Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শ্রমবাজারের টার্গেট পূরণ হয়নি

সাড়ে চার লাখ কর্মী কম গেছে ঋণের বোঝা, পালাচ্ছে স্বজনরা

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বর্হিবিশ্বে জনশক্তি রফতানিতে টার্গেট পূরণ হয়নি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে গত বছর প্রায় সাড়ে চার লাখ কর্মী কম গেছে বিদেশে। গত বছর ৭ লাখ ৩৩ হাজার ২শ’ ৫৩ জন কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থান লাভ করেছে। এর মধ্যে জানুয়ারী থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে মহিলা গৃহকর্মী গেছে ৯১ হাজার ৯শ’ ২১ জন। এসময়ে সউদী আরবেই গেছে ৬৬ হাজার ৯শ’ ৪৬ জন মহিলা গৃহকর্মী। নানা নির্যাতনের কারণে কিছু কিছু মহিলা গৃহকর্মী খালি হাতে দেশেও ফিরছে। সাবেক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি গত বছর (২০১৮ ) ১২ লাখ কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছিলেন। গত জানুয়ারী থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রবাসী কর্মীরা ১৪.২৯৪.৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছে।
বায়রার নেতৃবৃন্দ বলেছেন, জনশক্তি রফতানির দ্বিতীয় বৃহৎ বাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মী নিয়োগ দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় গতি বাড়ছে না শ্রমবাজারে। বন্ধকৃত শ্রমবাজারের দুয়ার না খোলা এবং মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে দশ সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা অব্যাহত থাকায় কর্মী নিয়োগ দিন দিন নিন্মমুখী হচ্ছে। জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি এবং রেমিটেন্স-এর প্রবাহ বাড়াতে হলে নতুন সরকারকে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর দায়িত্ব দিতে হবে বলেও বায়রার নেতৃবৃন্দ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
গত ১ ডিসেম্বর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৮ হাজার ২শ’৯১ জন কর্মী বিদেশে গেছে। এর আগের মাসে নভেম্বর মাসে বিদেশে গিয়েছে ৭০ হাজার ৩শ’ ৭৭ জন কর্মী। এসব কর্মীর প্রায় পুরোটাই বেসরকারী প্রক্রিয়ায় বিদেশে চাকুরি লাভ করেছে । ২০১৭ সালে বিভিন্ন দেশে ১০ লাখ ৮ হাজার ৫শ’ ২৫ জন বিদেশে চাকুরি লাভ করেছিল। বিএমইটি’র নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।
দশ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উচ্চ অভিবাসন ব্যয়ে ২০১৭ সনের ৮ মার্চ মাস থেকে গত ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ২ লাখ ৫১ হাজার ৫শ’ ১০ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় চাকুরি লাভ করেছে। মধ্যসত্বভোগি দালাল চক্রের হাত বদলের কারণে বিদেশ গমনেচ্ছুকর্মীদের উচ্চ অভিবাসন ব্যয়ের অর্থ যোগাতে নাভিশ্বাস উঠেছে। বিএমইটি থেকে বর্হিগমন ছাড়পত্র হাতে পেতেও এসব নিরীহ অভিবাসী কর্মীকে পদে পদে ঘুষ দিতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ইদানিং বিএমইটিতে চিহ্নিত দালাল চক্রের আনাগোনা বাড়ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সীর প্রতিনিধিরা এসব অভিযোগ তুলছেন।
বহু অভিবাসী কর্মী বিদেশে কাজের নিশ্চয়তা ও ন্যায্য মজুরি না পাওয়ায় ভিটে-মাটি বিক্রি ও ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হিমসিম খাচ্ছে। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেক অভিবাসী কর্মীর আত্মীয়-স্বজনরা বাড়ী-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। একাধিক অভিবাসী কর্মী উল্লেখিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছে।
বায়রার নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সচেতন বায়রা গণতান্ত্রিক ফোরামের সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলী গত বছর জনশক্তি রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, জনশক্তি রফতানির বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুয়ার না খোলায় এবং মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে দশ সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা অব্যাহত থাকায় শ্রমবাজারে গতি বাড়ছে না। জনশক্তি রফতানির গতি বৃদ্ধি এবং রেমিটেন্সের প্রবাহ বাড়াতে হলে নতুন সরকারকে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে প্রবাসী মন্ত্রীর দায়িত্ব দিতে হবে বলেও বায়রা নেতা মোহাম্মদ আলী অভিমত ব্যক্ত করেন।
বিদেশে শ্রম উইংগুলোর ব্যর্থতার দরুণ জনশক্তি রফতানিতে আশানুরুপ গতি বাড়ছে না বলেও বায়রার সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব আলহাজ আবুল বাশার দাবী করেছেন। রাতে তিনি বলেন, বৃহৎ শ্রমবাজার সউদী আরবে প্রবাসীদের ইকামার দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মীর ভিসার দাম মাত্র দু’লাখে নেমে এসেছে। আলহাজ আবুল বাশার বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার দশ সিন্ডিকেট দখল করে নেয়ায় জনশক্তিতে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এতে সিন্ডিকেট চক্র মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের কাছ থেকে জনপ্রতি তিন লাখ টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সী মালয়েশিয়ায় প্রতিযোগিতামূলক কর্মী পাঠানোর সুযোগ পেলে জনশক্তি রফতানিতে গতি বাড়তে বলেও আবুল বাশার দাবী করেন। নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে দূতাবাসগুলোকে সচল করতে হবে এবং শ্রমবাজার সম্প্রসারণে সরকারের সাথে বায়রাকে সর্ম্পৃক্ত করার ওপরগুরুত্বারোপ করেন বায়রার ঐ সাবেক নেতা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জনশক্তি

১৫ জানুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ