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে না। তাছাড়া পবিত্র মাস রমযানও এগিয়ে আসছে। এখনই ব্যবস্থা না নেয়া হলে রোজার মাসে সাহরী, ইফতার ও তারাবির সময় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কষ্টের সীমা ছাড়িয়ে যাবে। সুতরাং লোডশেডিংসহ বিদ্যুতের সংকট কাটিয়ে ওঠার পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই। সমাধানের কথা শুধু মুখে বললে চলবে না।
ষ লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, এলডিপি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।