Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিএসএফ ‘শ্লীলতাহানি’ করায় ছাত্রী আত্মঘাতী

প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হিলি সংবাদদাতা : তল্লাশির নামে বিএসএফের এক জওয়ান শ্লীলতাহানি করায় লজ্জা, অপমানে এক কিশোরী আত্মঘাতী হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন তার বাবা-মা। তারা দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি এলাকার পাঞ্জুল অঞ্চলের গোঁসাইপুর সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা। বছর বারোর ওই কিশোরীর মা জানিয়েছেন, শনিবার সে কাছেই লস্করপুরে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে গিয়েছিল। বেলা ১১টা নাগাদ আল রাস্তা ধরে সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। তখনই এক জওয়ান তার পথ আটকায়। তল্লাশির নামে তখনই তার শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। ওই ছাত্রীর মা’র কাছে খবর যায়। তিনি ছুটে গিয়ে মেয়েকে উদ্ধার করে আনেন। এরপর বাড়ি ফিরে ওই ছাত্রী ঘরে ঢুকে গলায় দড়ি দেয় বলে বাড়ির লোকের দাবি। শব্দ শুনে তৎক্ষণাৎ দরজা ভেঙে তাকে নামানো হয়। আত্মীয়রা জানান, তখনও দেহে প্রাণ ছিল। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় প্রথমে তাকে হিলি গ্রামীণ হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রেফার করা হয় বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে। রাত ১১টা নাগাদ বালুরঘাট হাসপাতালে ছাত্রীটি মারা যায়।
জেলা পুলিশ সুপার রসিদ মুনির খান জানান, তদন্ত শুরু হয়েছে। রবিবার সকালে বালুরঘাট থানার অধীন পতিরাম বিএসএফ সদর ক্যাম্প থেকে পদস্থ আধিকারিক এবং সীমান্ত রক্ষীদের গোয়েন্দা শাখার তিন সদস্যের একটি দল হিলি সীমান্তের সংশ্লিষ্ট চকগোপাল ফাঁড়িতে তদন্তে যান।
বিএসএসএফ কর্তৃপক্ষ অবশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ভিত্তিহীন। ওই কিশোরী একটি নতুন সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। সে সময় কর্তব্যরত জওয়ান ওই ছাত্রীর কাছে সাইকেল কেনার প্রমাণপত্র দেখতে চান। ছাত্রীটি তা দেখাতে পারেনি বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ছাত্রীটি লস্করপুরে ফিরে গিয়ে পুরনো সাইকেল নিয়ে ফেরে। সে সময় তার মা পাশেই জমিতে কাজ করছিলেন। তিনিই তখন পড়ে ফিরতে এত দেরি হল কেন, তা জানতে চেয়ে মেয়েকে চড় থাপ্পর মারেন। বিএসএফের দাবি, এরপরে ওই ছাত্রী যদি আত্মহত্যা করে, তা হলে সেই অপমানেই করেছে।
কিন্তু ছাত্রীর বাবা এ দিন সকালে হিলি থানায় ওই সীমান্ত চৌকির অধীন ৭ নম্বর গেটে ঘটনার সময় প্রহরারত জওয়ানের বিরুদ্ধে তাঁর মেয়েকে শ্লীলতাহানির অভিযোগই করেছেন। এ দিন দুপুরে গোঁসাইপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় থমথমে পরিবেশ। ওই ছাত্রীর বাড়িতে কান্নার রোল। তার মা-কে ঘিরে পড়শি মহিলাদের ভিড়। তাঁদের দুই সন্তানের মধ্যে ওই কিশোরীই বড়। তার মা জানান, বাড়ির উঠোনে ধান শুকোতে দেওয়ার সময় খবর পান মেয়েকে বিএসএফ আটকে রেখেছে। তিনি বলেন, ‘‘ছুটে গিয়ে দেখি খোলা মাঠের মধ্যে ওই জওয়ান মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে তল্লশি করছে। চিৎকার করে মেয়েকে টেনে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসি।’’ সে সময় পাড়ার অন্য মহিলারাও তাঁর সঙ্গে ছিলেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এরপরেই ঝোড়ো হাওয়া বইছে দেখে ধান তুলতে গিয়ে হঠাৎ ঘর থেকে শব্দ শুনতে পাই। দেখি দরজা বন্ধ। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশীদের ডাকি। দরজা ভেঙে দেখি মেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।’’ তখনই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।
এলাকার বাসিন্দা তথা পাঞ্জুল অঞ্চলের সিপিএমের প্রধান সন্ধ্যা মালি বলেন, ‘‘বিএসএফের কিছু জওয়ান স্থানীয় মহিলা-কিশোরীদের উত্ত্যক্ত করে বলে অনেক দিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনকে সে কথা জানিয়েছি। তার পরে কেন এমন হল, তা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।’’ জেলাশাসক তাপস চৌধুরী অবশ্য বলেন, ‘‘বিচ্ছিন্ন ভাবে এমন কোনও ঘটনা ঘটতে পারে, কিন্তু গ্রামে বিএসএফের জওয়ানেরা মহিলাদের উত্ত্যক্ত করছেন, এমন কোনও খবর নেই। তবু এ ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হবে।’’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ