Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় : হাসিনা এমন নির্বাচন না করলেও পারতেন

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০১ পিএম | আপডেট : ১:৩৯ পিএম, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯

টানা প্রায় ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিস্ময়কর কাজ করেছেন। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্রতম ও সবচেয়ে কম উন্নত দেশের অন্যতম এ দেশটিতে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা প্রায় ১৫০ ভাগ। চরম দারিদ্র্যে বসবাসকারী মানুষের হার শতকরা ১৯ ভাগ থেকে কমে এসেছে প্রায় ৯ ভাগে। তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো- সরাসরি কর্তৃত্বপরায়ণতার দিকে ঝুঁকে যাওয়া ও এমন একটি নির্বাচন, যাতে শেখ হাসিনার দল জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮টিতেই জয় পেয়েছে। শতকরা ৯৬ ভাগ জয় পাওয়া এক অসম্ভব ব্যাপার। এসব তার অর্জনকে খর্ব করেছে।
৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচনের কয়েক মাস ও সপ্তাহ আগে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো বিরোধী দলগুলোকে ভীতি প্রদর্শন, সহিংসতা থেকে শুরু করে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের গ্রেফতার, তাদের সমর্থকদের ওপর নজরদারি ও বহুল সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিষ্ঠুর ব্যবহার নিয়ে ধারাবাহিকভাবে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ‘আগ্রাসী অথবা ভীতিকর’ কোনো উপাদান পোস্ট করা হলে জেলের বিধান রয়েছে।

নির্বাচনী প্রচারণায় সহিংসতায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৭ জন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার এক রিপোর্টে বর্ণনা করেছে বিচার ব্যবস্থা (ইনটিমিডেটেড জুডিশিয়ারি) অথবা নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ নেই এমন “একটি আতঙ্কের পরিবেশ নিয়ে। এমন আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজমান সমাজের উচ্চকিত কণ্ঠ থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত”।
ডিসেম্বরে দ্য টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী দৃশ্যত সর্বত্র স্বৈরতন্ত্রের বিভ্রান্তি নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করেছেন, একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ হলো একটি প্রান্তিক (পেরিফেরাল) বিষয়। তিনি বলেছেন, ‘যদি আমি খাদ্য, কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারি সেটাই হলো মানবাধিকার। বিরোধীরা বা নাগরিক সমাজ অথবা আপনার এনজিওরা যা বলছেÑ তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। আমি আমার দেশকে জানি এবং আমি জানি কিভাবে আমার দেশের উন্নতি করতে হয়।’
শেখ হাসিনার বয়স এখন ৭১ বছর। তিনি তার দেশকে জানেন- এটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবে না। তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট। তাকে ১৯৭৫ সালে যখন হত্যা করা হয় তখন হাসিনা ছিলেন দেশের বাইরে। ১৯৮১ সালে তিনি দেশে ফেরেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে। তারপর থেকে তিনি এর নেতৃত্বেই আছেন। তার দল এবং আরেকজন শক্তিধর নারী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত পালাক্রমে ক্ষমতায় এসেছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের প্রতিবাদ করে ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। এর ফলে শেখ হাসিনাকে একটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন ক্ষমতার মেয়াদ দেয়া হয়। গত বছর দুর্নীতির অভিযোগে জেল দেয়া হয়েছে খালেদা জিয়াকে। শেখ হাসিনা আরো এক দফায় ক্ষমতায় ফিরেছেন, যা এরই মধ্যে কার্যত একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আরো কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে প্রস্তুত তারা।
কিন্তু কেন? যখন জনমত জরিপ ইঙ্গিত দিয়েছিল, সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও শেখ হাসিনা ভালোভাবে বিজয়ী হবেন তাহলে কেন অপ্রয়োজনীয় নির্বাচনী ফল তৈরি করা হলো? এখন শেখ হাসিনার কতৃত্ববাদী পদ্ধতি (অথরিটারিয়ান মেথড) ও নিস্পেষণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ কলঙ্কিত করবে তার প্রতিটি অর্জনকে। তার সমালোচক, যারা নির্বাসনে গেছেন অথবা আন্ডারগ্রাউন্ডে গেছেন, তারা শুধু আরো বেশি কঠোর হয়ে উঠবেন। তার বিদেশি সমর্থক যারা আছেন তারাও আরো সতর্ক হবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারী ও সবচেয়ে বড় সিঙ্গেল-কান্ট্রি বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনী প্রচারণার সময় হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং একই সঙ্গে এসব সমস্যা সমাধানে সব পক্ষকে নিয়ে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনের প্রতি। যেসব সহিংসতা ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছিল, যা প্রচারণা ও ভোটকে কলঙ্কিত করেছে, সে বিষয়ে তদন্তের জন্য একই রকমভাবে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত গতিবিধি বলে দেয়, এমন মৃদু ভর্ৎসনায় তিনি পাল্টে যাবেন বলে মনে হয় না। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে যেসব দেশের নেতারা ব্যবসা করছেন এবং এ দেশে দারিদ্র্য থেকে উত্তরণের জন্য উল্লসিত, শেখ হাসিনাকেও তার মিত্রদের তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিত, মানবাধিকার বহির্জাগতিক কোনো আরোপিত সংস্কৃতি নয়। এটা হলো উন্নয়ন ও অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
(যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত সম্পাদকীয়র অনুবাদ)



 

Show all comments
  • Md. Mofazzal Hossain ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:২৬ পিএম says : 0
    There was no alternative way for SK Hasina accept hijacking vote to return the government.She is fully blind on the dream of Power.
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ২:৪০ পিএম says : 0
    বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যে দেশে এমন দক্ষতা আছে যে পাঁচ বৎসরের মধ্যে বাংলাদেশ পৃথীবীর সেরা ধনি রাস্টে পরিণত হইতে পারে আল্লাহ তা'আলার রহমতে। ওদের কোনো কৃতিত্ব নাই ওরা চুর চামার কৃতিত্ব আল্লাহ তা'আলার রহমতে আর জনগণের ত্যাগ। ওরা লুটেরা গুম খোন করে ক্ষমতার জন্য। ওদের দেশের প্রতি কোনো মায়া দয়া নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • jahid ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ৯:৫৬ পিএম says : 0
    এরা দেশ কে কখন ও ভাল বাসে না। এরা ভাল বাসে ক্ষমতা আর প্রধান চেয়ার তা কে। এরা যতবার ক্ষমতায় আসছে ততবার ভোটের অধিকার চুরি না ডাকাতি করেছে! এটাই সত্য।
    Total Reply(0) Reply
  • M Ariful Islam ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ৫:৩৫ পিএম says : 0
    আওয়ামীলীগ সরকার গনতন্ত্রের কথা সব সময় বললেও, তারা গনতন্ত্র কে হত্যা করে রাজতন্ত্র কায়েম করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আর এই জন্য বাংলাদেশের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। আমি দেশের একজন সাধারন নাগরিক হিসাবে পূর্ণরায় নির্বাচন চাই। যেখানে আমি আমার নিজের ভোট টা দিতে পারবো।
    Total Reply(0) Reply
  • Hm.Habib ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯, ৭:৪২ পিএম says : 0
    আমি এবং আমার বাংলাদেশের মানুষ আর কত দিন ভোট দিতে পারবো না।এর পর ও উপজেলা নিরবাচন নাকি নিরবাচন নামে আমাদের টাকা লুট করার জন্য ইসির পায় তারা।যেখানে ভোট দেওয়া হয় আগের দিন রাত্রে এই নিরবাচন চাই না।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ৪:৫২ পিএম says : 0
    All the Development happened due to hard work of Bangladeshis people---Bangladesh people wanted to built all the necessary product like car/aeroplane...but unfortunately the government always bar they ---we read so many things like thousands of Industry --they are waiting for gas/electricity connection---but they are not getting the connections as such they are in loss of thousands and thousand of crores of TK---Industry is like a heart of a body----without a heart --human cannot survives---Same things goes that without Heavy industry --we cannot survive----we must not buy any product from any country---we must manufacture all the vital things like china -----
    Total Reply(0) Reply
  • rafiqul islam ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ৭:০৪ পিএম says : 0
    ami 2008 a aumiliguuer bijjoy a khushi hoiay silam ami notun voter hoi 11shaallay ak ber o vot ditayy parini aj kotha bolaai joongi rajjakr shadhinota birodi
    Total Reply(0) Reply
  • সৈয়ব আহমেদ সিয়াম ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১০:৪৫ পিএম says : 0
    আমরা নিজেরাই অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছি। বিদেশীদের বিশ্লেষণ দিয়ে আর কী কাজ?
    Total Reply(0) Reply
  • Saidur Rahman ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ৫:৩৮ পিএম says : 0
    It's not a election it's absolutely steal of vote
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Safiul Alam ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:৩৬ পিএম says : 0
    What is happening inside the country is more more painful and pathetic than report but nothing changes. We need positive impact rather than reporting only.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ