বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : জেলা শহরের ২নং বাবুরাইল এলাকায় প্রবাসী ভাড়াবাড়িতে টাকা পয়সা লেনদেন ও নারীঘটিত ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচজনকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে তাদের কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘ঘটনায় নিহত তাসলিমার স্বামী শফিকুল ইসলাম অজ্ঞাতদের আসামি করে থানায় একটি এজাহার করেছেন।’
নিহতদের মধ্যে একজন পুরুষ, দুইজন নারী এবং দুটি শিশু রয়েছে। নিহতরা হলেন : তাসলিমা (৩৫), তার ছেলে শান্ত (১০), মেয়ে সুমাইয়া (৫), তাসলিমার ছোটভাই মোরশেদুল (২২) ও তার জা লামিয়া (২৫)।
নিহত লামিয়ার স্বামী শরীফ রাতে স্বজনদের লাশ দেখে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমার সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে রাত সাড়ে ৯টায়। এরপর থেকে আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। কারা এ ঘটনা ঘটাতে পারে আমি এখনো নিশ্চিত নই।’
নিহত তাসলিমার মা মোর্শেদা বেগম জানান, ‘কেন অগরে মারলো আমি কইতে পারতাছিনা। তবে ওরা এক মাস আগে ঢাকার কিছু লোকের হুমকির কারণে নারায়ণগঞ্জে চলে আসে একেবারে।’
হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাসলিমা ঢাকার বাহাদুর, বাদশা, বাদলসহ প্রায় আট-দশ জনের কাছ থেকে সুদে বেশ কিছু টাকা আনে। এই টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিত বাহাদুররা। তারা টাকার জন্য তাসলিমার স্বামীকে (শফিকুল) দু’দিন পর পর আটকে রেখে নির্যাতন করত এবং টাকা চাইত। গত এক মাস আগে তাকে আটকে রেখে তাসলিমাসহ সকলের ঠিকানা জানতে চায় তারা।’
তিনি বলেন, ‘আমি এই লেনদেনের কথা জানতে পেরে গ্রামের দুটি জমি বিক্রি করে তাদের টাকা দেই। তবুও তারা কেন অগরে মারল বুঝতাছিনা।’
নিহত তাসলিমার মা মোর্শেদা আরও জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার চরবেলাবাড়ি এলাকায়। তিনি ঢাকার ধানমন্ডি ৭ নম্বরে খালার বাড়িতে থাকেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার ছেলে মোরশেদুলের সঙ্গে তার সবশেষ কথা হয়। এরপর থেকে সারাদিন মেয়ে তাসলিমা ও ছেলে মোরশেদুলের নম্বর বন্ধ ছিল।
শনিবার রাত ৭টার দিকে নিহত তাসলিমার দেবর শরীফ মিয়া কিশোরগঞ্জের পাহাটি এলাকা থেকে বেড়াতে এসে দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে মোরশেদুলের খালাতো ভাই দেলোয়ার হোসেনসহ অন্যদের ডেকে আনেন। তারা বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়াদের উপস্থিতিতে দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ৫টি লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।
মোর্শেদা বেগম জানান, ‘মোর্শেদুল আমাকে কয়েক দিন আগে ফোন করে বলেছিলেন যেন তার নানির কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে দেই। এই টাকা দিয়ে সে ব্যবসা করবে। পরে ফিরিয়ে দিবে। কিন্তু আমি তখন বুঝতে পেরেছিলাম যে তাদেরকে ঢাকা থেকে টাকার জন্য হুমকি দিচ্ছে, আর তাই জরুরি টাকার দরকার।’ বাড়ির মালিক আমেরিকা প্রবাসী ইসমাইলের চাচাতো ভাই হাজি মোহাম্মদ হোসেন জানান, গত নভেম্বর মাসে শফিক ও তার স্ত্রী তাসলিমা ২ রুমের ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে রাত ৮টার দিকে নিহতের স্বজনরা ঘরটির তালা ভেঙে পাঁচজনের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়।
পুলিশের ঢাকা জোনের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) মোহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিহতদের হত্যাকারীদের পেশাদার মনে হয়নি। বাচ্চাদের গায়েও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পারিবারিক নাকি অন্য ঘটনা তা আমরা খতিয়ে দেখছি। আশা করছি খুব শিগগিরই হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে পারব।’
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন জানান, ‘আমরা ধারণা করছি পারিবারিক বিরোধ নিয়েই এ হত্যাকাণ্ড ঘটনা ঘটেছে। যারা হত্যা করেছে তারা অপেশাদার খুনি বলেই আমাদের মনে হয়েছে এবং তারা পূর্ব পরিচিত ছিল। একই ফ্লোরে তিনজনের লাশ পড়ে ছিল, এটি পারিবারিক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।’ নারায়ণগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ শাহজালাল জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আনা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তের স্বার্থে এখন পরিষ্কার কিছু বলা যাচ্ছে না। রহস্য উদঘাটন হলে আপনাদের জানাব। সুরতহাল শেষে নারায়ণগঞ্জ সিআইডির এএসপি মো. এহসানউদ্দিন চৌধুরী জানান, ‘হত্যাকারীরা একাধিক ছিল, তবে তারা পেশাদার ছিল না বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। দুজন মহিলা ও ছেলের গলায় ফাঁস ছিল। আর মেয়ে শিশুর মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।
তিনি জানান, আমরা ঘরের তৈরি করা খাবার হালুয়া, রুটি তাজা পেয়েছি। তাতে ধারণা করা হচ্ছে হত্যাকাণ্ড ৬/৭ ঘণ্টা আগে ঘটানো হয়েছে। তবে সিআইডির ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পর সম্পূর্ণভাবে জানা যাবে। আমরা কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। আশা করি আসামিরা দ্রুতই গ্রেফতার হবে।
নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহরের ভিক্টোরিয়া ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।