বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ঢাকা-১১ আসনের রাজপথ থেকে অলি-গলি সবখানেই ধানের শীষ আর নৌকার প্রচার চলছে সমান তালে। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রথম দিকে নৌকার একচেটিয়া প্রচারণা থাকলেও বর্তমানে ধানের শীষের প্রচারণাও চলছে সমান পাল্লা দিয়ে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, দিনের বেলা প্রচার কাজ শেষ করে রাতে বাসায় গিয়ে ঘুমানো সুযোগ পাচ্ছে না তারা। কারণ দিনের বেলায় যখন গণসংযোগের কাজ করে তার, তখন তাদের সেই গণসংযোগের ছবি তুলে ও ভিডিও করে রাখা হয়। সেই ছবি ও ভিডিও দেখে পুলিশ রাতের বেলায় বাসায় বাসায় গিয়ে তল্লাশী চালাচ্ছে ও ধানের শীষের নেতা কর্মীদের তুলে নেয়া হচ্ছে। সেই ভয়ে তারা এখন প্রকাশ্যে গণসংযোগ করতে ভায় পাচ্ছেন বলে জানান।
এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ নৌকা আর বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এমএ কাইয়ুমের স্ত্রী শামীম আরা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এম এ কাইয়ুম বিদেশে অবস্থান করার করণে নিবার্চন করতে না পারায় তার স্ত্রী শামীম আরাই নিবার্চনের মাঠে নেমেছেন। ফলে বড় দুই দলের মহানগরের শীর্ষ নেতার লড়াই হিসেবে মনে করছেন এই এলাকার ভোটারেরা। বর্তমানে এ আসনের বড় দুই দলের এই দুই প্রার্থী গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণায় চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-১১ নির্বাচনী এলাকার মধ্য-বাড্ডায় প্রিন্স শপিংমলের সামনে বিএনপির প্রার্থীর ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে। একই স্থানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ব্যানারও সাঁটানো থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া গত তিনদিন মহিলা দলের ২০০-২৫০জন নেতাকর্মী নিয়ে শামীম আরা রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, খিলগাঁও, তালতলা মার্কেট এলাক, হাজিপাড়া, চৌধীরপাড়র, বেরাইদ, ভাটারা, সাঁতারকুল ও শিমুলতলা মোড়সহ আশপাশে গণসংযোগ চালিয়েছেন। এ সময় বিভিন্ন বাসা বাড়ি, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তার পাশের দোকানে ও ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের কাছে গিয়ে ভোট ও দোয়া চাইছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা কিভাবে ধানের শীষের গণসংযোগ করবো? দিনের বেলায় গণসংযোগ করে রাতে বাসায় গিয়ে পুলিশের ভয়ে একটু ঘুমাতেও পারি না। আপনি আমার নাম দিয়ে নিউজ করবেন, পরে পুলিশ পত্রিকা থেকে সে নাম সংগ্রহ করে আমাকে খুঁজে বেড়াবে। তার চেয়ে এই ভাল, আমার নিউজেরও দরকার নাই পুলিশের দৌড়ানি খাওয়ারও দরকার নাই।
ভাটারা এলাকার স্থানিয় বাসিন্দা আবুল হায়রত বলেন, এই এলাকাতে বিএনপি-আওয়ামী লীগ দু’দলের প্রার্থী জোরেশোরে নিবার্চনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিন্তু পোস্টার শুধু নৌকার দেখা যায়, ধানের শীষ নেই। ধানের শীষের পোস্টার লাগাতে লোকজন দেখাও যায় না। এরপরও সাধারণ ভোটার হিসেবে আমার মতো অনেকেরই চাওয়া এবারের নিবার্চন যেন সুষ্ঠু হয়। বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতার জয়ে নিবার্চনী আমেজ নষ্ট হয়ে যায়। ভোট দেয়া নিয়ে ভোটারদের ৫ বছর অসন্তোষ রয়ে যায়।
গতকাল দুপুরে ঢাকা-১১ আসনের খিলগাও তালতলা মার্কেটের সামনে ধানের শীষের প্রার্থী শামীম আরা প্রায় ২৫০ নেতা-কর্মী নিয়ে নির্বাচনী গণসংযোগে নেমেছিলন। এই সময় তিনি বলেন, পুলিশি হয়রানী আর সরকারদলীয়দের এতো হামলা, মামলার পরও এই এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে জোয়ার উঠেছে। আমাকে এই এলাকার ভোটারেরা নিরলস সহযোগীতা করে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, যদি ভোট দেয়ার সামান্যতম সুযোগও তারা পান তাহলে বিপুল ভোটে তারা ধানের শীষকে জয়জুক্ত করবেন। তিনি বলেন, আমি ভোটারদের এই অক্লন্ত সহযোগীতার জন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
এই এবারে প্রথম ভোট দিবেন শিক্ষার্থী জিয়াউল ইসলাম। জানতে জাইলে এই শিক্ষার্থী বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শামীম আরাকে বাড্ডা এলাকা ও ফেসবুকে বেশি প্রচারণা করতে দেখা গেছে। এই শিক্ষার্থীসহ সাধারণ ভোটারদের চাওয়া, প্রার্থীরা প্রত্যেক এলাকার গিয়ে বাড়ি বাড়ি ভোট প্রার্থনা করুক। তবেই না নিবার্চনী খেলা জমবে।
জানা গেছে, ঢাকা-১১ আসন রামপুরা, বাড্ডা, হাতিরঝিল ও ভাটারা থানা নিয়ে গঠিত। ৯০-এর পরবর্তী নিবার্চনগুলোতে সংসদীয় এ আসনটি হাতবদল হয়েছে এ দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে ধানের শীষের প্রার্থী জয় লাভ করে। অন্যদিকে ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৮ সাল থেকে একেএম রহমতুল্লাহ নিবাির্চত হয়েছিলেন। এছাড়া ২০১৪ সালে বিএনপি জাতীয় নিবার্চন বর্জন করায় বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নিবাির্চত হন তিনি। কিন্তু এবারের নিবার্চনে তার প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতির (বতর্মানে মালয়েশিয়ায় অবস্থারত) স্ত্রী শামীমা আরা বেগম। তিনি নিবার্চনী এই আসনটি কাইয়ুমের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে পুনরুদ্ধারে নেতা-কর্মীদের নিয়ে রাত দিন গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ধানের শীষের প্রচার না থাকলেও নৌকার প্রচরণা ছিল উৎসবমুখর। নৌকার প্রার্থী প্রচারণায় এগিয়ে থাকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন বলেন, একেএম রহমতুল্লাহ একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৭৬ সালে বেরাইদ ইউনিয়নের নিবাির্চত চেয়ারম্যান ছিলেন। এরপর ১৯৮১ সালে গুলশান পৌরসভার চেয়ারম্যান, ১৯৮৬ সালে ঢাকা-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিবাির্চত হন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। বতর্মানেও তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে রাজনীতিতে একেবারেই নতুন মুখ বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এমএ কাইয়ুমের স্ত্রী শামীম আরার থেকে রহমতউল্লাহ জনগণের কাছে বেশি এগিয়ে আছেন।
এ আসনে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থী ছাড়াও জাতীয় পার্টির এসএম ফয়সাল চিশতী (লাঙ্গল), গণফোরামের মোজাম্মেল হক বীরপ্রতীক (উদীয়মান সূর্য), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন (কাঁঠাল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিনুল ইসলাম (হাতপাখা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মিজানুর রহমান (আম), বাংলাদেশ মুসলিম লীগের শরীফ মিরাজ হুসেইন (হারিকেন) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২১, ২২, ২৩, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ও ৪২ ওয়ার্ডসহ মোট ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-১১ আসনটিতে মোট ভোটারের সংখ্যা ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫৫৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ৭৩ ও নারী ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৩ হাজার ৪৮২ জন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।