Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মীরসরাইয়ে প্রার্থীদের জনসংযোগে ভোটের মাঠ জমজমাট, শক্ত অবস্থানে আ’লীগ, দিশেহারা বিএনপি

মীরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:৫৬ পিএম

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকী আর মাত্র ৪ দিন। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে মিছিল, মিটিং আর জনসংযোগে সংসদীয় আসন-২৭৮ (মীরসরাই), চট্টগ্রাম-১ নির্বাচনী আমেজে ভোটের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। জনসাধারণ তাদের কাঙ্ক্ষিত ভোট প্রদানের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচনী অঙ্গীকারের দিকে নজর রাখছেন। এদিকে ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সমর্থনে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আওয়ামীলীগ, অঙ্গ সংগঠন ও সহযোগী সংগঠনগুলো চালিয়ে যাচ্ছে অব্যাহত নির্বাচনী প্রচারণা। অপর দিকে, দলীয় কোন্দলে ঘরের অগ্নিদাহে প্রতীক বরাদ্দের পরও দিশেহারা বিএনপির মনোনীত ‘ধানের শীষ’ প্রার্থী নুরুল আমিন। এখন পর্যন্ত ‘ধানের শীষ’ প্রার্থী নুরুল আমিনকে গণসংযোগে দেখা যায়নি। এছাড়া বিএনপির পক্ষে সহযোগী কিংবা অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীবৃন্দদের গণসংযোগ, মিছিল, মিটিং কিংবা পোষ্টারিংয়েও এখন পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়নি। এদিকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ মীরসরাই উপজেলার সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ার প্রতীক নিয়ে এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন মাওলানা মুহম্মদ আবদুল মান্নান। তিনি ইতোমধ্যে মীরসরাই পৌরসভা, বারইয়ার পৌরসভা, মিঠাছড়া বাজার, জোরারগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গনসংযোগ করেছেন। চরমোনাই পীরের সমর্থন নিয়ে ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’ এর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে ‘হাত পাখা’ প্রতীক নিয়ে মাওলানা শামছুদ্দিনকে প্রচারণা ও জনসংযোগ করতে দেখা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, মীরসরাইয়ে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামীলীগের ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। জনগনের দৌরগোড়ায় নিজেই ভোট প্রার্থনা করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে। অপরদিকে বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং ইউনিয়নগুলোতে নৌকার মিছিল এবং গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী, অংগসংগঠন, সহযোগী এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষীয় প্রগতি সংগঠনগুলো। এদিকে মীরসরাইয়ের ১৬ টি ইউনিয়ন এবং পৌরসভাগুলোতে প্রতীকি নৌকা এবং পোষ্টারে ভোটের আমেজ দেখা গেলেও প্রধান প্রতিদ্বন্ধি হিসাবে পরিচিত বিএনপি’র তেমন কোথাও ‘ধানের শীষ’-এর পোষ্টার, ব্যানার ও মাইকিংয়ের দেখা মেলেনি। মীরসরাইয়ে রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া বিএনপি ভোটের রাজনীতিতে কতটুকু ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তা দেখার বিষয়! ঐক্যবদ্ধ আওয়ামীলীগ সুকৌশলে এগিয়ে আছে। সুশৃঙ্খল নির্বাচনী পরিকল্পনা এবং ওয়ার্ড ও কেন্দ্র পর্যায়ে ভিত্তিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় রাজনীতির মাঠ দখলে রেখেছে নৌকা’র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন -এর নেতাকর্মীরা। ভোটের মাঠ যেমন সরগরম, তেমনি ভোর থেকে নির্বাচনী চা’য়ের আমেজও বিরাজ করছে গ্রামীন চা-দোকানগুলোতে। সকাল হলেই গনসংযোগকারী নেতাকর্মীরা ক্লান্তির ফাঁকে চায়ের আমেজে নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষের প্রতীকের প্রচারণায় পূনরায় ব্যস্ত হয়ে পায়ে হেঁটে এলাকায় এলাকায় প্রচার অভিযানে ব্যস্ত। প্রতীক বরাদ্ধ পাওয়ার পর এখনো প্রকাশ্যে গনসংযোগে দেখা না যাওয়ার বিষয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নুরুল আমিন চেয়ারম্যান জানান, হামলা এবং পুলিশি গ্রেফতারের কারনে নেতাকর্মীরা বাধা পাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন আমার নেতাকর্মীরা গ্রেফতারের শিকার হচ্ছে তাই কেউ ভয়ে আমার পোষ্টার বা প্রচারনা করতে পারছেনা। প্রতিপক্ষের হামলা কিংবা বাধার সম্মূখীন হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকরা অভিযোগ না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে, এই প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান বার বার! আবার একই বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আমিন -এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, নেতা-কর্মীদের সমন্বয় করার সকল দায়দায়িত্ব প্রার্থীর (নুরুল আমিন চেয়ারম্যান) কাছে। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা বিএনপিধানের শীষ’ প্রার্থীর পক্ষে কোন কর্মসূচী কিংবা প্রচার-প্রচারনার বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেননি? এ বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি নুরুল আমিন কোন প্রকার মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বিএনপি’র বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতাকর্মী জানান নুরুল আমিন চেয়ারম্যান ‘ধানের শীষ’ -এর কোন পোষ্টার বা প্রচারনা ইচ্ছে করেই করছেন না। যার কারনও রহস্যজনক বলেও মনে করছেন নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এবারের নির্বাচনে মীরসরাই থেকে মোট ছয় (৬) জন প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী থাকলেও সর্বসাধারনের মতে মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং বিএনপি প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন এর মধ্যে। অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে গণফোরাম থেকে নূর উদ্দীন ‘ উদীয়মান সূর্য প্রতীক’ নিয়ে, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ থেকে আব্দুল মান্নান ‘চেয়ার প্রতীক’ নিয়ে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মাওলানা শামছুদ্দিন ‘হাতপাখা প্রতীক’ নিয়ে এবং বাংলাদেশ মুসলীম লীগ থেকে শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী ‘হাত পাঞ্জা’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করছেন। নির্বাচন বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ আতাউর রহমান বলেন, আমরা সকল দলের অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন চাই। বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণায় বাধা পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কোন ভাবেই কোন দলের প্রচার প্রচারনায় বাধা দেয়া হচ্ছেনা। আমাদের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার বিজয়ে কাজ করছেন। আমরা চাই বিএনপি সহ সকল প্রার্থীর অংশগ্রহনেই জনগন নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবে। তিনি আরো বলেন, অন্য প্রার্থীরা যেখানে মাঠে প্রচারনা ও গণসংযোগে ব্যস্ত সেখানে বিএনপি নিজেরাই প্রচারনা না করলে এর দায়দায়িত্ব তাদের অভ্যন্তরীন।
এই বিষয়ে গৃহায়ন ও গনপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপির এই নীরবতা সত্যিই রহস্যজনক। ওরা ঘাপটি মেরে কোন নাশকতামূলক উদ্যোগ নিতে পারে। প্রার্থী মোশাররফ, নেতাকর্মীদের সজাগ থেকে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে অবাধ সুষ্ঠ ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন হয় সে বিষয়ে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান তিনি। মীরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির এবং জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখার ভূঁইয়া ভিন্ন ভিন্ন ভাবে জানান, বিএনপির ঢালাও অভিযোগে বিষয়টি সত্য নয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ারাভুক্ত বা সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হচ্ছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ