একাদশ নির্বাচনে ভোটের মাঠে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, (নাচোল-গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট) আসনটি ফিরে পেতে মরিয়া বিএনপি। অন্যদিকে প্রার্থী মনোনয়নে হেরফেরের কারণে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর মাঝে গা ছাড়া ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই আসনের আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মুহা. গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত থাকলেও প্রায় শেষ মুহূর্তে এসে এক রকম আকস্মিক ভাবে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি মু. জিয়াউর রহমানকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি প্রদান করা হয়। এর প্রতিবাদে বর্তমান এমপি মুহা. গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসের অনুসারী নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে ও ঝাড়– মিছিল, মানববন্ধন এবং অবস্থান কর্মসূচী পালনের পাশপাশি দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তনের জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ জানান। শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়নের নৌকা প্রতীকের চিঠি মু. জিয়াউর রহমানের নামেই নির্বাচন কমিশনে পাঠায় আওয়ামী লীগ। সেই থেকে নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের অনেক নবীণ প্রবীণ নেতাকর্মীর মাঝে গা ছাড়া ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে । নৌকা প্রতীক পেয়ে মু. জিয়াউর রহমান মাঠঘাঁট দাপিয়ে বেড়ালেও মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান এমপি মুহা. গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসের অনুসারীদের একটি বড় অংশকে কাছে টানতে মনোযোগ দেননি তিনি। অপর দিকে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপির দলীয় মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বাণিজ্য ও শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। তিনি নেতাকর্মী নিয়ে নির্ঘুম এলাকা চষে বেড়িয়ে যাচ্ছেন ভোটারদের দরজায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে দেশের ব্যাপক উন্নয়নই ভরসা স্থানীয় আওয়ামী লীগে। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে আমিনুল ইসলামের প্রতিপক্ষ গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বাইরুল ইসলাম নিজ অনুসারীদের নিয়ে প্রথম দিকে নির্বাচনী মাঠে বিরোধীতা করলেও এখন নির্বাচনী মাঠে ধানের শীষের প্রার্থীর জয়ের জন্যে সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করছে বলে সংগঠনটির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাইরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সমঝোতার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন। বিএনপি-জামায়াতের প্রত্যাশা আওয়ামী লীগ সরকারের দু:শাসন, মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ ও ঘরে বাইরে জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেতেই ঐক্যফ্রন্টের প্রতীক ধানের শীষে ভোট দিতে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের নির্বাচনী মাঠে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর বেশ বড় ধরণের প্রভাব রয়েছে বলে ভোটারদের ভাবনায় উঠে আসছে। অপর দিকে মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান এমপি মুহা. গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসের অনুসারী বেশ কিছু নেতাকর্মীকে নির্বাচনী মাঠে নামাতে পারেন নি মু. জিয়াউর রহমান। এ অবস্থা কাটিয়ে তুলে নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় নেতাকর্মীদের মাঝে চাঙ্গাভাব ফেরাতে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে মু. জিয়াউর রহমানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন নিজ দলের অনেকেই। এ জন্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী মু. জিয়াউর রহমানের আশেপাশে বিচরণ করা কিছু অদূরদর্শী ব্যক্তিকেই দায়ী করছেন প্রবীণ রাজনীতিকরা। অপরদিকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বেশকিছু নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে জানাগেছে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সামান্য কিছু মতপার্থক্য থাকলেও সরকারের দুঃশাসন, হামলা-মামলা এবং পুলিশ বাহিনীর গ্রেফতার বাণিজ্য ও গায়েবী মামলা থেকে মুক্তি পেতে এবং দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কারাবন্দী নেতাকর্মীদের মুক্ত করতে সরকার পরিবর্তনের বিকল্প নেই। কাজেই ৫ বার বিএনপির দখলে থাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২,আসনটি ফিরে পেতে এবং সারাদেশে ধানের শীষ প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করতে সকল ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে কাজ করে যাচ্ছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা।