Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রাম অঞ্চলে চাষে আগ্রহ বাড়ছে

দুই বিভাগে বোরো আবাদ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

চট্টগ্রাম অঞ্চলে শুরু হয়েছে বোরো আবাদ। পুরোদমে প্রস্তুত বীজতলা, জমি। চলছে রোপা লাগানো। গতকাল বুধবার পর্যন্ত এই অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৫৮ হাজার ১২১ হেক্টর জমিতে আবাদ শেষ হয়েছে। সর্বোচ্চ দুই লাখ ৪৬ হাজার ৫২৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা এবারও আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
এই অঞ্চলে এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবাদ এবং ফলনে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। বাজারে ধান চালের দামও ভাল। আর এই কারণে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে বোরো আবাদে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন আবহাওয়া পুরোপুরি অনুকূলে। উন্নতমানের বীজ ও সার সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে চলছে নিবিড় তদারকি। প্রান্তিক চাষীদের প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। এসব কারণে এবার বোরোর আবাদ রের্কড ছাড়াবে।
ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে ৪র্থ হলেও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ধান চাষ অন্য এলাকার তুলনায় কম। তবে কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে এই অঞ্চলেও ধানের চাষাবাদ বাড়ছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে ধান-চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় কৃষকদের মাঝে আবাদে আগ্রহ বাড়ছে। দিনে দিনে পতিত জমির পরিমাণ কমছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের তথ্য অনুযায়ী, এবার এ অঞ্চলের পাঁচ জেলায় দুই লাখ ৪৬ হাজার ৫২৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। আমন উঠে যাওয়ার আগেই তৈরি হয়েছে বীজতলা। পাঁচ জেলায় ১২ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে বোরোর বীজতলা প্রস্তুত করা হয়। গতকাল পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ২৪ শতাংশ জমিতে আবাদ শেষ হয়েছে।
চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলায় আমন ঘরে উঠে একটু দেরিতে। আর এ কারণে বোরোর আবাদও শুরু হয় দেরিতে। চট্টগ্রাম জেলায় এবার ৬৩ হাজার ৩২৪ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হচ্ছে। কক্সবাজার জেলায় ৫৬ হাজার ১৮৯, নোয়াখালীতে ৭০ হাজার ৫৩, ফেনীতে ২৯ হাজার ৫৪০ এবং লক্ষীপুরে ২৭ হাজার ৪১৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত নোয়াখালীতে ৪৮ হাজার ৮৭২, লক্ষীপুরে সাত হাজার ৪৫৮ এবং ফেনীতে এক হাজার ৩৫৫ হেক্টরে আবাদ শেষ হয়েছে। এ তিন জেলার জলাভূমিতে আমন চাষ হয় না। আর এ কারণে জলাভূমির পানি কমে আসতেই সেখানে বোরো চাষ শুরু হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলে মধ্য মার্চ মাস পর্যন্ত বোরোর আবাদ চলবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. আবুল হোসেন তালুকদার ইনকিলাবকে বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের আবহাওয়া বোরো চাষের অনুকূলে রয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। সার এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণও পর্যাপ্ত রয়েছে। ফলে গতবারের চেয়ে এবার বেশি জমিতে বোরো আবাদ হবে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে এবারের বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদী এবং খালে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। ডিপ টিউবওয়েলগুলো সচল রয়েছে। এ কারণে সেচেরও কোন সমস্যা হবে না। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রণোদনাও দেয়া হচ্ছে। তিনি আশাবাদী আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে আমনের মতো বোরোতেও এবার বাম্পার ফলন হবে।
প্রান্তিক চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে হাইব্রিড এবং উফশী জাতের বীজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সারেরও কোন সঙ্কট নেই। তবে গ্রামে কৃষি শ্রমিকের সঙ্কট রয়েছে। আবাদ বেড়ে যাওয়ায় কৃষি শ্রমিকের মজুরিও বেড়ে গেছে। রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিলের চাষি আবুল কালাম বলেন, বিলে আবাদ শুরু হয়ে গেছে। শীতের প্রকোপ বিশেষ করে কুয়াশা বেশি না হওয়ায় বীজতলার কোন ক্ষতি হয়নি। খাল, নালায় পর্যাপ্ত পানিও পাওয়া যাচ্ছে।
কয়েক বছর আগে লোনা পানির আগ্রাসনের কারণে কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী বোয়ালখালী, পটিয়া ও আনোয়ারায় বোরো আবাদ ব্যাহত হলেও এবার এমন সমস্যা নেই বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, এবারের বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় কাপ্তাই লেকে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ রয়েছে। ফলে কর্ণফুলী নদীতে লবণ পানির আগ্রাসনের কোন আশঙ্কা এখনও পর্যন্ত নেই।
এদিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ধান চাষ বাড়ছে। গেল আমন মওসুমে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ ৫৪ হাজার ৮১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। ফলন পাওয়া গেছে ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৪৭৫ মেট্রিক টন (চাল)। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে নয় শতাংশ বেশি। চট্টগ্রাম অঞ্চলে আউশ ধানের আবাদও বাড়ছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভ‚গর্ভস্থ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ কারণে অনেক জেলায় বোরো আবাদ ব্যাহত হচ্ছে।
আবার প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সরকার ওইসব এলাকায় বোরোর বদলে আউশ চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছে। তবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পানির সঙ্কট না থাকায় বোরো আবাদ বাড়ছে। একইসাথে সরকারি নানা প্রণোদনার কারণে আউশ আবাদেও কৃষকরা উৎসাহী হয়ে উঠছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ