পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে গতকাল (সোমবার) গাউছুল আজম কনফারেন্সে প্রধান অতিথি কাগতিয়ার পীর আল্লামা অধ্যক্ষ শায়খ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ আহমদী মাদ্দাজিলুহুল আলী বলেছেন, দুনিয়া এবং আখেরাতের মুক্তির জন্য ইসলামই একমাত্র পথ। আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি নৈতিক সমাজ বিনির্মাণে তিনি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ, এটি আমাদের বড় পরিচয়। আত্মপরিচয় ছাড়া কোন জাতি এগিয়ে যেতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের আত্মপরিচয় সঙ্কট নেই। মুসলমান হিসেবেই আমরা গর্বিত।
অরাজনৈতিক এবং আধ্যাত্মিক সংগঠন মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এ কনফারেন্সকে ঘিরে লালদীঘি ময়দান ও আশপাশের এলাকায় এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নির্ধারিত সময়ের আগে বেলা ১টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া এ মাহফিল চলে গভীর রাত অবধি।
কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাগতিয়া দরবারের পীর অধ্যক্ষ ছৈয়্যদ মুনির উল্লাহ আহমদী বলেন, পাপের সয়লাবে নিমজ্জিত ব্যক্তি হযরত গাউছুল আজমের সংস্পর্শে নূরে মোস্তফার আলোয় গভীর অনুতাপ অনুশোচনায় কাঁদতে কাঁদতে হয়ে উঠেন একজন খোদাভীরু বান্দা। ফরজের পাশাপাশি সুন্নাত ও নফল ইবাদতের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে ঠাঁই করে নেয় খোদা নবীর প্রেমের ঠিকানায়। আর এমনিভাবে শুরু হয় খোদা পাবার অভিষ্ঠ লক্ষ্যে চিরশুদ্ধ অভিযাত্রা। যেখানে নিহিত খোদায়ী শান্তি, বেহেশতি প্রাপ্তি, মুহাব্বতের তৃপ্তি। তিনি সবাইকে আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি সমাজে অন্যায়, অবিচার আর নৈতিক অবক্ষয়রোধে ভূমিকা রাখার উদাত্ত আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন আরও বলেন, এ উপমহাদেশে ৬০ কোটি মুসলমানের বসবাস। বাংলাদেশে মুসলমানের সংখ্যা ১৬ কোটি। বাংলাদেশ ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ। এটাই এদেশের বড় পরিচয় এবং অনন্য বৈশিষ্ট্য। মুসলমান হিসেবে এদেশের মানুষ গর্ববোধ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের আত্মপরিচয়ের সঙ্কট নেই। আর এ কারণেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য ইসলামী মূল্যবোধ ও নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে। প্রতিবেশী ভারতের মুসলমানদের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সেখানে শত বছর ধরে মুসলমানরা শাসন করেছে। কিন্তু এখন তারা সেখানে চরম দুঃসময় পার করছে।
নির্বাচনসহ দেশের সব উন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে যুবকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুবকরাই আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে। কাগতিয়া দরবার যুবকদের জন্যই কাজ করে যাচ্ছে। মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণরা নিজেদের পরিশুদ্ধ করার পাশাপাশি সমাজ গঠনেও অনন্য ভূমিকা রাখছে। কাগতিয়া পীরের শিক্ষামুখী কর্মকান্ডের প্রশংসা করে ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, তার সাফল্য এদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শিক্ষা থেকে শুরু করে দেশ পরিচালনায় নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, শিক্ষামন্ত্রীও নারী। মাদরাসায় লাখ লাখ মেয়েরা পড়ালেখা করছে। তারাই আগামী দিনে একজন সৎ, চরিত্রবান মা হিসেবে দেশকে এগিয়ে নেবে। আদর্শ নাগরিক গড়ে তুলতে নারী শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মহাসচিব ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যক্ষ আল্লামা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন তিন লাখ শিক্ষকের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এসব শিক্ষকরা মাদরাসা শিক্ষার মাধ্যমে আদর্শ নাগরিক তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। কাগতিয়া দরবারের সাথে জড়িতদের বেশিরভাগ তরুণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আত্মার পরিশুদ্ধির পাশাপাশি এ তরুণরা সমাজ উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে।
মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ এর উদ্যোগে আয়োজিত কনফারেন্সে বিশেষ অতিথি আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর একেএম ছায়েফ উল্ল্যা, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, চবি গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জালাল আহমদ, এলবিয়ন গ্রুপের প্রধান উপদেষ্টা¡ মো. নেজাম উদ্দীন, মদিনা গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজের চেয়ারম্যান আবু মোহাম্মদ।
এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ ইব্রাহীম হানফি, আল্লামা মুফতি আনোয়ারুল আলম ছিদ্দিকি, আল্লামা মোহাম্মদ আশেকুর রহমান, আল্লামা বদিউল আলম আহমদী, আল্লামা এমদাদুল হক মুনিরী, আল্লামা মুহাম্মদ সেকান্দর আলী ও আল্লামা মুহাম্মদ ফোরকান।
সকাল থেকেই চট্টগ্রামের আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, সীতাকুন্ড, বোয়ালখালী, আনোয়ারা পটিয়া ছাড়াও রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার-মহেষখালী থেকে দলে দলে গাড়িযোগে কাগতিয়া দরবারের অসংখ্য অনুসারী, ভক্ত ও সাধারণ মুসলমানেরা কনফারেন্সস্থল লালদীঘি ময়দানে আসতে থাকে। চট্টগ্রাম ছাড়াও ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর ও ঢাকা থেকেও কাগতিয়া দরবারের হাজার হাজার অনুসারী ও ধর্মপ্রাণ মানুষ উপস্থিত হন। কনফারেন্সে শরিক হতে বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সউদি আরব, ওমান, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, আবুধাবী, শারজাহ্ হতেও কাগতিয়া দরবারের শত শত অনুসারী সপ্তাহখানেক পূর্ব থেকে বাংলাদেশে আসেন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আলোকসজ্জিত করা হয় এবং চট্টগ্রামের প্রায় সকল প্রবেশমুখে ও বিভিন্ন উপজেলায় উত্তোলন করা হয় তোরণ। মাগরিবের আগেই লালদীঘি ময়দান ও এর আশপাশের এলাকা, সড়ক কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে জনসমুদ্রে রূপ নেয়।
মিলাদ ও কিয়াম শেষে প্রধান অতিথি দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি, অসহায় নির্যাতিত মুসলমানদের হেফাজত এবং দরবারের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ফুয়ুজাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।