পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অবশেষে বহুল প্রত্যাশিত সেনাবাহিনী নির্বাচনের দায়িত্ব পালনে আজ মাঠে নামছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশের ২৯৯টি সংসদীয় এলাকায় ‘ইনস্ট্রাকশন রিগার্ডিং ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ অনুযায়ী সেনাবাহিনী কাজ করবে। আজ থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১০ দিন মাঠে থাকবে ৫০ হাজারের অধিক সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি করা এক পরিপত্রে সশস্ত্রবাহিনীর এই কর্মপরিধি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করবে। ভোটের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনে তারা অপরাধীদের গ্রেফতারও করতে পারবে। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার গতকাল সিলেটে বলেছেন, ‘নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। সোমবার থেকে মাঠে নামবে সেনাবাহিনী’। খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে নির্বাচন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাগড়াছড়ির সিন্দুকছড়ি সেনা জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল রুবায়েত মাহমুদ হাসিব বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠে থাকবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নির্বাচনে দুষ্কৃতিকারীদের কোনো প্রকার সুযোগ দেয়া হবে না ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ প্রশাসনের ওপর মানুষের আস্থাহীনতার কারণে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি ওঠে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনে সেনাবাহিনীকে দিয়ে নির্বাচন করার দাবি জানান। বুদ্ধিজীবী সুশীল সমাজ, পেশাজীবী সর্বমহল থেকে দাবি তোলা হয় সেনা মোতায়েনের। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা করে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর পুলিশি গ্রেফতার, ধরপাকড় এবং ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের ওপর শুরু হয় হামলা-জুলুম-নির্যাতন। পুলিশের পক্ষপাতিত্ব আচরণের কারণে ধানের শীষের পোস্টার লাগানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশের নির্বাচনে এক দলীয় প্রচারণায় দেশ বিদেশে বিতর্কের ঝড় ওঠে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল একাদশ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য হয়ে বিশ্বের দেশে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অভাবনীয় সাফল্য দেখানো সেনাবাহিনীকে দেশে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য মাঠে নামানো হলো।
সেনাবাহিনীর সদস্যরা ‘ইনস্ট্রাকশন রিগার্ডিং ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ অনুযায়ী কাজ করবেন। মূলত তারা জেলা, উপজেলা ও মহানগর এলাকার সংযোগ স্থলে অবস্থান করবেন, প্রয়োজন অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টহল ও অন্যান্য আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা সহায়তা চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবেন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজন অনুসারে উপজেলা থানায় সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিজাইডিং কর্মকর্তার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনা কক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে সশস্ত্রবাহিনী। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনে ইসির কাজে যাবতীয় সহায়তা দেবে সশস্ত্রবাহিনী। প্রয়োজনে পরিস্থিতি বিবেচনা বা নির্দেশক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এই বাহিনী।
ইনকিলাবের প্রতিনিধিরা জানান, সেনাবাহিনীর সদস্যরা গতকাল বিকেল থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে পৌঁছাতে শুরু করে। নির্বাচনের ছয়দিন আগে সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েনে ইসির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সেনা মোতায়েনকে স্বাগত জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের আহŸায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সশস্ত্রবাহিনী অবশ্যই সকল দলের জন্য নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে। সেই সঙ্গে তারা ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে।
সেনাবাহিনীকে মাঠে নামতে দেখে মানুষের মধ্যে ভীতি-আতঙ্ক কাটতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় শক্তি ১৬ কোটি মানুষের আস্থা, ভালোবাসা ও বিশ্বাস। তাদের হাতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব যেমন নিরাপদ। তাদের হাতে দেশের মানুষের ভোটাধিকারও তেমনি নিরাপদ।
নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে গত ১৯ ডিসেম্বর বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সোমবার থেকে সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। ১ জানুয়ারি পর্যন্ত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী। এ ছাড়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশে বিজিবি সদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছে। এক হাজার ১৬ প্লাটুন বিজিবি এখন মাঠে কাজ করছে।
গতকাল আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সোমবার সকাল থেকে দায়িত্ব পালনে নামছে সশস্ত্রবাহিনী। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী দেশের ৩৮৯ উপজেলায় এবং নৌ-বাহিনী ১৮ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, সেনাবাহিনী নিয়োগের ফলে নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টি হবে, যা এতদিন মোটেও বিদ্যমান ছিল না।
নির্বাচনে সেনাবাহিনী শুধু টহল দিলেই চলবে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্ট্রি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খান বলেন, দেশবাসী একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। সেনাবাহিনী মাঠে নামালে বর্তমান লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না পাওয়ার যে অভিযোগ বিরোধীপক্ষ করছে, সেই অবস্থার উন্নতি হবে কি না জানতে চাইলে ফেমা সভাপতি বলেন, আমি মনে করছি উন্নতি হবে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু হবে এবং পরিবর্তন আসবে।
বাসাবোর মুদির দোকানি মোহাম্মদ আলী বলেন, সেনাবাহিনী মাঠে নামলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে। তাদের সামনে কোনো ঝামেল হোকÑ এটা তারা মেনে নেবেন না। কারণ, বিশ্বে তাদের একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। তারা সেটা নষ্ট করতে চাইবে না। মালিবাগে লিংকন নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, পাঁচ বছর পরপর একটা জাতীয় নির্বাচন আসে। সবাই চায় তাদের পছন্দের দলের প্রার্থীকে ভোট দেবে। ইদানীং ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেয়। সেনাবাহিনী থাকলে সে পরিস্থিতি হবে না। সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে। সেনাবাহিনী অবশ্যই মানুষের সেই আশা পূরণ করবে।
প্রবাসী জহির উদ্দেন বলেন, একটা জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে, অথচ কোথাও কোনো নির্বাচনী আমেজ নেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে এসেছি। কিন্তু কোথাও বিরোধী দলের প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, প্রচারণা নেই। এ কেমন নির্বাচন হচ্ছে? আমার এলাকা কিশোরগঞ্জ খোঁজ নিয়েছি। একই অবস্থা সেখানেও। পোস্টার লাগানো মাত্র ছিঁড়ে ফেলে দেয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনী মাঠে নামলে বিরোধীদলীয় প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালানোর পরিবেশ ফিরে পাবে এবং রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকগণ তাদের অধিকার ফিরে পাবে। মতিঝিলের ব্যবসায়ী সৈয়দ মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের আস্থা কুড়িয়েছে। এই সেনাবাহিনী মাঠে নামলে পরিস্থিতি বদলাবে। মানুষের নিরাপত্তার কোনো অভাব হবে না। সাধারণ মানুষ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত জারি করা পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তা সহায়তা চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবেন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজন অনুসারে উপজেলা থানায় সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিজাইডিং কর্মকর্তার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনাকক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে সশস্ত্রবাহিনী। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনে ইসির কাজে যাবতীয় সহায়তা দেবে সশস্ত্রবাহিনী। প্রয়োজনে পরিস্থিতি বিবেচনা বা নির্দেশক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এই বাহিনী।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, ঝুঁকির বিবেচনায় প্রতিটি জেলায় নিয়োজিত সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যের সংখ্যা রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে কম-বেশি করা যাবে। সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের বিবেচনায় প্রতিটি স্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনাসদস্য সংরক্ষিত হিসেবে মোতায়েন থাকবেন। বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান জননিরাপত্তা বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও বাহিনীগুলোর অনুরোধে উড্ডয়নে সহায়তা করবে।
পরিপত্রে আরো বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭ থেকে ১৩২ ধারা অনুযায়ী কাজ করবে সশস্ত্রবাহিনী। অবৈধ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে সশস্ত্রবাহিনীকে ডাকা হলে এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো উপায়ে বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করা না গেলে ঘটনাস্থলে থাকা সর্বোচ্চ পদের ম্যাজিস্ট্রেট সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ ও গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারবেন। জরুরি পরিস্থিতিতে যদি কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে কমিশন্ড অফিসার সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ এবং গ্রেফতার করার নির্দেশ দিতে পারবেন। সামরিক শক্তি প্রয়োগের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে লিখিত নির্দেশ দেয়ার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও মৌখিক নির্দেশ দেয়ার পর যত দ্রæত সম্ভব তা লিখিত আকারে দেবেন। বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান জননিরাপত্তা বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও বাহিনীগুলোর অনুরোধে উড্ডয়নে সহায়তা করবে।
এর আগে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫ দিন মাঠে ছিল সেনাবাহিনী। তারা সাধারণ এলাকায় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্রোপলিটন এলাকায় একজন কমিশনারের অধীনে দায়িত্ব পালন করে। ওই নির্বাচনে সারাদেশে প্রায় ৫০ হাজার সেনাসদস্য দায়িত্ব পালন করেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি জেলায় একটি ব্যাটালিয়ন (৭৪০ সদস্য) ও প্রতিটি উপজেলায় এক প্লাটুন (৩৫ জন) সেনাসদস্য দায়িত্ব পালন করেন।
ইভিএম পরিচালনায় থাকবে সাড়ে তিন হাজার সেনা : এদিকে আসন্ন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হতে যাওয়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পরিচালনার জন্য প্রায় তিন হাজার ৩০০ সেনা সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের কারিগরি সহায়তার জন্য থাকবে মোট দুই হাজার ৫৩৫ জন সেনা সদস্য। আর প্রতি কেন্দ্রের জন্য গঠিত একেকটি টিমে থাকবে সশস্ত্রবাহিনীর তিন জন করে সদস্য। এদের মধ্যে একজন কর্পোরাল, দু’জন ল্যান্স কর্পোরাল অথবা সৈনিক সেনা সদস্য। তাদের কাছ থেকে তথ্য নেবে ভ্রাম্যমাণ কারিগরি টিম। এই টিমে থাকবেন মোট ৫০৭ জন সেনা সদস্য। প্রতি পাঁচ কেন্দ্রের জন্য গঠিত প্রতি টিমে থাকবেন তিন জন করে সেনা সদস্য। এদের মধ্যে একজন সার্জেন্ট, দুইজন কর্পোরাল অথবা ল্যান্স কর্পোরাল বা সৈনিক সেনা সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
ভ্রাম্যমাণ টিমের কাছ থেকে তথ্য নেবে ভ্রাম্যমাণ তদারকি টিম। প্রতি ১৫টি কেন্দ্রের জন্য একটি টিম থাকবে। এক্ষেত্রে মোট ১৬৯ জন সেনা সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন একজন জেসিও, দু’জন সার্জেন্ট অথবা ল্যান্স কর্পোরাল বা সমমর্যাদার সেনা সদস্য। এদের ওপরে কাজ করবে প্রতি ৫০ কেন্দ্রের জন্য গঠিত একটি করে মোট ১৭টি টিম। আর প্রতি টিমে তিন জন করে মোট ৫১ জন সেনা সদস্য কাজ করবেন। এদের মধ্যে রয়েছেন একজন মেজর অথবা ক্যাপ্টেন অথবা ল্যাফটেন্যান্ট, একজন জেসিও এবং কর্পোরাল অথবা ল্যান্স কর্পোরাল অথবা সৈনিক সমমর্যাদার সেনা সদস্য। এই টিম সহকারী রিটার্নিং অফিসার বা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা কার্যালয়ে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। আর সবগুলো টিমের কাজ তত্ত¡াবধায়ন করবে উচ্চপর্যায়ের আরেক টিম। প্রতি আসনে পাঁচজন করে সেনা সদস্য নিয়ে এই টিম গঠিত হবে। অর্থাৎ মোট ছয়টি আসনে ৩০ জন সেনা সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এতে একজন মেজর, দু’জন ক্যাপ্টেন অথবা ল্যাফটেন্যান্ট, একজন জেসিও অথবা সার্জেন্ট এবং একজন কর্পোরাল অথবা ল্যান্স কর্পোরাল অথবা সৈনিক সমমর্যদার সদস্য। এই টিম রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। ইভিএম পরিচালনা করা হবে দু’টি কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে। যার একটি থাকবে নির্বাচন কমিশনে, আর একটি থাকবে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে। সেনা সদস্যরা কাজ করবে সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের কন্ট্রোল রুমের অধীনে। আর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কন্ট্রোল রুম কাজ করবে নির্বাচন কমিশনের কন্ট্রোল রুমের অধীনে। কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন কমিশন তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উচ্চপর্যায়ের একটি কারিগরি টিমের মাধ্যমে পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এ বিষয়ে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, যে ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে, সেখানে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেয়ার জন্য সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। তবে বাহিনীর পোশাকে থাকবেন, কিন্তু কোনো ধরনেরই অস্ত্র-গোলাবারুদ বহন করবে না। ইভিএম কেন্দ্রে যেসব সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য থাকবেন, তাদের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর নিকটতম টহল দল ও স্থানীয় ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। পরিপত্রে আরো বলা হয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে একটি কেন্দ্রীয় কো-অর্ডিনেশন সেল থাকবে। সেলের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অনুরূপ জয়েন্ট কো-অর্ডিনেশন সেল স্থাপন করা হবে। কেন্দ্রীয় সেলে রাখা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি ও সশস্ত্রবাহিনীর প্রতিনিধি থাকবেন।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, সেনাবাহিনী মোতায়েনের পরই নির্বাচনী পরিবেশ বদলে যাবে। মানুষের ভেতর যে শঙ্কা বিদ্যমান তা কেটে যাবে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। ভোট নিয়ে শঙ্কা থাকবে না, স্থাপন হবে আস্থা বিশ্বাস ।
যশোর ব্যুরো জানায় : যশোর ও খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার ৩৬টি আসন এলাকায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনের যাবতীয় কর্মকাÐ শুরু হয়েছে। গতকাল কোথায় ক্যাম্প হবে তার স্থান নির্ধারণে তাদের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। আজ থেকে তাদের মুভমেন্ট শুরু হবে। জনসাধারণ অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর দিকে। যশোর সদর আসনের ধানের শীষের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত জানান, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর মুভমেন্ট শুরু হলেই এখনকার নির্বাচনী সার্বিক পরিবেশ বা বর্তমান চিত্র পুরাপুরি পাল্টে যাবে। আমাদের নেতাকর্মী ও ভোটাররা অতিমাত্রায় সাহসী হয়ে উঠবেন।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ থেকে সেনাবাহিনী মাঠে নামার আশায় রয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা। সেনাবাহিনী মাঠে নামলে দৃশ্যপট পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করছেন মহাজোট বিরোধী প্রার্থীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক প্রার্থীই জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী মাঠে নামার আগেই মহাজোটের কর্মীরা ঐক্যফ্রন্টের কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে ঘরে তুলে দেয়ার পাশাপাশি মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছে। অপর দিকে, পুলিশ বিভাগ থেকে নির্বাচনী প্রচার কাজে নিয়োজিতদের গ্রেফতারি অভিযানে গোটা দক্ষিণাঞ্চল বিরোধী দলের নেতাকর্মী শূন্য করে ফেলেছে। এতে করে নির্বাচনের কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে আর অবশিষ্ট নেই বলে অভিযোগ ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের।
ফলে বিরোধী জোটের প্রার্থীরা শেষ আস্থার স্থল হিসেবে সেনাবাহিনীর মাঠে নামার প্রতিক্ষায়। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি জেলা ও বিভিন্ন উপজেলাতে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনসহ তাদের অবস্থানের সব ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। আজ থেকে সেনাবাহিনী টহল শুরু করলে পরিস্থিতি নির্বাচনের অনুক‚লে যাবার আশা করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলও।
নোয়াখালী ব্যুরো জানায় : একাদশ জাতীয সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক রাখতে নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলায় সেনাবাহিনীর আসা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে নোয়াখালী-১ চাটখিল ও নোয়াখালী-৫ আসনে সেনাবাহিনী পৌঁছেছে। গত রাতের মধ্যে অবশিষ্ট আসনসমূহে সেনাবাহিনী পৌঁছে যাবে।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক ইতোমধ্যে গতকাল বগুড়ার ফুলতলা এলাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠান নেকটার এবং চারমাথা এলাকায় যুব উন্নয়ন কমপ্লেক্স ক্যাম্পাসে স্থাপিত হয়েছে সেনাবাহিনীর বেইজ ক্যাম্প। এ ছাড়াও বগুড়ার সব উপজেলাতেই ক্যাম্প করে সেখানে অবস্থান নিয়েছে সেনা সদস্যরা। বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ডিসি ফয়েজ আহম্মেদ বলেন, আজ থেকে সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু হবে।
জানা গেছে, নাটোরের চারটি আসনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে সেনা সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন শুরু করবেন। রোববার দুপুরে বগুড়ার মাটির ঢালী সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল নাটোরে এসে পৌঁছায়। এ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন অধিনায়ক লে. কর্নেল মোস্তফা আরিফ।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহরিয়াজ বলেন, ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবেন। দুপুরে বগুড়ার মাটির ঢালী সেনানিবাস থেকে ১৭ প্যারা ব্যাটালিয়নের একটি পদাতিক দল নাটোরে এসে পৌঁছায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।